হোম » সারাদেশ » ভৈরবে ভূয়া ওয়ারিশ সনদে জায়গা বিক্রির অভিযোগ

ভৈরবে ভূয়া ওয়ারিশ সনদে জায়গা বিক্রির অভিযোগ

এম আর ওয়াসিম, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)  প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভূয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরির মাধ্যমে ওয়ারিশনা মালিক সেজে জায়গা বিক্রির অভিযোগ পাওয়াগেছে।জমির লোভে ওয়ারিশন সনদে সৎদাদীকে বানানো হয় আপন দাদী   একই পৌরসভা থেকে ওয়ারিশনা সনদ পেতে একেক সময় একেক তথ্য দিয়ে ওয়ারিশনা সনদ নেয়া হয়। ভূয়া তথ্য দিয়ে বার বার সনদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ভৈরব পৌর এলাকার জগন্নাথপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মরহুম জবেদ আলীর প্রথম স্ত্রীর নাম ছিলো ফুলফত নেছা (ওরফে কুলফত নেছা) তার নামে ওই এলাকায় এস.এ এবং বি.এস রেকর্ডে মুলে ২৬ শতাংশ জায়গার মালিক। বর্তমানে ফুলফত নেছার পুত্র আব্দুল গফুরের ওয়ারিশগণ মুলত ওই সম্পত্তির অংশীদার। ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর ভৈরব পৌরসভা থেকে ওয়ারিশ সনদ গ্রহণ করেন।
অপরদিকে কুলসুম নেছা ছিলেন মরহুম জবেদ আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী। কুলসুম নেছার পুত্র লাল মিয়া ও আফসর উদ্দিনের ওয়ারিশগণ ২০১৮ সালের ২১ মার্চ পৌরসভা থেকে ওয়ারিশ সনদ গ্রহণ করেন। ওই সনদে লাল মিয়া ও আফসর উদ্দিনের মাতার নাম কুলসুম বেগমই উল্লেখ করা হয়েছিলো। কিন্তু ফুলফত নেছার জমি গ্রাস করার পরিকল্পনায় পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি ভূল তথ্য সম্বলিত একটি জাল ওয়ারিশ সনদ তৈরি করে।
যাহা পৌরসভায় উক্ত জাল ওয়ারিশান সনদের কোন অস্তিত্ব নেই। ওই জাল সনদে লাল মিয়া ও আফসর উদ্দিনের মায়ের নাম কুলসুম বেগমের পরিবর্তে মরহুম জবেদ আলীর প্রথম স্ত্রী ফুলকত নেছা উল্লেখ করা হয়। অথচ ফুলকত নেছার পুত্রের নাম আব্দুল গফুর। ওই জাল ওয়ারিশ সনদে মায়ের নাম পরিবর্তন করে প্রতারণার মাধ্যমে লাল মিয়া ও আফসর উদ্দিনের ওয়ারিশগণ আরিফুর রহমান ওরফে খোকন মাহমুদকে ওই ২৬ শতাংশ জমির পাওয়ার অব এর্টনির মূলে দলিল সম্পাদন করেন।
যাহার নং- ৬৫৬৪/২১। ওই পাওয়ার অব এর্টনির পর জমা খারিজের জন্যও আবেদন করা হয়। পরে ফুলফত নেছার ওয়ারিশগণ জানতে পেরে ভৈরব পৌর ভূমি অফিসে আপত্তি জানালে খোকন মাহমুদের জমা খারিজের আবেদন বাতিল করে দেন। যাহার নং- ৩৯৬৪৭০২।
অন্যদিকে ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর, জমির প্রাপ্য অংশীদার ফুলফত নেছার ওয়ারিশগণের কাছ থেকে ৬৭৭৭/২১ নং দলিলে সাফ কাওলা ২৬ শতাংশ ভুমি মেসার্স আলম  টেডিং ও আবিদ প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং ও পেষটিসাইড, মশার কয়েল প্রস্ততকারক  ও প্রিন্টিং এবং প্যাকেজিং ব্যবসায়ী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক  মো: তোফাজ্জল আলম ক্রয় করেন। ক্রয়মুলে ওই জমির মালিক তোফাজ্জল আলম জমা খারিজের আবেদন করেন।
