হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » নওগাঁয় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিবাদ; আহত-২

নওগাঁয় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিবাদ; আহত-২

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর বদলগাছীতে তুচ্ছ ঘটনাকে কন্দ্রে করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুইজন মারাত্বক জঘম হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপালে চিকিৎসা নেওয়ার পর  বর্তমানে বাসায় চিকিৎসাধিন রয়েছেন। গত ২১ অক্টোবর শনিবার দুপুরে উপজেলার বালুভরা ঢেকরা গ্রামে এঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বদলগাছী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানাগেছে, বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ঢেকরা গ্রামের শ্রী কালিপদ চন্দ্র সরকার তার বাড়ির সামনের সরু মাটির রাস্তায় পূজা উপলক্ষে ঘাস পরিষ্কার করছিলেন। এমতাবস্থায় রাস্তার পাশের জমির মালিক খাজামুদ্দীন সরদার ও তার ছেলে আতিকুর সরদার ঘটনাস্থলে এসে ঘাস পরিষ্কার করতে বাঁধা প্রদান করে।

এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয় এর এক পর্যায়ে খাজামুদ্দীনের নাতি সোহান বাড়ি থেকে লোহার রড, সাবল, হাসুয়া ও দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে বেশ কয়েকজন মিলে শ্রী কালিপদ সরকার, তার স্ত্রী সুশিলা রানীকে হত্যার উদ্দ্যেশে মাথায় কোপ দেয়। এতে করে সুশিলা রানীর মাথার অনেক অংশ কেটে রক্তাক্ত জঘম হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে বিবস্ত্র করে মারপিট করা হয়।

শ্রী কালিপদ সরকারের মাথায় হাসুয়া দিয়ে কোপ দিলে সেটি তার কান ও গালে গিয়ে লাগে এতে করে তিনিও অনেকটা জখমপ্রাপ্ত হয়ে মাটিতে পড়ে যান। এসময় তাদের চিৎকারে তাদের ছেলে ও ছেলের বউ এগিয়ে আসলে তাদের ও বেধড়ক মারপিট করে পালিয়ে যান তারা।

পরে আহতের উদ্ধার করে প্রথমে বদলগাছী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স এ নেয়া হলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকলে কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চার দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকার পর কিছুটা উন্নতি হলে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসেন তারা।

এ ঘটনায় শ্রী কালিপদ চন্দ্র সরকারের ছেলে অজয় কুমার বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তরা হলেন, বদলগাছী উপজেলার চক প্রধানকুন্ডি গ্রামের মৃত. আজগর আলী সরদারের ছেলে খাজামুদ্দীন সরদার(৫৫) ও তার ছেলে আতিকুর সরদার (৩৫), একই গ্রামের হাসান এর ছেলে সোহান (২২), মৃত ফিরোজ সরদারের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম (৫৫) ও তার ছেলে মেহেদী হাসান (৩০)।

স্থানীয় ঢেকরা গ্রামের প্রতক্ষ্যদর্শী মিস্টি রানী বলেন, পূজার জন্য বাড়ির আশপাশ সবাই পরিষ্কার করে সে জন্য কালিপদ কাকা বাড়ির সামনের রাস্তায় ঘাস জঙ্গল পরিষ্কার করছিলেন এসময় খাজামুদ্দীনের ছেলে আতিকুর এসে বাধাঁ দেয় তারপর বাড়িতে ফোন করে সবাইকে লাঠি সোডা নিয়ে আসতে বলে। এবং তার বাপ ভাই সহ কয়েকজন এসে অন্যায় ভাবে এ লোকজন গুলাকে মারধোর করে।

