হোম » সারাদেশ » একমাসেও খোঁজ মেলেনি সিলেটে নিখোঁজ ৪ যুবকের  

একমাসেও খোঁজ মেলেনি সিলেটে নিখোঁজ ৪ যুবকের  

সিলেট প্রতিনিধি: সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীরের বাসিন্দা ও লিডিং ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র শেখ আহমদ মামুন গত ১৫ নভেম্বর সকালে বাজারে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের আর ফিরেননি। একমাস ধরে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ।

মামুনের সঙ্গে নিখোঁজ একই গ্রামের আরও তিন যুবক। তারা প্রত্যকে তাবলিগে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। তাদেরকেও ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজ অন্য তিনজন হলেন হাসান সায়িদ, সাইফুল ইসলাম ও সাদিকুর রহমান। পুলিশ বলছে, এই চারজনের কেউই তাবলিগে যাননি। তবে এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

দয়ামীর এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বছর দুয়েক ধরে এই চার যুবক একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। গ্রামের মসজিদে তারা একটি গোপন পাঠচক্র চালু করেছিলেন। সেখানে তরুণদের ‘উগ্রবাদী বই’ পড়াতেন। ছেলের খোঁজ না পেয়ে গত ২৭ নভেম্বর ওসমানীনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন নিখোঁজ মামুনের বাবা শেখ শামসুল হক স্বপন।

ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৫ নভেম্বর সকালে বাজারে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয় সুমন। এরপরে কানে আসে গ্রামের আরও ৩ জনের সঙ্গে সে তাবলিগ জামাতে গেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সে ফিরে আসেনি। তার সঙ্গে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, বেলা ১১ টার দিকে বাজারে যাওয়ার কথা বলে সে ঘর থেকে বের হয়। দুপুরে খাওয়ার সময় আমি মোবাইলে কল দিতে গিয়ে দেখি তার নাম্বার বন্ধ। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। স্বপন বলেন, ‘আমার ছেলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করত। নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করত। কোনো বাজে অভ্যাস ছিল না।’ মামুনের সঙ্গে নিখোঁজ হওয়া হাসান সাঈদ পাঁচ মাস আগে বিয়ে করেছেন। তিন বছর আগে ঢাকার মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাস করেন তিনি। এরপর থেকে গ্রামেই থাকতেন। তার নেতেৃত্বেই মসজিদে গোপন পাঠচক্র চালান হতো বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

হাসান সাঈদের বাবা ছোরাব আলী হাসান বলেন, ‘বিদেশ থেকে আসা তাবলিগের একটি দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা বলেছিল সে। আমি মনে করেছি বিদেশ থেকে যেহেতু এসেছে, তারা নিশ্চয়ই বাংলায় কথা বলতে পারে না। আরবিতে কথা বলবে। মানুষ আরবি বুঝবে না। সে অনুবাদ করে দেয়ার কাজে গেছে। তাই আপত্তি করিনি।’

নিখোঁজ অন্য দুজনের মধ্যে মাদ্রসায় পড়া সাদিকুর রহমান জিম ইনস্ট্রাক্টরের কাজ করতেন আর সাইফুল ইসলাম তুহিন দারোয়ানের কাজ করতেন। তুহিনের বাবা ময়না মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলের মোবাইল ফোন নেই। কিন্তু অন্য তিনজনের মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি।’ সাম্প্রতিক সময়ে ছেলের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি জানিয়ে ময়না মিয়া বলেন, সে কাজ শেষ করে সরাসরি বাড়িতে আসত। কোনো বাজে অভ্যাস ছিল না।

এই গ্রামের এক কিশোর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলে, সন্ধ্যার পর দয়ামীর মসজিদে সাঈদ, মামুনসহ অন্যরা গ্রামের শিশু-কিশোরদের ক্লাস করাতেন। ‘নবীকে নিয়ে যারা ব্যাঙ্গ করেন, যারা কোরআন অবমাননা করেন তাদের বিরুদ্ধে যেনো আমরা বড় হয়ে প্রতিশোধ নেই এসব কথা বলতেন। ইসলাম, বেহেস্ত, জাহান্নাম সম্পর্কিত বিভিন্ন বই পড়াতেন।’

সিলেট ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন চার যুবক নিখোঁজের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘তাদের একসঙ্গে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। তাদের প্রত্যেকের বয়স ২৩ থেকে ৩৩ বছরের মধ্যে। পুলিশ তাদের সন্ধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওসি বলেন, তাদের তাবলিগ জামাতে যাওয়ারও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাবলিগ জামাতের সিলেটের দুটি মারকাজ আছে। তাদের কেউও এ ব্যাপারো কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন হচ্ছে জানিয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন পন্থায় তাদের খোঁজে বের করার চেষ্টা করছি। তারা কাদের সঙ্গে মিশতেন, কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, তাদের অতীত কর্মকাণ্ড এসবও খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’

Loading

error: Content is protected !!