হোম » অর্থনীতি » বর্তমান সময়ে বাজারে আগুন তেলে বেগুন,গরীব মরে ভাতে 

বর্তমান সময়ে বাজারে আগুন তেলে বেগুন,গরীব মরে ভাতে 

এম এ রাশেদ: মানুষের জীবন অর্থনৈতিক চাহিদার সাথে জড়িয়ে আছে বাজার ব্যবস্থা। যদি সেই বাজারই অস্থিতিশীল হয় তাহলে মৌলিক চাহিদা পুরনে মানুষের অস্থির হওয়াটা অস্বভাবিক কিছু নয়। দর ওঠা নামার সুচনাটা বাজার হলেও, রমজানের আগে নেই উঠতি বাজারে দর কমার সম্ভাবনা। বাজারকে ঘিরে ধীরে ধীরে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে গ্রামীণ মানুষের অর্থনীতি! সারাদিন কৃষাণ দিয়েও জুটছেনা এক কেজি গো-মাংস। কেনার সক্ষমতা নেই অনেক পরিবারের।
গরীবের আমিষের চাহিদা মেটানো বয়লার মুরগী ও ডিম ক্রমেই চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে। একসময় মধ্যবিত্ত যে পরিবার গোটা মুরগী কিনে বাজার করতো, এখন তারা কাটা মুরগীর মাংস দিয়ে কোন মতে দইয়ের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছে। নদী মাতৃক দেশে মাছে ভাতে বাঙালির সেই চিরচেনা প্রবাদটি আজও পুঁথি গল্পের মাঝেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেল।
নদী নালা খাল বিলে দেশী মাছের সংকট বেড়েই চলছে দিনদিন। বাজারে দেশী মাছের চেয়ে চাষ করা বরফ মিশ্রিত মাছের আমদানি বেশি। বর্তমান সময়ে মাছের দামও মুরগির চেয়ে কোন অংশে কম নয়। দেশে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির কথা বলা হলেও, প্রকৃত উন্নতি হয়নি খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের। পুঁজিবাদীর যাঁতাকলে পড়ে ধনী আরো ধনী হচ্ছে, গরীব হচ্ছে আরো গরীব।
উপজেলা জুড়েই বাজারের প্রতিটি দোকানে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের টানা দীর্ঘশ্বাস। আসছে মুসলিমদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান। তখন বাজার পরিস্থিতি কেমন হতে পারে এমন ভাবনা আর বর্তমান আর্থিক আয়ের পরিমান নিয়ে চিন্তিত সাধারণ মানুষ।
রমজানে দাম কমে যাওয়ার রেকর্ড না থাকলেও দাম বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবনতা ঠিকই প্রতি বছরই চলমান। বর্তমান সময়ে ডিম ৪৫-৫০ টাকা হালি, কাটা বয়লার মুরগী কাটা ২৮০ ও গোটা ২৩০ টাকা কেজি, গরুর মাংস ৬৫০-৭০০, সিলভার কার্প জাতীয় মাছ ২৫০-৩০০ কেজি, কিছুটা ছোট জাতের মাছ কম করে হলেও ১৫০ টাকা কেজি। বাজার জুড়ে কাঁচা মরিচে জ্বলছে আগুন।
উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বর্তমান কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি। অন্যদিকে বর্তমান সময়ে দিনমজুরের দৈনিক মজুরি ৩৫০-৪০০ উর্ধ্বে ৫০০ টাকার বেশি নয়। চালের কেজি ধরন ভেদে ৫০-৫৫ থেকে ৬০-৭০ টাকা। ১২০ টাকা লিটার সোয়াবিন তেল বর্তমান বাজারে ২০০ টাকা। ধীরে ধীরে বাজার পরিস্থিতি যদি এমন অস্থিতিশীল হয়ে উঠে তাহলে যাদের পরিবারে চাল ক্রয়ের পাশাপাশি সপ্তাহ বা মাস শেষে কিস্তির জন্য নগদ টাকা গুনতে হয় তাদের কি অবস্থা?
উর্ধ্বমুখী বাজারে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে সাধারন মানুষ। সারাদিনের খাটুনিতে স্বপ্ন দেখা আর দিন শেষে বাজার ঘুরে নিরাশা হওয়াটা পরিবারের একজন মানুষকে কতটা বেদনা দেয়, কেউ খবর রাখেনা। দ্রব্যের দিক দিয়ে সকল দ্রব্যই উর্ধ্ব গতিতে মুল্যবান হলেও যাদের জন্য দ্রব্য তারা আজ মুল্যহীন। একদিকে দামে কম পেতে বিক্রেতার কাছে অনুরোধ অন্যদিকে দোকানীদের এক কথা এক জবাব, মাফ চাই দাম বেড়েছে আমরা কিছু করতে পারবোনা।
সব মিলেয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখোমুখি ধুনটের বাজার ব্যবস্থা। বিপাকে পড়ছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ। এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে প্রায় ১০০ টাকার মতো বেড়েছে। দাম বেড়েছে সোনালি মুরগিরও। বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৩৩০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগেও যা পাওয়া যেত ২৬০ টাকায়। আর দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫২০ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিক্রেতারা জানান, এর আগে ব্রয়লার মুরগি কখনোই এতো দামে কেনাবেচা হয়নি। একদিনে এর দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। ফেব্রুয়ারীর শুরুর দিকে এককেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছাড়িয়ে যায় ১৯০ টাকা। বাজারে হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তারা জানান, অনেকদিন লোকসান গুনে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
এর মধ্যে আবার বেড়ে গেছে মুরগির খাবারসহ উৎপাদন খরচ। এদিকে চাহিদামতো যোগান না পাওয়ার কথা জানায় উর্ধ্ব গতিতে বাড়তে থাকা ডিম বিক্রেতারাও। সপ্তাহ ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়ে প্রতি হালি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
এছাড়া বাজারে অন্যান্য মাংসের দামও বাড়তি। গরুর মাংস কেজিপ্রতি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। তবে স্থিতিশীল রয়েছে চাল, ডাল, আটা, ময়দা ও সয়াবিনসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম।
সামনে আসছে রমজান। এ সময়ে বাজারে ছোলা ও মসুর ডাল জাতীয় খাবারের চাহিদা বাড়ে। এমন সময়ে বাড়ছে ছোলা ও ছোলার ডালের দাম। মানভেদে মসুর ডালের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। আর সয়াবিন তেল প্রতি লিটার সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ১৯০ টাকাতেই বিক্রি হলেও ১০ টাকা বৃদ্ধিতে ২০০ টাকা দরেও বিক্রি করছে অনেকে।
তবে বাজারে সরবরাহ ভালো থাকায় নাগালের মধ্যে চলে এসেছে শীতের বেশ কিছু সবজি। তবে বাজারের স্থান কাল পাত্র ভেদে বেগুন প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৮০, মাছের মধ্যে রুই মাছ মানভেদে ৩০০ থেকে ৪৫০, বদ্ধপানিতে চাষকৃত তেলাপিয়া ও পাঙাশ ১৮০ – ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ও মরিচে আগুন মাখা উর্দ্ধমুখী দাম হলেও অনেকটাই জলের দামে মিলছে মৌসুমি সবজি মুলা। প্রতি কেজি ৫ থেকে ৭ টাকায় মিলছে এ সবজি।

Loading

error: Content is protected !!