এমদাদুল ইসলামঃ ‘কুইজ্জা’ হলো আমাদের গ্রাম বাংলার একটা শাশ্বত প্রতিচ্ছবি। এটার একেক জায়গায় একেক নাম- যেমন কোথাও ‘খড়ের গাদা’, কোথাও ‘পোয়ালের পুঞ্জ’ বা ‘পালা’, কোথাও ‘কুডার মেই’ বা ‘পালা’, কোথাও ‘খ্যাড়ের পালা’, কোথাও ‘পোয়াল পালা’, কোথাও খেরের চিন’ ইত্যাদি। ছোটকালে দেখেছি- যাদের যতটা কুইজ্জা, তারা গ্রামের ততটা অবস্থাসম্পন্ন মানুষ বা বড়লোক। শৈশব কালে আমরা সমবয়সী ও ভাই- বোনদের অনেক ধরনের খেলাধুলাও ছিল এসব কুইজ্জা কেন্দ্রিক- যেমন লুকোচুরি খেলা, কুইজ্জার উপরে ওঠে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়া ইত্যাদি। সেই যুগে গ্রামগঞ্জে বিয়ে-শাদীর আগে বর বা কন্যার বাড়ীর কুইজ্জা’র সাইজ ও পরিমাণ দেখেই ধারনা করা হতো- এটি কেমন পরিবার!!
ধান কাটার পর এর শুকনো গাছ থেকে খড়ের গাদা পর্যায়ক্রমে স্তুপি করে কুইজ্জা বানানো হয় এবং এটি মুলত গরুর খাওয়ার হিসেবে প্রসিদ্ধ। এখনো এটি গরুর প্রধান খাবার হলেও আগের মতো কিন্তু এখন গ্রাম বাংলার সর্বত্র তেমন কুইজ্জা দেখা যায়না। এই খড় দিয়ে গ্রাম বাংলার অনেক কর্মজীবি মানুষরা তাদের ঘরও বানায়। আবার পারস্পরিক শক্রুতার জের ধরে কুইজ্জায় আগুন দিয়ে অনেককে সর্বনাশ হতেও দেখেছি! স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাতে যখন মুক্তিযোদ্ধারা সার্চ বা আক্রমণ করতো, তখন অনেককে ভয়ে এসব খড়ের গাদার ভেতরে লুকিয়ে থাকতেও দেখেছি। কুইজ্জা নিয়ে এধরনের আরো অনেক স্মৃতি ও গল্প রয়েছে।
তবে বর্তমানে খড় একটা মূল্যবান বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এখন এক গাদা খড়ের দামও অনেক। উন্নত প্রযুক্তিতে এখন খড় অনেক কিছুতেই ব্যবহ্নত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করলে বিদেশেও কুইজ্জা বানিয়ে/প্রদর্শন করে দেশের আয়-রোজগার বাড়াতে পারি! সুতরাং দৃশ্যত খড় বা কুইজ্জা এখন আড়ালে চলে গেলেও এর কিন্তু ভাল সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন
মুসলিমদের ঐক্য ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা কমাতে পারে: প্রধানমন্ত্রী
বগুড়া গাবতলীতে প্রিসাইডিং অফিসারসহ গ্রেফতার দুই
ভৈরবে আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত শতাধিক