হোম » সারাদেশ » লালমনিরহাটে ভিক্ষুক পূর্ণবাসনের গরু ও নগদ অর্থ বিতরণে হরিলুটের অভিযোগ

লালমনিরহাটে ভিক্ষুক পূর্ণবাসনের গরু ও নগদ অর্থ বিতরণে হরিলুটের অভিযোগ

মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ: ভিক্ষুক মুক্ত লালমনিরহাট জেলা করতে সরকারি ও বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টাফদের একদিনের বেতন কর্তন করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে। এতোদিন পরে সেই ভিক্ষুকদের পূর্ণবাসনে সুযোগ ঘটলেও সেখানেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। জানা যায়, মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে ভেলাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গণে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নে ৬৬জন ভিক্ষুকে পূর্ণবাসনের জন্য গরুর বাছুর ও নগদ অর্থ আনুষ্ঠানিক ভাবে বিতরণ করা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি জন ভিক্ষুককে পূর্ণবাসনে ৩০হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই বরাদ্দের টাকা হতে একটি গরুর বাছুর, নগদ ৪হাজার টাকা, ২৫কেজি চাল, ডাল, আলু ও গো খাদ্য দেয়া হয়েছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন, জেলার প্রতিটি সরকারি, বে-সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারির এক দিনের বেতনের টাকা ভিক্ষুক পূর্ণবাসনে দান করেছে। তা দিয়ে তহবিল গঠন করে পুরো লালমনিরহাট জেলায় ভিক্ষুক পূর্নবাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি উপজেলার দুইটি করে ইউনিয়ন ভিক্ষুক মুক্ত করা হবে।
ভিক্ষুক পূর্ণবাসনে গরুর বাছুর বিতরণ ও নগদ অর্থ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর। এ সময় আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস ফারুক, ভেলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, আদিতমারী উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ রওশন আলী, আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এই গরুর বাছুর বিতরণে ব্যাপক অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে, সকালে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক গিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি না থাকায় ফিরে আসে। পরে দুপুরে পূনরায় যায়। ৬৬জনের মধ্যে ৪৭জনকে গরু ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়। বাকি ১৭জন রহস্যজনক কারণে উপস্থিত নেই। ৬৬জনকে ৬৬টি গরু বিতরণ করার কথা অথচ সেখানে ৩৩টি গরু মাঠে দেখা যায়। প্রথমে ৩৩টি গরু বিতরণ করার পরে পূনরায় প্রায় এক ঘন্টা পর বাকি ৩৩টি গরু মাঠে আনা হয়। সেখানে অভিযোগ উঠেছে, প্রথমে বিতরণকৃত গরুগুলি রাস্তায় ফিরত নিয়ে এসে পূনরায় দ্বিতীয় ধাপে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গরু বিতরণের তালিকায় মৃত মানুষের নাম আছে বলেও জানা যায়।
ভিক্ষুক বৃদ্ধা আইয়ুব আলীর নামে বরাদ্দকৃত গরু ও নগদ অর্থ কে বা কাহারা নিয়ে গেছে। এমন অভিযোগ বৃদ্ধা আইয়ুব আলী উপস্থিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ করেন। ভিক্ষুক নয় এমন কয়েক জনকে ভিক্ষুক পূর্ণবাসনের গরু দেয়ার হয়েছে। ২৫হাজার টাকা মূল্যের গরু বিতরণের কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ৩/৪ মাস বয়সি ছোট ছোট বাছুর। যার মূল্য ১০হতে ১২হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। এভাবে ভিক্ষুক পূর্ণবাসনের অর্থ হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে।
শেষ পর্যন্ত প্রায় ১৭টি গরু ও নগদ অর্থ বিতরণ করার মত কাউকে পাওয়া যায়নি।এ বিষয়ে সমাজ সেবা কর্মকর্তা জানান, বাড়ি বাড়ি দেয়া হবে। অনিয়ম বিষয়ে বলেন, ইউএনও স্যার জানে। ভিক্ষুক পূর্ণবাসনের টাকা হরিলুটের ঘটনায় উপস্থিত সকলে হতবাক। এদিকে জেলা প্রশাসক বলেন, ভিক্ষুক পূর্ণবাসনে জনপ্রতি বরাদ্দ ২৫হাজার টাকা। আবার সমাজ সেবা কর্মকর্তা বলেন, ৩০হাজার টাকা। এ নিয়েও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসক অনুষ্ঠানে নানা অব্যবস্থাপনায় মনক্ষুন্ন হয়ে চলে আসেন।
error: Content is protected !!