হোম » সারাদেশ » বগুড়ার ধুনটে যেন হয়ে উঠেছে শিশু ধর্ষণের নগরী, হুমকির মুখে সভ্যতা

বগুড়ার ধুনটে যেন হয়ে উঠেছে শিশু ধর্ষণের নগরী, হুমকির মুখে সভ্যতা

এম এ রাশেদ: কন্যা শিশু মানেই মনে হয় একটুকরো মাংসপিণ্ড কিংবা নর পশুদের নৈশভোজের তৃপ্তির ঢেঁকুর! নারী বুঝি মানুষ নয়, বিধাতা কর্তৃক এক অভিশাপ? তাই তো কখনো গলাকাটা, রশিতে ঝোলা, অথবা বস্তাবন্দি ছিন্ন ভিন্ন লাশের নাম কন্যা শিশু! সভ্যতা এগিয়ে চলছে, বর্বরতায় পিছিয়ে নেই জাতি! সমাজের প্রতিটি পদে পদে বাঁচার আকুতি আর বুকফাটা আহাজারিতে বেড়ে উঠছে জুঁই চামেলি শাপলা নামক এক একটি ফুল। কখনো এদের ঠাঁই হচ্ছে পতিতালয়ে, কখনো বা মর্গের লাশ ঘরে। এরা কি কখনোই মানুষ হিসেবে পরিচয় পাবেনা? না কি বাসি পোড়া এঁটো খাবারে নিজেদের নারীত্বের প্রমাণ দেবে? বলো পুরুষ বলো, বলো বাংলাদেশ ?

নারীদের মহত্ত্ব প্রমাণে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন ”বিশ্বে যাহা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”! পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। অনুরূপ শিশুর মাঝে যিশুর প্রতিচ্ছবি দেখেছেন খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীগন! সব চিন্তা দর্শনকে ম্লান করে দিচ্ছে নরপশুর দল, যাদের যৌন লালসার শিকার কন্যা শিশুরা ! আর কত চলবে এই মধ্যযুগীও বর্বরতা, এর কি শেষ দেখবেনা বাংলাদেশ? কখনো বরই কুড়াতে গিয়ে পাঁচ বছরের কন্যা শিশু নর পশুদের হিংস্র থাবায় রক্তাক্ত, কখনো বৃদ্ধ নানা দাদার লালসার শিকার ফুটফুটে রাজকন্যা। প্রকাশ হয়নি এমন হাজারো ধর্ষণের গল্প নিরবে নিভৃতে কাঁদছে বিচারের কাঠগড়ায়।

গত কদিনে ধুনট উপজেলা হয়ে উঠেছে ধারাবাহিক শিশু ধর্ষণের শিরোনাম! যেখানে দেখাগেছে ৫ই ফেব্রুয়ারি ধুনট উপজেলার জোড় শিমুল গ্রামে ৫ বছরের কন্যা শিশুকে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত নজরুল ইসলামের ছেলে মোঃ রহিম মিয়া শান্ত। যিনি ববুই দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ৫ বছরের শিশুকে নিজ বাড়ির পাকা ঘরে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। শিশুটি কান্নাসহ চিৎকার শুরু করলে ধর্ষক পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে অসুস্থ ধর্ষিতা শিশুকে চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় ধর্ষিতার পরিবার। বর্তমানে শিশুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ৬ই ফেব্রুয়ারী ধর্ষক রহিম মিয়া ওরফে শান্ত’র বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের আওতায় ধর্ষণ মামলা রুজু করে ধুনট থানা পুলিশ।

এখানেই শেষ নয় গত ৮ই ফেব্রুয়ারি আরেকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ধুনট উপজেলায়, যেখানে লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে তৃতীয় শ্রেনীর এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষক ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের আফসার আলীর ছেলে আব্দুস সামাদ। বিষয়টি স্থানীয় ভাবে ধামাচাপা দিতে না পারায় গত ৯ই ফেব্রুয়ারী রাতে শেরপুর পৌর এলাকা থেকে ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ,বিষয়টি নারী শিশু মামলায় রেকর্ড ভুক্ত হয়। সেই ঘটনায় ধর্ষিতা শিশুটি বগুড়া (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

গত ১২ফেব্রয়ারি ধুনটের মাত্র ৪ বছর বয়সী প্রথম শ্রেনী পড়ুয়া শিক্ষার্থী নানীর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে শাহজাহান আলী (৬৪) নামক এক প্রতিবেশী নানা কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন। ঘটনাটি ঘটে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের চরকাদহ গ্রামে। পরবর্তীতে ধর্ষিতা শিশুটির আত্মচিৎকারে স্বজনেরা এগিয়ে এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে। শিশুর শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে ১৩ই ফেব্রুয়ারী সোমবার সকালে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। ভর্তির কয়েক ঘন্টা পর উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার সাথে জড়িত কথিত নানা শাহজাহান আলী পলাতক রয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

পরপর এতগুলো ঘটনা আমাদের সভ্য সমাজের সকল অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে? যেখানে আমাদের শিশুরা নিরাপদ নয়! আদৌও কি আমরা আমাদের শিশুদের জন্য নিরাপদ পৃথিবী উপহার দিতে পেরেছি? নাকি কন্যা শিশুদের ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত দেহ বয়ে বেড়াবো চিরকাল? ধর্ষকের কি সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবেনা? না কি আইনের ফাঁক ফোঁকরে বেরিয়ে যাবে এরা চিরকাল?  এ লজ্জা আমাদের, এ লজ্জা সমগ্র বাংলাদেশের! এ দায় সভ্যতার, এ দায় পুরো জাতির!

error: Content is protected !!