হুমায়ুন কবির সুমন, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : মৌসুমী বায়ূর প্রভাবে বর্ষার অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে যমুনা নদীর পানি। বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। ফলে দ্বিতীয় দফায় আবারো অবনতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। পানি বৃদ্ধির কারণে প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। বুধবার সকালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন
রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাধ (হার্ডপয়েন্ট) এলাকায় পানি ৩৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬৮ ও কাজিপুর উপজেলা পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার বন্যার অবস্থা অবনতি হয়েছে। পানি বাড়ার কারণে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি এবং নানা ধরণের ফসল। পানিবন্দি অনেক মানুষ বাঁধ ও উঁচু স্থানে ঝুপড়ি ঘর তুলে অবস্থান নিয়েছেন।
পানি বাড়ায় নদী-তীরবর্তী কাজিপুর উপজেলার ক্ষুদবান্ধি, সিংগড়াবাড়ি ও শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরীতে ব্যাপক ঘূর্ণাবর্তের কারণে ভাঙ্গন বেড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে বন্যাকবলিত জেলার কাজিপুর, বেলকুচি, সদর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার দেড় লাখ মানুষ।
সদর উপজেলার শহর রক্ষা বাধে আশ্রয় নেয়া কহিনুর, শাপলা, আসলামসহ অনেকে বলেন, আমরা প্রায় ১সপ্তাহ হল বাধে আছি। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন ত্রান বা সহযোগিতা পায়নি। বর্তমানে কোন কাজ কর্ম নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় জীবন যাপন করছি। গবাদি পশু নিয়েও পড়েছে বিপাকে। রাতে চোরে ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে বাধে আশ্রয় নেয়া বানভাসি মানুষগুলো।
সদর উপজেলার শিমলায় পাউবোর ক্ষতিগ্রস্ত ‘শিমলা স্পার’টির আরো প্রায় ৫০ মিটার পাকা কংক্রিট অংশ গত সোমবার (১৪ জুলাই) নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় এক মাসের ব্যবধানে তিনবার ধসে পড়ল স্পারটি। ৫০ মিটার মাটির ও ৫০ মিটার পাকা কংক্রিট অংশসহ ঘূর্ণাবর্তের কারণে ১০০ মিটার নদীতে চলে যায়। পানির মধ্যে বাকি ৫০ মিটার অবকাঠামো দাঁড়িয়ে আছে।
জেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার নদীতীর রক্ষা বাঁধের ওপর ভাঙ্গনের ঝুঁকি ঠেকাতে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে সদর, কাজীপুর ও এনায়েতপুরে ১১টি স্পার ও গ্রোয়েন নির্মাণ করা হয়। সময় মতো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় অধিকাংশই ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ওই সব অবকাঠামোর মধ্যে শিমলা স্পারটির পাশে ব্যাপক ঘূর্ণাবর্তের কারণে এ দশা হয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজিপুর, সদর ও শাহজাদপুরের কয়েকটি স্থানে নতুন করে ভাঙ্গনও বেড়েছে।
বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় রয়েছে, ২৪০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও এক হাজার ৬৮০টি ঘরবাড়ি আংশিক, তিন হাজার ৫৫০ হেক্টর ফসলি জমি, ৩০টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ও পাঁচটি আংশিক, ৩ কিলোমিটার রাস্তা ও বাঁধ সম্পূর্ণ এবং ৭ কিলোমিটার আংশিক, তিনটি ব্রিজ ও কালভার্ট সম্পূর্ণ ও সাতটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৩৫টি ইউনিয়নের ২৪০টি গ্রামের প্রায় ৩৫ হাজার পরিবারের এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুুর রহিম জানান, বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে ২৬৭ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২৫৮ টন জিআর চাল, সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা, গো-খাদ্যের জন্য দুই লাখ ও শিশুখাদ্যের জন্য দুই লাখ টাকা এবং ৩০ হাজার শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে। ছবিসহ
আরও পড়ুন
বাসাইলে কিশোর গ্যাংয়ের হামলার ঘটনায় গ্রেফতার ১
বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী দারিয়ালে চারশ বছরের পুরোনো ঘুড়ির মেলা
জামালপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন বীর উত্তম সড়কের নামফলক ভেঙ্গে ফেলেছে দর্বৃত্তরা