হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » সোনাইমুড়ীতে স্বাস্থ্য সহকারী মাঠকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলা 

সোনাইমুড়ীতে স্বাস্থ্য সহকারী মাঠকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলা 

মোহাম্মদ হানিফ, নোয়াখালী প্রতিনিধি : স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার গঠন করেছে পরিবার পরিকল্পনা সেই পরিবার পরিকল্পনাই  হাতে-কলমে মাঠে থাকলেও বাস্তবে তা নেই সরকারের স্বাস্থ্যসেবায় দম্পতিদের দাম্পত্য জীবন সুখি ও স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বাস্তবায়নসহ মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। ঘরে ঘরে এ সেবা পৌঁছে দিতে সারা দেশে উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে এ বিভাগের কার্যক্রম। নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ীতে স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠকর্মীরা মাঠে নেই। সঠিক মনিটরিং নেই, যা আছে কাগজে কলমেই।
এদের কাজ হচ্ছে স্বাস্থ্য সহকারী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা, কিশোর-কিশোরী সেবা, গর্ভবতী ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা এবং সপ্তাহে ২ দিন ইপিআই প্রদান করা। আর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ কর্মীদের কাজ হচ্ছে প্রতিটি গ্রাম বা মহল্লার বাড়ি বাড়ি গিয়ে দম্পতিদের পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করা। আগ্রহী দম্পতিদের নিয়ে পরবর্তীতে তাদের সেবা দেওয়া ও পর্যবেক্ষণ করা। গর্ভবতী মহিলাদের তালিকা তৈরীর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সোনাইমুড়ী উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় স্বাস্থ্য সহকারী রয়েছেন ৩২ জন। প্রতিটি ইউনিয়নে তিন জন করে মোট ৩২ জন রয়েছেন। এরা সপ্তাহে দুই দিন মাঠপর্যায়ে টিকা প্রদান, দুই দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদান, দুই দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সপ্তাহে দুই দিন টিকা প্রদানে উপস্থিত থেকে আর পুরো সপ্তাহ অনুপস্থিত থাকেন। ১ম ডোজ টিকা দেওয়ার সময় জনপ্রতি ২ থেকে ৫’শত টাকা করে নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিয়মিত না এসে সপ্তাহে এক দিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন উত্তোলন করে থাকেন।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ৭ জন ও ৪৮ জন মাঠকর্মী রয়েছেন। তারা মাঠে না থেকে গ্রাম ও মহল্লার বাড়ি বাড়ি না গিয়ে কাজের অগ্রগতির প্রতিবেদন ঘরে বসে তৈরী করে জমা দেন। উপজেলার অম্বরনগর ইউনিয়নের মাঠকর্মী লুৎফুর নাহার, মনোরমা ভৌমিক, প্রিয়াঙ্কা মজুমদার, বজরা ইউনিয়নের মনিকা সাহা, সোনাপুর ইউনিয়নের রাহেলা আক্তার, সাহানাজ আক্তার ও নদনা ইউনিয়নের হাসিনা আক্তার ও শিউলি ঠিকমত মাঠে থাকেন না। যার কারনে এই উপজেলায় সন্তান জন্মের হার বেড়েছে। গর্ভবতী মায়েরা ভুগছেন পুষ্টিহীনতায়। সঠিক পরামর্শের অভাবে বেড়েছে সন্তান সম্ভবা মায়েদের মৃত্যুঝুঁকি।
উপজেলার বারগাঁও ও সোনাইমুড়ী ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মাইনুদ্দিনের ১১ জন মাঠকর্মীকে তদারকি করার কথা রয়েছে। তবে তিনি মাঠপর্যায়ে কোন তদারকি করেন না। মাঠের কাজের সাথে বাস্তবের মিল নেই। মাসিক স্বাস্থ্য সেবার অগ্রগতির প্রতিবেদন শুধু কাগজে-কলমেই।
উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ইয়াকুব সুমন ৬ জন মাঠকর্মীকে তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু তিনি মাঠপর্যায়ে তদারকি না করে পৌর এলাকার নিউ নুরানী হাসপাতালে দিনের বেলায় চাকরি করেন বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। একই ভাবে নাটেশ্বর ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ইব্রাহিম মাঠপর্যায়ে কাজ না করে বজরা ইউনিয়নের ভাই ভাই ফার্মেসীতে ডেনটিস্ট না হয়েও নিয়মিত রোগী দেখেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের এক পরিদর্শক জানান, উপজেলা ইউএফপিও নাজনিন আক্তার অন্য উপজেলায় অফিস সহকারী থেকে পদোন্নতি পেয়ে সোনাইমুড়ী উপজেলায় যোগদান করেন। তিনি নিয়ম অনুয়ায়ী তদারকি করেননা। তার বাসা ঢাকাতে হওয়ায় তিনি নিজেও ঠিকমত অফিস করেননা।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা ইউএফপিও নাজনিন আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে এড়িয়ে যান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ইসরাত জাহান বলেন, স্বাস্থ্য সহকারীরা মাঠে থাকেন না, ডিউটি করেন না এমন অভিযোগ তার কাছে নেই। তবুও বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
নোয়াখালী জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের থাকার কথা রয়েছে। তবে কেউ নেই এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
error: Content is protected !!