হোম » অপরাধ-দুর্নীতি »  কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সেবার নামে হয়রানি  কমেনি দুর্ভোগ সিন্ডিকেট ভূতের কাছে নিমজ্জিত

 কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সেবার নামে হয়রানি  কমেনি দুর্ভোগ সিন্ডিকেট ভূতের কাছে নিমজ্জিত

মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী, কক্সবাজার : জেলার প্রধান সেবাদানকারী প্রতিষ্টান কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সেবার ধরন বদলেছে বলে জানিয়েছেন রোগি ও রোগির স্বজনরা। তবে কমেনি দুর্ভোগ এমনটি অভিযোগ সেবা প্রার্থীদের।
জেলার একমাত্র চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল। বছরের পর বছর ধরে সিন্ডিকেট ভিত্তিক দুর্নীতির ভূতের কাছে নিমজ্জিত এই সরকারী প্রতিষ্ঠানটি বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানাগেছে, অবকাঠামোগত সমস্যা, চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা দিতে পারছে না কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে।
এই হাসপাতাল নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। ভুক্তভোগীরাও দিয়েছেন এমন তথ্য। সমস্যার কথা স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদানে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই হাসপাতালটিতে অনুমোদিত রোগীর ধারণক্ষমতা ২৫০ শয্যার। কিন্তু হাসপাতালে নিয়মিত ভর্তি থাকেন প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ জনের মতো, যা ধারণক্ষমতার তিনগুণ বেশি।
এতে দফায় দফায় সংকটের মুখ থেকে ফিরে সেবার ধরন বদলানো হলেও এখনও কমেনি দুর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের দুর্ভোগ। রয়েছে বেড সংকটও। শয্যার চেয়ে অধিক রোগী আসলেই হাসপাতালের ফ্লোরে রোগীদের স্থান নিতে দেখা গেছে। ফ্লোরে বেডে থাকতে হলেও রোগিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা একটি সিন্ডিকেট। তবে ফ্লোরে থাকলে টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নাই। এসব বিষয়ে অবগত নাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মহেশখালী থাকা আসা রোগির মেয়ে শাহনাজ পারভীন বলেন, সদর হাসপাতালে আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেবিন রুম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তবে রোগির কোন সমস্যা হলে ডাক্তার ও নার্সদের ডাকতে ডাকতে হয়রান হয়ে গেলেও তাক্ষনিক সেবা পাওয়া যায়না। তিনি আরও আন্তরিক হওয়ার আহবান জানান নার্স কর্তব্যরত চিকিৎসকদের।
জানাগেছে,২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে নতুনভাবে সাজানো হয় চিকিৎসা সেবার ধরন ও হাসপাতালের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। কিন্তু এতকিছুর পরও দুর্ভোগ কমেনি রোগীদের। কারণ বেড সংকট, লোডশেটিংসহ নানান কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগী ও তার স্বজনদের। আগের মত কমিশন বাণিজ্য বন্ধ হলেও কমেনি দালালদের দৌরাত্ম্য।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৯৯৭ সালে কক্সবাজার জেলার সদর হাসপাতালটিকে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২৫ বছর পার হলেও বাড়তি অবকাঠামোর কোন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। মঞ্জুরী পদ অনুযায়ী যেখানে কর্মরত থাকার কথা ৬৯৪ জন চিকিৎসকের।
যেখানে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদে ১০ জনের ৬টি পদই শূন্য, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১১ পদের মধ্যে আছে ১০ জন চিকিৎসক, মেডিকেল অফিসার ৪৫ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন ৩৯ জন, নার্স ৫৪৭ জনের মধ্যে ১১৬ জনের পদ শূন্য, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ৫৭ জনের মধ্যে পদ শূন্য ৩৬ এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ২৪ জনের মধ্যে ৯টি পদ খালি। চক্ষু, সার্জারি, হৃদরোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও আছে নেই এ রকম। এছাড়াও সংকট রয়েছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরও।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও বলছে, রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় ও মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও চিকিৎসকের শূন্য পদগুলোতে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো বক্তব্য নিতে চাইলে ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভাব হয়নি।
কক্সবাজার জেলার অর্ধকোটি মানুষের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতাল। জেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এ হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা হয়। যা পরবর্তী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে স্বীকৃতি দেয়া হয়। সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যা উন্নীত করা হলেও ১৫০ শয্যা হাসপাতালেরও জনবল নেই। এতে সেবাদানে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।
হাসপাতালে আবার অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এত বিশাল জেলা ও বড় হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও চোখের চিকিৎসা হয়না। চক্ষু বিভাগের সমস্ত যন্ত্রাংশ থাকার পরেও কোন চিকিৎসক কর্মচারী না থাকায় চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
রোগী ও স্বজনরা জানান, হাসপাতালের ৪র্থ তলা মহিলা ওয়ার্ডে সারা বছরই রোগীদের ভিড় থাকে। এতে চরম দুর্ভোগে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় এক বেডে ২ মহিলাকে চিকিৎসা দিতে হয়। আবার বিছানা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝে-বারান্দায় থাকতে হয়। ফলে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের।
error: Content is protected !!