হোম » সারাদেশ » সরিষা মাঠে কীটনাশক প্রয়োগে বিপুল মৌমাছির মৃত্যু বিপাকে মৌ খামারীরা

সরিষা মাঠে কীটনাশক প্রয়োগে বিপুল মৌমাছির মৃত্যু বিপাকে মৌ খামারীরা

রায়হান আলীঃ উল্লাপাড়ায় অসচেতনভাবে সরিষার ফলন বাড়ানোর জন্য মাঠে কীটনাশক ওষুধ ছিটানোর কারণে কোটি কোটি মৌমাছি মরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ মৌ খামারীদের। মৌ খামারীরা বলছেন, ইতোমধ্যে তাদের অন্ততঃ ১০ কোটি মৌমাছি মরে গেছে। ফলে এবছর উল্লাপাড়ায় তাদের মধু আহরণের লক্ষমাত্রা পূরণ হবে না। উপরন্ত খামারীদের লোকসান গুনতে হবে। উল্লাপাড়ায় এবছর ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন সরিষা মাঠে ১১৫ জন খামারী মধু সংগ্রহের জন্য মৌ বাক্স ফেলেছেন। উপজেলা কৃষি দপ্তরের হিসেবে এবছর উল্লাপাড়ায় ১৭০ মেট্টিক টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

উপজেলার আলীগ্রামে আশার আলো নামের একটি মৌ খামারী মধু সংগ্রহের জন্য ৩৫০টি মৌ বাক্স ফেলেছেন। এদের এবার সরিষা থেকে মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯ মেট্টিক টন। এই খামারের মালিক আব্দুর রশিদ অভিযোগ করেন, তিনি সহ অপর পার্শ^বর্তী মৌ খামারীরা যেসব সরিষার জমির পাশে মৌ বাক্স ফেলেছেন সেসব জমির মালিকেরা ফলন বাড়ানোর জন্য প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে জমিতে কীটনাশক ছড়াচ্ছেন। আর এতে কীটনাশক ছড়ানো সরিষার ফুলে মধু সংগ্রহ করতে বসা অন্ততঃ তার ২ কোটি মৌমাছি মারা গেছে। রশিদ জানান, তার এবারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ তো দুরের কথা তিনি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

এলাকার অপর মৌ খামারী সাদ্দাম হোসেন, আফছার আলী, সম্রাট, আব্দুল আহাদ ও গহের আলীর অবস্থা প্রায় একই রকম। এদেরও বিপুল পরিমাণ মৌমাছি কীটনাশকের কারনে মারা গেছে। মৌ খামারী আব্দুল আহাদ ও সম্রাট জানান, নিরুপায় হয়ে তারা তাদের খামারের মৌ বাক্সগুলো ইতোমধ্যে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। আর এতে করে কীটনাশকের কারনে এবছর উল্লাপাড়ায় মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আদৌ পূরণ হবে কিনা এ নিয়ে অনিশ্চয়তায় মৌ খামারীরা।

এ ব্যাপারে কীটনাশক ছিটানো কৃষকদের মধ্যে কথা হয় আব্দুস ছাত্তার, জাহাঙ্গীর হোসেন ও শামসুল হকের সঙ্গে। এরা জানান, তাদের জমিতে ফলন বেশি হবার জন্য তারা ভিটামিন জাতীয় কীটনাশক তাদের জমিতে প্রয়োগ করেছেন। তবে দিনের বেলায় ওষুধ ছিটানোর কারনে মৌমাছি মারা পড়েছে। কিন্তু কীটনাশক প্রয়োগের কারণে মৌমাছির মৃত্যুর বিষয়টি তাদের জানা ছিল না।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আজমল হক জানান, কীটনাশক ছিটানোর কারনে মৌমাছির মৃত্যুর খবর পেয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকতার্সহ তারা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ফসলের মাঠগুলো পরিদর্শন করেছেন। আসলে মৌমাছি সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় ধরে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকে। বিকেলবেলা মৌমাছি তাদের বাক্সে ফিরে যায়। কৃষকেরা বিকেলে তাদের মাঠে কীটনাশক ছিটালে মৌমাছির কোন ক্ষতি হতো না। কৃষকদের অসচেতনতার জন্য এমনটা হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ ইতোমধ্যেই গোটা উপজেলার সরিষা চাষীদেরকে এ বিষয়ে সচেতন করতে সবধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় এ ব্যাপারে মাইকিং এর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

error: Content is protected !!