হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » বাঘায় নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে কলেজের অধ্যক্ষ ও সভাপতির বিরুদ্ধে 

বাঘায় নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে কলেজের অধ্যক্ষ ও সভাপতির বিরুদ্ধে 

নিজস্ব প্রতিনিধি : গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে আয়োজিত জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৩ উপলক্ষে আলোচনা সভায় বাউসা মহাবিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য নিয়ে  বক্তব্য দিয়ে ফের আলোচনায় এসেছেন  চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ তুফান।
এর আগে তিনি নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করা সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে বার বার আলোচনায় এসেছেন। সম্প্রতি বাউসা মহাবিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য নিয়ে চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ তুফানের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিওটির দেখা মিলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ভিডিও বক্তব্যে বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ তুফান বলেন, একজন প্রিন্সিপাল রাতের অন্ধকারে এলাকার লোকজনের সাথে প্রতারণা করে পরিচালনা কমিটির সকল সদস্যদের না জানিয়ে ৫০ লক্ষ্য টাকার বিনিময়ে ৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন।
তাহলে এলাকাবাসী প্রতিষ্ঠানটিকে কি সহযোগিতা করবে? এছাড়াও তিনি হারুন অর রশিদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে সদ্য নিয়োগ প্রাপ্তদের কাছে বানিজ্য করা হয়েছে উল্লেখ করে বক্তব্য দেন।
চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যে পূরো এলাকা জুড়ে বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন চায়ের দোকান ও মোড়ে মোড়ে একাধিক লোকজন একত্র হলেই যেন একটাই আলোচনার বিষয় বাউসা মহাবিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য। শুধু আলোচনাতেই শেষ নয় এ বিষয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ফাহিম মুন্তাসীর (প্রান্ত) নামের এক ছাত্র বাঘা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়,বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের প্রানকেন্দ্রে এ মহাবিদ্যালয়টি অবস্থীত। অভিযোগ পত্রে নিয়োগ সংক্রান্ত দূর্নীতি বিষয়ে অভিযোগের প্রসঙ্গে বলা হয়, গত কয়েকদিন পূর্বে অত্যন্ত গোপনে বাউসা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ, ল্যাব সহকারী ২টি, অফিস সহায়ক ও নিরাপত্তাকর্মী সহ ৪টি পদে ৫ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া অর্থের বিনিময়ে সম্পন্ন করা হয় বলে জানতে পারা যায়। বিষয়টি এলাকার জনমনে কলেজের প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ,স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে সময়ে বাউসা মহাবিদ্যালয়ে ৫ টি পদে নিয়োগ দেয়া হবে এটি বাউসার জনগণ জানতে পারল না, বুঝতে পারলো না। বিষটি শুধু অর্থের বিনেময়ে হয়েছে। অভিযোগ পত্রে কলেজ টির সার্বিক উন্নতি ও এলাকার শাস্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করা হয়।
অভিযোগকারী (ছাত্র) ফাহিম মুন্তাসির প্রান্ত দাবি করে বলেন, আমাদের কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজেই নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেছেন। আর ৫০ লক্ষ্য টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষ ও সভাপতি এই নিয়োগ বাণিজ্যের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। আমার জানামতে এই কলেজে কোন ল্যাব নেই তারপরও ল্যাব সহকারী পদে দুইজন কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিয়োগ বঞ্চিত কয়েকজন প্রার্থী বলেন, অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম নান্টু ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল আলম বাবু মিলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগে অধ্যক্ষ ও সভাপতি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার বাণিজ্য করেছেন বলে দাবি তাদের৷ এছাড়াও খুব গোপনে চতুরতার সাথে বিশাল এ নিয়োগ বানিজ্য করেছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
বাউসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই নির্বাচন কে সামনে রেখে অধ্যক্ষ ও সভাপতির এমন নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়টি নিয়ে জনগণের মনে ব্যপক ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে, এতে করে জাতীয় নির্বাচনে এর বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাউসা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম নান্টু বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়োগ হয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় ২টি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। ৪টি পদে মোট ১৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বী চাকরি প্রার্থী রাজশাহী সিটি কলেজে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। এখানে টাকার কোন বানিজ্যের ঘটনা নই।আর আমি এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ পাবো এটা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সহ বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আগে থেকেই জানে।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল আলম বাবু মুঠোফোনে বলেন, স্বচ্ছভাবে প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়টি মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন।
নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব বিমল মিত্র মুঠোফোনে জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব করা হয়েছিল। আমি কিছু কাগজপত্রে সই-সাক্ষর করেছি মাত্র।
বাঘা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ,ফ,ম হাসান বলেন, বাউসা মহাবিদ্যালয়ের নিয়োগ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে এ নিয়োগ বিষয়ে আমার কোন কিছু জানি নাই।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আখতার বলেন, এ নিয়োগের ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।
নিয়োগ বানিজ্য সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়া চেয়ারম্যান ও বাউসা মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ তুফান কিসের ভিত্তিতে এমন বক্তব্য দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, নিয়োগ বঞ্চিতরা এবং অভিভাবক সদস্য সহ সচেতন এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে বিষয়টির সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে বাউসা মহাবিদ্যালয়ের এ অবৈধ নিয়োগ বাতিল করে বৈধ নিয়মে নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার দাবি জানিয়েছেন।
error: Content is protected !!