হোম » আন্তর্জাতিক » নতুন ভিসা নীতিকে স্যাংশন বলছেন না ডোনাল্ড লু

নতুন ভিসা নীতিকে স্যাংশন বলছেন না ডোনাল্ড লু

আওয়াজ অনলাইন: নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশের জন্য ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি স্যাংশন নয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। 

দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি একটি বিষয় খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, আজ আমরা কাউকে স্যাংশন দিচ্ছি না।’

ডোনাল্ড লু মনে করছেন, বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের গণতন্ত্র রয়েছে, যেকারণেই এখানে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া দরকার।

নতুন ভিসা নীতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সরকারের পাশাপাশি বিরোধীদলের কেউ সহিংসতায় জড়িয়ে পড়লে বা ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করলে সেই ব্যক্তিও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সরকার ও বিরোধী উভয়ের ক্ষেত্রেই ন্যায্যতার ভিত্তিতে, গঠনমূলক পদ্ধতিতে এবং সমানভাবে নতুন এই নীতির বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বুধবার বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে এক বিবৃতি দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন।

এরপর রাতেই এক অনুষ্ঠানে চ্যানেল আইয়ে যুক্ত হন ডোনাল্ড লু। তার পুরো সাক্ষাৎকারটি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘আমি একটি বিষয় খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, আজ আমরা কাউকে স্যাংশন দিচ্ছি না। আপনি যেমনটি বলছিলেন যে সেক্রেটারি অফ স্টেট একটি নতুন নীতির ঘোষণা করেছেন, যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেই সব ব্যক্তির ভিসা সুবিধায় বিধি–নিষেধ আরোপ করতে পারবে, যারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

‘সুতরাং, যে কেউ এর আওতায় পড়তে পারেন। সরকারের লোকজন, বিচার বিভাগের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা বিরোধী দলের কেউ। আমরা বিষয়টি এভাবে দেখছি যে দক্ষিণ এশিয়া এবং সারা বিশ্বে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে যেতে হলে বাংলাদেশের জন্য গণতন্ত্র রক্ষার বিষয়টি একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় এবং অপরিহার্য।’

ডোনাল্ড লু বলেন, ‘এই নীতিটি সরকারের এবং বিরোধী দলের সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, সামনের নির্বাচনে যদি আমরা দেখি যে বিরোধীদলের কেউ সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছেন বা ভোটারদের ভয় দেখিয়েছেন, তাহলে সেই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না।

‘একইভাবে যদি আমরা দেখি যে সরকারের বা নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কেউ যদি ভোটারদের ভয় দেখায় অথবা সহিংসতায় জড়ায় অথবা বাক স্বাধীনতাকে অগ্রাহ্য করে, তবে সেই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’

তবে নতুন ভিসা নীতি প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, এটা শুধুমাত্র ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য হবে বলে মন্তব্য করেন দেশটির সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

যাদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আছে, কিন্তু তা বাতিল করা হয়েছে- সেক্ষেত্রে তাকে জানানো হবে কিনা-এই প্রশ্নের জবাবে লু বলেন, সঠিক, যাদের ভিসা প্রত্যাহার করা হবে এমন সবাইকেই আমাদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি তৎক্ষণাৎ জানানো হবে।

সুনির্দিষ্টভাবে কাদেরকে এই বিধিনিষেধের আওতায় আনা হবে- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আবারও বলছি, আমরা কেবল সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেনের অনুমোদন দেওয়া একটি নতুন নীতির বিষয়ে সবাইকে অবহিত করছি যা এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কারও উপর প্রয়োগ করা হয়নি। এই নীতি আমাদেরকে এরকম যে কোনো ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপে সহায়তা করবে, যারা এই চারটি কাজের যেকোনো একটিতে জড়িত থাকবেন: ভোটারদের ভয় দেখানো, ভোট কারচুপি, বাক স্বাধীনতাকে অগ্রাহ্য করা বা সমাবেশ করার অধিকারকে অগ্রাহ্য এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত করতে সহিংসতার ব্যবহার।

‘আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, সরকার ও বিরোধীদের উভয়ের ক্ষেত্রেই ন্যায্যতার ভিত্তিতে, গঠনমূলক পদ্ধতিতে এবং সমানভাবে এই নীতির বাস্তবায়ন করা হবে।’

নির্বাচনের সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার কখনোই কোনো পক্ষ নেয় না মন্তব্য করে লু বলেন, আমরা কোনো বিশেষ দল বা কোনো বিশেষ প্রার্থীকে সমর্থন করি না। একটিমাত্র বিষয়কেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার সমর্থন করে আর তা হলো– একটি অবাধ ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।

গত ১৪ই মে রাষ্ট্রদূত হাসের নিরাপত্তা কমিয়ে আনার ঘটনার জেরেই কি এই নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে-এই প্রশ্নে ডোনাল্ড লু বলেন, নতুন এই নীতি এবং এর ঘোষণা কোনোভাবেই সরকারের ১৪ মে এর ঘটনার সাথে সম্পর্কিত নয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার কখনো প্রতিশোধের মনোভাব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় না এবং নেবে না।

নতুন ভিসা নীতিকে ভবিষ্যতমুখী নীতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যা বাংলাদেশে আগামী দিনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এবং সহিংসতা প্রতিরোধে সহায়তা করবে বলে আমরা আশা করছি। যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে বাংলাদেশের বন্ধু মনে করে। আমরা নতুন এই নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আপনাদের প্রধানমন্ত্রী, তাঁর সরকার, বাংলাদেশী সুশীল সমাজ এবং বাংলাদেশের জনগণের যে চেষ্টা তাকে বেগবান করতে চাই–যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ- এই প্রশ্নে লু বলেন, বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার। আমাদের কাছে এই দেশটির বিশেষ স্থান রয়েছে। এই দুই দেশের মানুষে–মানুষে, পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোম্পানি পর্যায়ে দারুণ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র এগিয়ে নিতে চেষ্টা করি যা বাইডেন–হ্যারিস প্রশাসনের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং আমরা বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের গণতন্ত্র রয়েছে যেকোনেই এখানে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া দরকার।

error: Content is protected !!