হোম » সারাদেশ » সোনাইমুড়ীত জাহানারা হাসপাতালে অপচিকিৎসা-অনিয়ম,  জরিমানা লাখ টাকা

সোনাইমুড়ীত জাহানারা হাসপাতালে অপচিকিৎসা-অনিয়ম,  জরিমানা লাখ টাকা

মোহাম্মদ হানিফ নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালী সোনাইমুড়ী চৌরাস্তার জাহানারা হাসপাতালে স্বামী-স্ত্রী মিলে দেখছেন রোগী। নিজেরাই চালাচ্ছেন এক্স-রে বিভাগ, গাইনী, অবস, আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন। করছেন সিজার, নরমাল ডেলিভারী ও অন্যান্য অপারেশন। বিভিন্ন সময় অপচিকিৎসার অভিযোগও উঠেছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। গত শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) অপচিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপরদিকে সিজার পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত শিশুর মা বিউটি আক্তারের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
স্থানীয়রা জানায়, জাহানারা হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ এটাই প্রথম নয়। এর আগেও হাসপাতালটির মালিক ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী সালমা আক্তার প্রায় সময় অপারেশন করতে গিয়ে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটিয়েছে।
তথ্য বলছে একটি দশ শয্যার হাসপাতাল বা ক্লিনিকের লাইসেন্স দেয়া হয় এক বছরের জন্য৷ প্রতি বছর লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়৷ এই হাসপাতালের লাইসেন্স পেতে কমপক্ষে চার জন এমবিবিএস ডাক্তার, ছয় জন নার্স ও দুইজন ক্লিনার থাকতে হবে৷ প্রত্যেকটি বেডের জন্য ৮০ বর্গফুট জায়গা থাকতে হবে৷ অপারেশন থিয়েটার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হতে হবে৷ এরসঙ্গে ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন নাম্বার, বিআইএন নাম্বার, পরিবেশ এবং নারকোটিকস-এর লাইসেন্স থাকতে হবে৷
তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাহানারা হাসপাতালে ১০ বেডের অনুমোদন থাকলেও সেখানে ১৩টি রুমে রয়েছে ২৭ টি বেড। হাসপাতালে চার জন এমবিবিএস ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও তারা স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলেই দিচ্ছেন সর্বরোগের চিকিৎসা। ১০ বেডের ক্লিনিকে ছয়জন ডিপ্লোমা নার্স থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র দু’জন। প্রত্যেকটি বেডের জন্য ৮০ বর্গফুট জায়গার কথা থাকলেও তা নেই হাসপাতালটিতে। ছোট ছোট বদ্ধ রুমের মধ্যে রয়েছে দুটি করে বেড, নেই আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা। হাসপাতালে নেই অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান। কোন রকমে করা হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এসব এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাফিসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ফি।
মারা যাওয়া নবজাতকের বাবা মোহাম্মদ কামাল হোসেন অভিযোগ করে জানান, উপজেলার মিয়াপুর গ্রামে তার স্ত্রী ডিউটি আক্তারের প্রসব বেদনা উঠলে শনিবার সকাল ৮টার দিকে পৌর এলাকার জাহানারা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এই হাসপাতালের ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী সালমা আক্তার যেনতেন ভাবে সিজার করেন। সিজার হলেও তার নবজাতকটি মারা যায়। পরে তার স্ত্রীর ৪ ব্যাগ রক্ত লাগে। রক্ত দেওয়ার পরেও অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে যায়।
নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় সোনাইমুড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) সকালে হাসপাতালটি পরিদর্শন করেন। এসময় দায়িত্ব অবহেলা, ভুল চিকিৎসা, হাসপাতাল পরিচালনায় অনিয়ম, অপর্যাপ্ত চিকিৎসক-নার্স সহ নানা অপরাধের সত্যতা পেয়ে হাসপাতালের মালিক ডা: জাহাঙ্গীর আলমকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সাথে এক্স-রে মেশিনের অভিজ্ঞ অপারেটর না থাকায় এক্স-রে রুম সিলগালা করা হয়।
সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ইশরাত জাহান হাসপাতালটিতে অভিযান শেষে প্রতিবেদককে জানান, ভুক্তভোগী নারীর আগে দুইবার সিজার হয়েছিলো। এমন রোগীদের কোন ভাবেই নরমাল ডেলিভারি করা যাবে না এটা দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এই হাসপাতাল কতৃপক্ষ রোগীকে নরমাল ডেলিভারীর করার কথা বলে রেখেছে। পরবর্তীতে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, রোগীর সম্ভবত জরায়ু ছিড়ে যায়। তখন ওনারা কোনরকম গাইনী বিশেষজ্ঞ ছাড়াই ওটিতে ওপেন করে, স্বামী-স্ত্রী মিলে অপারেশন করে। সিজারের পরে বাচ্চাটা মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, “বাচ্চাটা যে মারা গেছে এমন কোন প্রমানও তারা রাখেননি। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে তারা বিষয়টি ওটি রেজিস্ট্রার বুকে এন্ট্রিও করেননি। ব্যাপারটা ধামা চাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া আজ সকাল সাড়ে দশটায় ভিজিট করতে এসে একজনও চিকিৎসককে পাইনি। ছয় জন নার্স থাকার কথা থাকলেও পেয়েছি মাত্র একজনকে।”
অভিযান ও জরিমানার বিষয়ে সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, এখানে বিশেষজ্ঞ ছাড়াই ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম নিজেই অপারেশন করেন। এছাড়া রেডিওলজিস্ট ছাড়াই এক্স-রে মেশিন অপারেট করা হয়। এসব কারণে আমরা তাকে একলক্ষ টাকা জরিমানা করেছি এবং সংশোধনের সুযোগ দিয়েছি
error: Content is protected !!