হোম » অর্থনীতি » বাড়ির আঙ্গিনায় পুষ্টি বাগান, মিটছে চাহিদা হচ্ছে বাড়তি আয়

বাড়ির আঙ্গিনায় পুষ্টি বাগান, মিটছে চাহিদা হচ্ছে বাড়তি আয়

মিজানুর রহমান: বাড়ির সামনের আঙ্গিনার একপাশের কোণে বাঁশের বেড়া দিয়ে চারকোণা বাগান। সেখানে দুচারটা লাউ, কয়েকটি কুমড়া, বেশ কিছু সবজি সহ বেড করে সাজিয়ে লাগানো হয়েছে কয়েক পদের শাক। স্বল্প জমিতে লাগানো এসব শাক-সবজি অল্প পরিচর্যায় হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠেছে। কীটনাশকের পরিবর্তে বব্যবহার হচ্ছে ফেরোমন ফাদ। রাসায়নিক ও কীটনাশক ছাড়াই ভার্মিকম্পস্ট সার ব্যবহারের কারণে বলা হচ্ছে বিষ মুক্ত সবজি।
এভাবে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের মরিচবাড়ি নামক একটি গ্রামের প্রায় প্রতি ঘরে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদন হচ্ছে। কৃষি বিভাগের সরাসরি সহযোগীতা আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের অর্থায়নে এসব বাগানের নামকরণ করা হয়েছে “পারিবারিক পুষ্টি বাগান”।
ওই এলাকার কৃষকদের পরিত্যাক্ত ২ শতাংশ জমিতে করা হয়েছে পুষ্টিবাগান। পাশাপাশি তুলনামূলক কম জমিতে হরেক রকম ফলদ গাছ,ঔষধী গাছ আর বিভিন্ন শাকসবজি দিয়ে সাজানো হয়েছে আবাসন প্রকল্পের প্রতিটি ঘরের ফাঁকা জায়গায়।
আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়ে সুন্দর মডেল করে তৈরী করা হয়েছে এসব পুষ্টি বাগান। সুন্দর করে বাঁশের নির্মানশৈলী দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। এমন ভাবে তৈরী করা হয়েছে বাগান যাতে কৃষকরা একটার পর একটা সবজি চাষ করে চাহিদা পুরণ করতে পারে।
এক কৃষকের সঙ্গে  বলেন, পুষ্টি বাগানের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের সার ও বীজ দিছেন। মরিচ, পেঁয়াজ, লাল শাক, পুঁই শাক সহ সব ধরনের বীজ দিয়েছে। এখন আমাদের বাজারে এসব কিনতে হয় না। আমরা এটা থেকেই খাচ্ছি।
করিম উদ্দিন বলেন, কৃষি অফিসের মাধ্যমে আমরা পুষ্টি বাগান সম্পর্কে জানতে পারি। উপজেলায় আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরে সার, বীজ দেয়। আগে আমরা কীটনাশকের ব্যবহার জানতাম না। এখন আমরা বাড়িতেই কীটনাশক ছাড়া শাক সবজি উৎপাদন করতেছি। নিজেরা নিরাপদ সবজি খাচ্ছি, পাশাপাশি আত্মীয় স্বজনদেরও দিচ্ছি, জানাচ্ছি। এখন আর বাজার থেকে আমাদের কিনতে হয় না।
আব্দুল বাতেন বলেন, পুষ্টি বাগান করে আমাদের ভালো হয়েছে। সার, বীজ উপজেলা থেকে দিছে। প্রায় দুই শতক জমিতে পুষ্টি বাগান করেছি। প্রতিদিন এখান থেকে তুলে কিছু খাই আবার কিছু বিক্রিও করি।
প্রতিদিন একজন মানুষের ৩০০-৬০০ গ্রাম শাক-সবজির প্রয়োজন। এ বিষয়ে শিশু ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করা কনসাল্টেন্ট ডাঃ আজমল হক বলেন, মৌসুমি শাকসবজি মানুষের শরীরের বুনিয়াদ পালং,ফুলকপি,বাঁধাকপি,ব্রকলি মৌসুমে উৎপাদিত হয়।এখন বেশ কিছু শাকসবজি মৌসুমের বাহিড়ে অন্য সময় গুলোতে উৎপাদিত হয়।খাদ্য নালী, কোষ্ঠকাঠিন্য সহ অনেক অর্গানের সুস্থতার জন্য শাকসবজি প্রয়োজন। মিনারেল-ভিটামিনের জন্য প্রয়োজন। এসব ভিটামিন মিনারেল মাংস বা ডিমে পাওয়া যাবেনা। আমাদের মাটি উর্বর।আমাদের পরিত্যাক্ত জমিতে সহজেই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতিটি বাড়িতে যখন শাকসবজি উৎপাদন হবে,তখন বাজারের প্রতি নির্ভরতা কমবে।পাশাপাশি প্রটিনজাত খাবারের পাশাপাশি সহজেই প্রতিদিন শাকসবজি পাতে উঠবে।
আদিতমারী কৃষি অফিসার ওমর ফারুক বলেন, আমরা একটি প্রকল্প থেকে এই পুষ্টিগ্রাম করেছি। পাশাপাশি অন্য এলাকাগুলোতে করবো। কেউ যদি ব্যক্তি উদ্যোগে করে তাদের পরামর্শ দেয়া হবে। কৃষকদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে।পুষ্টি বাগান করতে যা যা পরামর্শের প্রয়োজন, সব রকম সহায়তা দিতে আমরা মাঠে কাজ করছি।
জেলা কৃষি দপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন,আমরা প্রকল্প থেকে করেছি। পুষ্টিবাগান করতে সব রকম সহায়তা দেয়া হচ্ছে। অন্য উপজেলাতে সম্প্রসারণের জন্য কাজ করছি। কৃষি মডেল তৈরির উদ্যেশ্যই হলো সম্প্রসারণ করা।
error: Content is protected !!