কিন্তু ভূয়া ওয়ারিশ সনদে ভিত্তিতে অবৈধ পক্রিয়ায় পাওয়ার অব এর্টনি নেয়া খোকন মাহমুদ বৈধ ওয়ারিশগণের কাছ থেকে কেনা জমির মালিককে বাধা প্রদানসহ স্থানীয় কাউন্সিলরের সহযোগীতায় মৃত জবেদ আলীর প্রথম স্ত্রী ফুলফত নেছা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী কুলসুম নেছার নাম একত্রিত করে (ফুলফত নেছা ওরফে কুলসুম নেছা) প্রতারণার আশ্রয় নেয়।
এবং দুই স্ত্রীর নাম একত্রিত করে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভৈরব পৌরসভা থেকে পুনরায় আরেকটি ওয়ারিশান সনদ উত্তোলন করেন কুলসুম নেছার ওয়ারিশগণ। লোভের বশবর্তী হয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া তথ্যেও ভিত্তিতে ওয়ারিশান সনদ উত্তোলন করলেও তাদের বাবার দাফনের সময় ভৈরব পৌর কবরস্থানের রেজিষ্ট্রেশনে মাতার নাম কুলসুম নেছা লিপিবদ্ধ করা হয়। যাহা ভৈরব পৌর মাতৃসদনের রেজিষ্টারে নিবন্ধন নং- ৭২৬৩।
এনিয়ে গত ১৩ জানুয়ারি ২০২২খ্রি. ভৈরব ভূমি অফিসে ওয়ারিশান দুই পক্ষের শুনানি করা হয়েছে। ভুল তথ্যে কয়েক তরফে ভিন্ন ভিন্ন ওয়ারিশান সনদ প্রদান করায় পৌর কর্তৃপক্ষকে জবেদ আলীর প্রথম স্ত্রী কুলফত নেছার সঠিক ওয়ারিশ চিহ্নিত করার জন্য চিঠি দেয়া হয় বলে একটি সূত্রে জানাগেছে।
এদিকে আরো জানা গেছে পৌরসভা থেকে খোকন মাহমুদ ভূয়া কাগজ পত্রের মাধ্যমে অনেক সাধারণ নিরহ মানুষদের ফসলী জমি ও বসত বাড়ি সু-কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে জালিয়াতি করে অবৈধ ভাবে দখল করার পায়তারা করে আসছে।
২০১২ সালে জগন্নাথপুর ৫নং ওয়ার্ডবাসী খোকন মাহমুদ এর বিরুদ্ধে  ভূমি দুস্য হঠাও শ্লোগানে প্রতিবাদ সভা করে। এবং সমাজ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন বলে জানান এলাকাবাসী। তার পর থেকে জগন্নাথপুর এলাকায় ভূমি দুস্য খোকন মাহমুদ কে খোটা মারা খোকন বলে আখ্যায়িত করে। বীগত ২০১৯ সালে লিবিয়া ট্রাজেডিতে নিহত অনেক বাংলাদেশীদের অবৈধ  ভাবে মানব পাচারে সাথে জড়িত যা বর্তমানেও সে অবৈধ আদম ব্যবসায়ী মানব প্রাচারকারী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। মানব পাচারের সাথে জড়িত রয়েছে তদন্ত করলে এর প্রমান মিলবে বলে জানান  এলাকাবাসী।
তাছাড়া কিছুদিন পূর্বে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ভৈরবপুরের বাসিন্দা এক যুবক এর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলো টাকা নিয়ে বিদেশে যথা সময়ে না পাঠাতে পারায় ঐ যুবকের লোকজন খোকন মাহমুদ কে প্রায় দুই ঘন্টা সময় আটকে রাখে। পরে খোকন মাহমুদ এর আত্মীয় স্বজনরা চেক দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আছে। তাছাড়া খোকন মাহমুদ এর বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে  মানব পাচারের অভিযোগে ২০১৯ সালে অনেক পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে।
এদিকে ভৈরব পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর রোজি ইসলাম কুলসুম নেছার নাতি ওয়ারিশ খোকন মিয়া বলেন তার পিতা মরহুম লাল মিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসার কথা বললে খোকন মিয়া মহিলা কাউন্সিলর রোজি ইসলাম ও পৌরসভার মেয়র এর নিকট জাতীয় পরিচয়পত্র উপত্থাপন করেন উক্ত আইডি কার্ডে মরহুম লাল মিয়া ও আফছর উদ্দিন এর মাতার নাম কুলসুম নেছা এবং পৌর মাতৃদনের মৃতুর রেজিস্ট্রার খাতায়ও উল্লেখ রয়েছে মাতার নাম কুলসুম নেছা।