স্থানীয় সুকুমল নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ছোট একটা মাটির রাস্তা একপারে খাজামুদ্দীনের জমি অন্য পারে হিন্দুদের বাড়ি। জমিতে কাজ করতে এসে তারা প্রায় বলে এখানে হিন্দুদের থাকতে দেয়া হবেনা। এদের তাড়াতে হবে। বাড়ির সামনে মাটির রাস্তা হলে ঘাস জঙ্গল হবে রাস্তার ঘাস পরিষ্কার করা নিয়ে তারা এই হিন্দু মানুষ গুলাকে পিটিয়েছে। রাস্তা তো কারো সম্পত্তি না, ওদের জমিতে তো ঘাস কাটতে যায়নি বা ওদের জমিতেও ঘাস ফেলা হয়নি অযথা তারা গায়ে পড়ে বিবাদ সৃষ্টি করেছে। বরাবর তারা আমাদের সংখ্যালঘু হিসেবে অত্যাচার করে আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই।

কালীপদ চন্দ্র সরকার বলেন, আমি কোদাল দিয়ে রাস্তার ঘাস পরিষ্কার করছিলাম। এসময় আতিকুর এসে বাঁধা দেয়, আমি তাকে বলি আমি তো রাস্তার ঘাস পরিষ্কার করছি তোমার জমির মাটি তো কাটছিনা বা তোমার জমিতে পা’ও দেইনি তোমার এতে সমস্যা কি। এতে করে সে আমর উপর চটে গিয়ে বাসার সবাইকে ডেকে আনে তারপর আমার উপর হামলা করে। এসময় আমার স্ত্রী, ছেলে বউসহ অন্যরা এগিয়ে আসলে তাদের উপর হামলা করে। এটা সম্পূর্নভাবে অন্যায় ভাবে তারা আমদের মেরেছে আমরা এর প্রতিকার চাই।

মামলার বাদী অজয় কুমার বলেন, পুজা উপলক্ষে আমার বাবা বাড়ির সামনের ঘাস পরিষ্কার করছিলো। এবিষয় নিয়ে তারা আমার মা বাবাকে হত্যার উদ্দ্যেশে হামলা করে। আমি বাইরে ছিলাম খবর পেয়ে আমি ছুটে আসলে তারা আমাকেও মারধোর করে। বর্তমানে আমার মায়ের অবস্থা অশংঙ্খাজনক। লোহার সাবল দিয়ে খাজামুদ্দীন আমার মায়ের মাথায় কোপ মারে। এবং তার ছেলে আতিকুর হাসুয়া দিয়ে আমার বাবার মাথায় কোপ মারে। কোপটি বাবার মাথায় না লেগে কান ও গালে লাগে এতে কান ও গালের অর্ধেক অংশ কেটে যায়।

তিনি আরো বলেন, আমি ঘটনার পুরো বিবরন উল্লেখ করে পুলিশের কাছে মামলা করি। কিন্তু পুলিশ মামলাটি উল্টোভাবে সাজিয়েছে তারা খাজামুদ্দীন ও তার ছেলেকে বাদ দিয়ে খাজামুদ্দীনের নাতির উপর হত্যা চেষ্টার আরোপ করেছে। আমরা তো মূর্খ মানুষ এতকিছু বুঝিনা তাছাড়া তখন মাথাও ঠিক ছিলনা। আমরা এজাহার সম্পর্কে এত বুঝিও না পুলিশ টাকা খেয়ে কেসটা উল্টো করে সাজিয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে খাজামুদ্দীনের ছেলে আতিকুর সরদার বলেন, আমাদের জমি থেকে ওরা মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছিলো আমরা মাটি তুলতে নিষেধ করলে উবয় পক্ষের মধ্যে একটা গন্ডোগোল হয়। উভয় পক্ষই মামলা করেছে বিষয়টি স্থানীয় এমপি মহোদয় জানেন তিনি সুরহা করে দিবেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) আশরাফুল আলম বলেন, এ ঘটনায় আমি একজনকে আটক করে আদালতে প্রেরন করেছি। বাঁকি আসামীরা সম্ভবত জামিনে আছে। অভিযোগরে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমি তো এজাহার লিখিনি বাদী লিখে নিয়ে আসছে। আমি কেন এজাহার পরিবর্তন করবো? তাছাড়া তদন্ত করে চার্জসিট দেয়ার সময় প্রকৃত অপরাধী কে সেটা বের হবে।

error: Content is protected !!