হোম » প্রধান সংবাদ » সুনামগঞ্জে বন্যায় মৎস্যখাতে ক্ষতি হয়েছে ২১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা : জানিয়েছে জেলা মৎস্য অফিস

সুনামগঞ্জে বন্যায় মৎস্যখাতে ক্ষতি হয়েছে ২১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা : জানিয়েছে জেলা মৎস্য অফিস

আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ : ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জ জেলায় এবারের বন্যায় প্রায় ২৫ হাজার গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ীর পাশাপাশি এসব গবাদিপশুগুলিও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান। গবাদিপশুর পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২৮৪৬টি মৎস্য পুকুর। এসব পুকুরের মাছের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২ শত ৬৭ মেঃ টন যার মূল্য ১৮ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা। বন্যায় ১ কোটি ২২ লক্ষ পোনা বানের জলে ভেসে যায়। সরকারী হ্যাচারী,ব্যক্তিমালিকানাধীন খামার ও পুকুরসহ অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা। মোট ২১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে শুধু মৎস্যখাতে।

 

ক্ষয়ক্ষতি পূরনের জন্য সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্যচাষীদের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত প্রণোদনা ৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার ১ লক্ষ ২১ হাজার ৭শত ৪৩ জন মৎস্যজীবির জন্য সব্র্ােচ্চ বরাদ্দের দাবী করেছে মৎস্য বিভাগ।  এছাড়াও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিক মৎস্যচাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণসহ মৎস্যজীবিদেরকে অন্যান্য সুবিধাদি প্রধানের জন্যও বলা হয়েছে। পোনা অবমুক্তির পরিমান আরো বাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে সুপারিশ করা হয়।

বন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট দুর্যোগেও গবাদিপশু ও হাঁসমুরগী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় চুরি হয়েছে গরু। সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মনি বেগম বলেন,বাড়িতে পানি উঠায় আমি বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। এ সুযোগে কতিপয় চোরদল আমার একডজন হাঁস চুরি করে নিয়েছে।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সাংবাদিক নুরুল হক বলেন,আমার মালিকানাধীন হক বহুমুখী খামার বাড়ীর ফিশারীতে বিভিন্ন জাতের প্রায় আড়াই লক্ষ পোনামাছ ছিল। সকাল এবং বিকাল হলে সমস্ত পুকুর জুড়ে পোনামাছ ভাসত, খেলা করত,খাবার খেত, কত সুন্দর লাগত। শত চেষ্টা করেও পোনাগুলো রাখা গেলনা অকাল বন্যার কারণে। আল্লাহ এই ক্ষতি সইবার শক্তি দান করুন।

মৎস্য খামারে প্রায় কোটি টাকার উপর বিনিয়োগ করেছিলেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সাফিউল ইসলাম (সুস্বাদ)। কয়েক মাস পরেই খামার থেকে লাভবান হবেন বলে স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। কিন্তু চলমান পাহাড়ি ঢলের আকস্মিক বন্যায় তার সে স্বপ্ন ভেসে গেছে। বানের পানিতে মাছ ভেসে যাওয়ায় তিনি এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সবকিছু হারিয়ে তিনি এখন দিশেহারা ।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের পাগলা রায়পুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম রকুর ছেলে সাফিউল ইসলাম (সুস্বাদ), পাগলার দক্ষিণ কাদিপুর এলাকার মহাসিং নদীর মোড়ে প্রায় ১০ একর জমিতে দাদীমা নামে (সিসি ক্যামেরা দ্বারা বেষ্টিত) একটি মৎস্য খামার স্থাপন করেন। এতে তিনি রুই ,মৃগেল, কাতলা,কার্প, ব্রিগেড, সরপুটি, কাটার, বাউস মাছের পোনা ও ২ কেজি ওজনের বড় মাছ সহ প্রায় কোটি টাকার উপরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ শুরু করেন। কয়েক মাস পর মাছ বিক্রি করার কথা ছিল। তাতে অনেক টাকা লাভ হত তার।

 

কিন্তু সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যার পানি ফিশারিতে ঢুকে পড়ে। এতে করে সব মাছ ভাসিয়ে নিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ফিশারির চতুর্দিকে জাল ও পাটিবাঁধ দিয়ে মাছ আটকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেন। এতে উপকরণ এবং শ্রমিক খরচসহ আরও প্রায় লাখ টাকা ব্যয় হয় তার। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পানির তোড়ে পাটিবাঁধ ভেঙ্গে পানি ভেতরে ঢুকে পড়ায় সব মাছ ভেসে যায়। সব হারিয়ে তিনি এখন দিশেহারা।

খামারের মালিক সাফিউল ইসলাম সুস্বাদ বলেন, স্বপ্ন নিয়েই খামার করেছিলাম। খামারে প্রায় কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ করেছিলাম। আশা ছিল মাছ বিক্রি হলে অর্ধকোটি টাকা আয় হবে। কিন্তু বন্যায় আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। এ ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেব তা ভেবে পাচ্ছি না। পরিবার পরিজন নিয়ে এখন অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। সরকারের কাছে আমার দাবি, আমি সহ আমার মত যারা সহায়-সম্বল হারিয়েছে তাদের দিকে একটু নজর দেওয়ার জন্য।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ খামারের তালিকায় নাম পাঠিয়ে দেব। সরকারি কোন সহায়তা আসলে অবশ্যই জানানো হবে। বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার মৎস্যসম্পদের মারাত্মক ক্ষতিসাধনের কথা স্বীকার করে জেলা মৎস্য অফিসার মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সুনামগঞ্জে এবারের বন্যার স্থায়ীত্ব বেশীদিন ছিলনা। কিন্তু এর ক্ষয়ক্ষতি বিশেষ করে আমাদের মৎস্যসম্পদের ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশী বলেই আমি মনে করি।

 

একটাকা বা দুটাকা নয় মোট ২১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে শুধু মৎস্যখাতে। ক্ষয়ক্ষতি পূরনের জন্য সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্যচাষীদের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত প্রণোদনা ৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার ১ লক্ষ ২১ হাজার ৭শত ৪৩ জন মৎস্যজীবির জন্য সব্র্ােচ্চ বরাদ্দের দাবী করছি আমরা। এছাড়াও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিক মৎস্যচাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণসহ মৎস্যজীবিদেরকে ঋনসহ অন্যান্য সুবিধাদি প্রধানের জন্যও বলা হয়েছে। পোনা অবমুক্তির পরিমান আরো বাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি বজ্রপাতে নিহত জেলার দুজন মৎস্যজীবির পরিবারকে সরকার ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরন প্রদানের সিদ্বান্ত নিয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

error: Content is protected !!