হোম » সারাদেশ » যশোরের মনিরামপুরে কৃষকের মুখে হাসি ফুটলো লিচুর বাম্পার ফলনে।   

যশোরের মনিরামপুরে কৃষকের মুখে হাসি ফুটলো লিচুর বাম্পার ফলনে।   

দেবব্রত মন্ডল, মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধিঃ যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে এ বছর লিচুর বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষি ও বাগান মহাজনদের মুখে স্বস্তির হাসি ফুটেছে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রায় লাখ লাখ টাকার লিচু বেচা- কেনা হচ্ছে। এখানকার লিচু মিষ্টি  রসালো ও সু-স্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এর বেশ কদরও রয়েছে। দেশের অন্যান্য জায়গায় এপ্রিল মাসের মধ্যবর্তী সময়ে লিচুর ফলন হলেও মনিরামপুর  উপজেলায় মে মাসের প্রথম দিকে লিচু বাজারে আসে।
লিচু চাষীরা জানায়, উপজেলার বড় বড় বাজার গুলো এখন লিচুতে পরিপূর্ণ প্রতিনিয়ত এই বাজার গুলোতে প্রায় লাখ টাকার লিচু বেচা-কেনা হয়। প্রতিদিন গভীর রাতে চাষিরা ও বাগানের মহাজনেরা লিচু নিয়ে বাজারে বেরিয়ে যায়। ভোররাত থেকে শুরু হয়ে সকাল আটটা থেকে নয়টার মধ্যেই বেচা-কেনা শেষ হয়ে যায় উপজেলার প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতে কমপক্ষে একটি করে লিচু গাছ আছে। যাদের বাড়িতেই একটু জায়গা আছে, তারা প্রত্যেকেই বাড়িতে লিচু গাছ লাগান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক আগে থেকেই মনিরামপুর উপজেলায় লিচুর কেনা-বেচা শুরু হয়। কম শ্রমে বেশি লাভ হয় বলে ধানি জমিগুলোকেও লিচু বাগানে রূপান্তর করেছে চাষীরা। গাছে মুকুল আসার আগে ও গুটি আসার পরে গাছগুলো বিক্রি হয়। লিচু ছোট আকার ধারণ করলে তৃতীয় দফায় বিক্রি হয়। লিচু বড় আকার ধারণ করলে চতুর্থ দফায় বিক্রি হয়। তবে সব চাষিরা গাছ বিক্রি করেন।  মঙ্গলবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন বাজার গুলোতে গিয়ে দেখা যায় গভীর রাত হলেও বাজারে চাষীদের ভীড় ছিল। সময় বাড়ার সাথে সাথে লিচু চাষিদের আগমনও বাড়তে থাকে। চাষিদের কেউ কেউ কাঁধে বোঝাই করে আবার কেউ কেউ মাথায় করে লিচু নিয়ে বাজারে আসছেন। বাজারে প্রতি হাজার দেশী লিচু এক হাজার পাচঁশত টাকা থেকে দুই হাজার দুইশ টাকা, প্রতি হাজার এলাচি ও চায়না লিচু দুই হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকা, পাটনাই ও বোম্বাই লিচু দুই হাজার ছয়শত থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শ্যামকুড় ইউনিয়নের লিচু চাষি আব্দুল কাদের বলেন, তার একটি বাগানে ৪০-৫০ টি লিচু গাছ রয়েছে এ পর্যন্ত তিনি ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লিচু বিক্রি করেছেন।একই গ্রামের ফারুক হোসেন, রাজ্জাক ও মোসলেম মোল্লাসহ একাধিক লিচু চাষীরা জানায়, তাদের প্রত্যেকেই এ পর্যন্ত লিচু বিক্রিতে লাভ ছাড়া ক্ষতি গুনতে হয়নি। লিচুর বাম্পার ফলন ও বিক্রিতে তারা সন্তুষ্ট কিন্তু প্রথমদিকে রমজান মাস হওয়ায় দামটা একটু কম ছিলো তবে ঈদের পর এখন আবার বাজার ভালো দামও বেশি তারা আরও জানান, বাগানে যে পরিমান লিচু আছে তাতে আরও ২০-২৫ দিন বাজারে আসতে পারবেন তারা। এলাকার যারা ছোট ব্যাবসায়ী আছে তারা আমাদের কাছ থেকে কম দামে কিনে বড় ব্যাবসায়ীদের লিচু কিনে দেওয়ার ফলে বড় ব্যবসায়ীরা বাজারে না যেয়েই লিচু কিনতে পারছে তাই আগের মত লিচু চাষীদের ভাল দাম পাওয়া যায় না যেমন গতবছর যে ১০০ লিচু বিত্রিু করেছি ২৫০ টাকা আর এবার সেই লিচু বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায় শুধু এলাকার দালালদের জন্য । পুলিশ প্রশাসন যদি একটু তদারকি করতো তাহলে কৃষকরা দালালদের হাত থেকে রক্ষা পেত আর ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে লিচু সরাসরি কিনতে পারত।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, মনিরামপুরে এবার গত বছরের তুলনায় বেঁশি জমিতে লিচুর ফলন হয়েছে। বিগত বছরে নতুন বাগান গুলোতে ব্যাপক হারে পরিচর্যার ফলে এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবছর লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমের শীলা বৃষ্টিতে লিচু ফেটে গিয়ে ক্ষতিও হয়েছে অনেক গোলাপি লিচুর বেচাকেনা চলছে গোলাপি লিচুর ১৫ দিন পরেই পাকতে শুরু করবে বোম্বাই, চায়না-২ এবং বেদানা জাতের লিচু এসব লিচুতে দাম ভালো পেলে ক্ষতি না হয়ে বরং লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করছেন এখানকার বাগানি ও ব্যাবসায়ীরা।

Loading

error: Content is protected !!