কিন্তু তা স্বত্তেও ফুলফত নেছার ওয়ারিশ সেজে ফুলফত নেছার জায়গা গ্রাস করার চেষ্টা করছে কুলসুম নেছার ওয়ারিশ খোকন গং এবং জগন্নাথপুর এলাকার চিহ্নিত মানব পাচার কারী ও ভূমি দুস আরিফুর রহমান ওরফে খোকন মাহমুদ।  এত প্রমাণ থাকা স্বত্তেও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী ফজলুর মিয়ার বাঁধার মূখে ফলকত নেছার ওরজিনিয়াল ওয়াশিনগণ ওয়ারিশান সনদ পেতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগীদর শেষ ভরসাস্থল ভৈরব পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব ইফতেখার হোসেন বেনু।
এব্যাপারে মোঃ তোফাজ্জল আলম বলেন, তিনি গত ১৭ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে ভৈরব পৌরসভায় সুষ্ঠু সমাধানের আসায় মেয়র মহোদয় এর নিকট গেলে মেয়র আলহাজ্ব ইফতেখার হোসেন বেনু তার সকল অভিযোগ শুণে উপস্থিত ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী ফজলু মিয়া ও ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ড মহিলা কাউন্সিলর রোজি ইসলাম এবং ভৈরব পৌর যুবলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন ইমন এবং ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মানিক মিয়া ও আরো অনেক গণ্যমাণ্য ব্যাক্তিদের সামনে  আস্বস্ত করেন আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে সঠিক ভাবে সমাধানের জন্য  একটি সিদ্ধান্ত দিবেন।
বিগত ২/৩ মাস আগে সাবেক বিচারপতি নুরুল হক ভূইয়ার ভাতিজা কামরুল আমিন গংদের ও হাজী ইউছুফ আলী ও নছব আলী মিয়ার ৬৭ শতাংশ ভূমি ভূয়া পাওয়ার অব এটর্নির বলে অবৈধ ভাবে দখল করে কিন্তু হিস্যা অনুযায়ী ১.৫ শতাংশ ভূমির মালিকানা বৈধ হবে যাহা ভূল বি এস রেকর্ড এর মাধ্যমে দুই
লক্ষাদিক  টাকার গাছগাছালী  ও ফসল নষ্ট করে ভূমি দুস আরিফুর রহমান ওরফে খোকন মাহমুদ।
এবিষয়ে ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফজলু মিয়া জানান, অনেকেই আমার কাছে আসে ওয়ারিশান সনদ নিতে। আমরা তো সবসময় যাচাই-বাছাই করতে পারিনা।  জোবেদ আলীর পরিবারের লোকজন আসলে আমি তাদের দরখাস্তে আমি দস্তখত করি। বেশ কয়েকটি ওয়ারিশান সনদ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বছরে বছরে আসে এগুলো মনে থাকেনা।
আর ফুলকত নেছার পরিবার সম্পর্কে এত বেশিকিছু জানতামনা। আমার জন্মের আগে বিষয়, তাই এলাকার মুরুব্বিদের জিজ্ঞেস করে সঠিক বিষয়টি বের করবো। মেয়র সাহেবকে বলেছি আপাতত স্টপ রাখার জন্য, কারা সঠিক তা বের করে পৌরসভাকে জানাবো। তবে বড় বড় অক্ষরে লেখা সনদটি জালও হতে পারে। কেউ এমনটা করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে খোকন মাহমুদের মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।  পৌর মেয়র আলহাজ্ব ইফতেখার হোসেন বেনু বলেন, ৫নং ওয়ার্ডের জবেদ আলীর পরিবারের ওয়াশিয়ান সনদ নিয়ে একটি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।  ভুমি অফিসের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছি। এবিষয়ে সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি।
error: Content is protected !!