হোম » সারাদেশ » তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলেও বেঁচে যাচ্ছেন সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম!

তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলেও বেঁচে যাচ্ছেন সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম!

হুময়ুন কবির সুমন, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র আলোচিত সমালোচিত নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপকর্মের তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলেও তাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন খোদ পাবনা অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নবিউল ইসলাম।

ফলে সফিকুল ইসলাম এখনও নিজ দপ্তরে বহাল তবিয়তে থেকে আগের মতই অপকর্ম করে চলেছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত সম্পন্ন হলেও রহস্যজনকভাবে আলোর মুুখ দেখছে না একটিও। সরকারি চাকুরীর বিধিমালা অনুযায়ী তদন্ত শেষে বিভাগীয় শাস্তিমুলক ব্যবস্থা বা বদলীর কার্যক্রমও যেন তার ক্ষেত্রে আটকে রয়েছে শুধুমাত্র তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কারণেই। তদন্তের গড়িমসিতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীর শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনে নিজ দপ্তরের মন্ত্রীর আদেশও যেন উপেক্ষিত হয়েছে।

জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের তালম-বারুহাস ইউনিয়নের ভদ্রাবাতি (উত্তর-দক্ষিন) খাল পুর্নখননে সরকারি বরাদ্দের তিন কোটি টাকা লোপাট ও উর্ধ্বতনের ‘প্রত্যায়ন সনদ’ ছাড়া ঠিকাদারদের প্রায় ৩০ কোটি টাকা ‘চুড়ান্ত বিল’ প্রদানে নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুলের বিরুদ্ধে তিনটিপৃথক তদন্ত হয়। এলজিআরডি মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে দু’টি তদন্তের আদেশ দেন পূর্ববর্তী প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মহসিন। এলজিইডির পাবনা আঞ্চলিক অফিসের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাবিউল ইসলাম ও তারই অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম অভিযোগ দু’টি তদন্ত করছেন। দু’টি তদন্তে নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম দোষী প্রমানিত হয়েছেন।

এদিকে, নিম্ন মানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে ‘কম পুরত্বের’ ও ‘কম স্থায়িত্বের’ তাড়াশ-বারুহাস-কুন্দইল রাস্তা সংস্কার ও মেরামত কাজের অনিয়ম-দুর্নীতির খোঁজেও পৃথক তদন্ত করছেন পাবনা তত্বাবধায়ক দপ্তরের প্রকৌশলীগন। গত মাসেই তদন্ত তিনটিও শেষ হয়েছে। তারপরেও তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গত প্রায় এক মাস থেকে নিজেই প্রতিবেদন কৌশলে আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে,ভদ্রাবাতি (উত্তর-দক্ষিন) খাল পুর্নখননে নয়ছয় ও অর্থ লোপাটের ঘটনায় এলজিইডির টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেড় মাস আগে থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুলের বিরুদ্ধে চতুর্থ তদন্ত সম্পন্ন হয়।

প্রধান প্রকৌশলীর নির্দেশে প্রকল্পের পিডি আবু সালেহ দক্ষ প্রকৌশলী ও পরামর্শক দিয়ে ওই তদন্ত করান। সেটিও তদন্ত প্রতিবেদনও পেশ করা হয়নি। সিরাজগঞ্জে তাড়াশে ও কামারখন্দে এলজিইডির খাল খনন ও ‘প্রত্যায়ন সনদ’ ছাড়া ঠিকাদারদের চুড়ান্ত বিল দেয়াসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশ হয়। নিজ দপ্তরের মন্ত্রী-সচিব ও প্রধান প্রকৌশলীসহ উর্ধ্বতনগন গণমাধ্যমে ওইসব সংবাদ দেখে নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ৪টি তদন্তের আদেশ দেন।

এদিকে, সংসদ নির্বাচনের আগে সিরাজগঞ্জে এলজিইডির বাস্তবায়িত প্রকল্পের টার্গেট অর্ধেকই পূরণ হয়নি। টার্গেট পুরণের আগে ঠিকাদারদের সাথে ‘ঘুষ বানিজ্য’র বনিবনা না হওয়ায় গত জুনে জিওবি তহবিলের প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ফেরত যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই নির্বাহী প্রকৌশলীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে মন্ত্রীর কাছে  অভিযোগ দেন। এরপরও নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজগঞ্জে বহাল।

তদন্ত কর্মকর্তা ও পাবনা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তাড়াশের ভদ্রাবাতি (উত্তর-দক্ষিন) খাল যেনতেনভাবে নকশ ছাড়া বিধি বর্হিভুতভাবে খনন করা হয়। মৃত ও প্রবাসে থাকা লোকজনকে শ্রমিক দেখিয়ে খননের বিল পরিশোধে ভুয়া মাষ্টাররোলে সাড়ে ৩৬ লাখ সরকারি টাকা লোপাট করা হয়। নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম, সহ:প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী তারেক আজিজসহ আয়-ব্যায়-হিসেব-পরিমাপ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লোপাটের সাথে জড়িত।

তিনি আরো জানান, ‘তাড়াশ-বারুহাস-কুন্দইল রাস্তা সংস্কার কাজে ‘কম পুরত্বের’ ও ‘কম স্থায়িত্বের’ নিম্নমানের কাজ করা হয়। সরকারি প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা যেনতনভাবে খরচ করায় অর্থ অপচয় তদন্তে প্রমানিত হয়েছে। উত্তর-দক্ষিন ভদ্রাবতি খাল এবং  ‘তাড়াশ-বারুহাস-কুন্দইল’ রাস্তার অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত গত এক মাস আগে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর নিকট জমা দেয়া হয়েছে।’

পাবনার তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নবিউল ইসলাম তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামের প্রত্যক্ষ্য ও পরোক্ষ্য নির্দেশে তাড়াশ, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ ও কাজিপুরের অন্তত ডজন খানেক প্রকৌশলী ও কর্মচারীগন বুঝে-নাবুঝে ফাঁদে পা দিয়েছেন বা নিজেদের অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন।

এ মুহর্তে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে শুধু সফিকুল নয় বরং নিরপরাধ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় মামলা হতে পারে। এমনকি, চাকরীও চলে যেতে পারে। তখন বিষয়টি খুবই অমানবিক হতে পারে। পূর্ববর্তী প্রধান প্রকৌশলী মহোদয়কে বিষয়টি যেমন জানিয়েছি, আগামীতে নতুন প্রধান প্রকৌশলীর সাথে বিষয়টি আলোচনা করবো। এরপর অবশ্যই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবো।

error: Content is protected !!