হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেন নুর কামাল 

রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেন নুর কামাল 

মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী : বহুল আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের সমন্বয়কারী ও আরসার কিলার গ্রুপের প্রধান নুর কামাল ওরফে সমিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। 
রোববার (১৫ অক্টোবর) মধ্যরাতে অস্ত্র-গুলিসহ তাকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সোমবার এসব তথ্য জানান র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তার নুর কামাল ওরফে সমিউদ্দিন মিয়ানমারের সাবের আহমেদের ছেলে। এসময় তার কাছ থেকে ৭টি দেশি-বিদেশী অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়।
র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, র‍্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজারের কুতুপালং এলাকার একটি পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করে আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের সমন্বয়কারী ও হত্যাকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী এবং সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা’র কিলার গ্রুপের প্রধান নুর কামাল প্রকাশ সমিউদ্দিন গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সমিউদ্দিন মুহিবুল্লাহকে হত্যার উদ্দেশ্যে খুব কাছ থেকে সরাসরি গুলি চালান। তারপর ফাঁকা গুলিবর্ষণ করতে করতে আত্মগোপনে চলে যান। সেখান থেকে পালিয়ে মিয়ানমারের আরসা ঘাটিতে দীর্ঘদিন থাকেন। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানে একের পর এক আরসা কমান্ডার গ্রেপ্তার হওয়ায় কিলিং গ্রুপের প্রধান হিসেবে তাকে আবারো ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
সমিউদ্দিন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক। সে ২০১৬ সালে মিয়ানমারে অবস্থানকালীন আরসার কমান্ডার আব্দুল হালিম, মাস্টার নুরুল বশর ও আবু আনাসের মাধ্যমে আরসায় যোগদান করে এবং মিয়ানমারে আরসার হয়ে ১ বছর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে শরণার্থী ক্যাম্প-৭ এ বসবাস শুরু করে।
২০১৮ সালের দিকে সে আরসার কমান্ডার মুফতি জিয়াউর রহমানের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে পুনরায় আরসার নতুন করে সদস্য সংগ্রহ, লোকবল বৃদ্ধিসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে। পর্যায়ক্রমে সে ৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আরসার ব্লক জিম্মাদার, হেড জিম্মাদার এবং সর্বশেষ ক্যাম্প কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব লাভ করে । সে আরসা প্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশে আরসার ভয়ংকর ও সক্রিয় সদস্যদের নিয়ে ২০ জনের একটি গান গ্রুপ তৈরি করে যা ‘কিলার গ্রুপ’ নামে পরিচিত। উক্ত কিলার গ্রুপের প্রধান হিসেবে সে নিজে দায়িত্ব পালন করতো। এই গ্রুপটি বিভিন্ন সময়ে টার্গেট কিলিং সম্পন্ন করার পাশাপাশি তাদের কথামতো কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ভিকটিমকে অপহরণপূর্বক শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনসহ মুক্তিপণ আদায় করত । মুক্তিপণ না পেলে তার নেতৃত্বে কিলিং মিশন সম্পন্ন করতো এবং ভিকটিমকে খুন করে গহীন পাহাড়ে অথবা জঙ্গলে লাশ গুম করতো বলে জানা যায় ।
এছাড়াও তার নেতৃত্বে ‘আরসা’র কিলিং গ্রুপের সদস্যরা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে হত্যা, হামলা, ভয় ভীতি প্রদর্শন, অরাজকতা ও আতঙ্ক সৃষ্টিসহ খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে । সে ক্যাম্প- ১, ২, ৬ ও ৭ এর আরসার ‘গান গ্রুপ’ কমান্ডার হিসেবেও নেতৃত্ব প্রদান করতো। তার নেতৃত্বে নগদ অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় করা হতো। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য তার নেতৃতে আরসার প্রধান আতাউল্লাহ এর নির্দেশে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে দূর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালানের সম্পৃক্ত ছিল।
সে আরও জানায়, আরসার প্রধান আতাউল্লাহ’র নির্দেশে সমিউদ্দিন ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের সমন্বয় করে ও সরাসরি অংশগ্রহণ করে। সমিউদ্দিন’সহ প্রায় ১২ জনের একটি দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে মাস্টার মহিবুল্লাহ’র অফিসে প্রবেশ করে মহিবুল্লাহ’কে গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তী তারা সেখান থেকে আত্মগোপনে চলে যায়। এছাড়া ২০২২ সালের নভেম্বরে গোয়েন্দা সংস্থা ও র‍্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন। উক্ত সন্ত্রাসী হামলায় একজন র‍্যাব সদস্য গুরুত্বর আহত হন। উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে সেও সরাসরি জড়িত ছিল।
এছাড়াও হেড মাঝি শফিক হত্যাকান্ড, জসিম হত্যাকান্ড, সেলিম হত্যাকান্ড, নুর বশর হত্যাকান্ড, সালাম হত্যাকান্ড, সলিম হত্যাকান্ড, কালা বদ্দা হত্যাকান্ড, রহিমুল্লাহ ও খালেদ হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল। এছাড়াও, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচিত ০৬ জন হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল বলে স্বীকার করার কথা জানান র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের এই কর্মকর্তা।
error: Content is protected !!