হোম » সারাদেশ » আমতলীতে খেজুর গাছের পরিচর্যা ব্যস্ত গাছিরা।

আমতলীতে খেজুর গাছের পরিচর্যা ব্যস্ত গাছিরা।

এইচ এম কাওসার মাদবর: শিশির ভেজা ঘাস ও কুয়াশা জানান দিচ্ছে, শীত আসছে। আগমনী বার্তা পেয়ে খেজুর গাছ প্রস্তুতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন দেশের বরগুনা জেলা আমতলী উপজেলার খেজুর গাছের গাছিরা। কারণ খেজুরের রস ও পিঠা না হলে শীত জমে না। তাই শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই খেজুরের রস আহরণে গাছ প্রস্তুত করছেন গাছিরা।
শীতের আবহে সবকিছুই যেন বদলাতে শুরু করেছে। এখন থেকেই ব্যস্ততা বেড়েছে আমতলী খেজুর গাছিদের। গাছ কাটা ও রস সংগ্রহের তোড়জোর শুরু করেছেন তারা। সকাল হলেই গাছিরা গাছ কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচা-ছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছেন।
উপজেলার,কুকুয়া গুলশাখালী হলুদিয়া আঠারো গাছিয়া, চাওড়া ইউনিয়নসহ পৌরসভার অন্তর্গত প্রায় প্রতিটি গ্রামের কম-বেশি জায়গায় রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ কাটতে দেখা যাচ্ছে। তবে এ অঞ্চলে খেজুর গাছ সংকটের কারণে এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী খেজুরের রস পাওয়া যাবেনা বলে আশঙ্কা করছেন রস সংগ্রকারীরা।
সরেজমিনে কয়েকটা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, খেজুরের রসর খ্যাতি থাকলেও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস ও গুড়। কয়েক বছর আগেও এলাকার বাড়িতে, ক্ষেতের আইলের পাশে, রাস্তায় দুথধার দিয়ে ছিল অসংখ্যা খেজুর গাছ, কোন পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠতো খেজুরের গাছ গুলো, গ্রামের প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরন করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরী করা খেজুরের গুড অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় এলাকার চাহিদা পুরন করে বাড়তি গুড় সরবরাহ করা হতো দেশের বিভিন্ন স্থানে।
সচেতন মহল মনে করেন, জলবাযুর বিরুপ প্রভাব লবন পানির আগ্রাসন ও জ্বালানী হিসাবে ইট ও টালি ভাটায় অবাধে অন্যান্য গাছের সাথে খেজুর গাছ পোড়ান হচ্ছে। ফলে কালের বিবর্তে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর রসের প্রধান খেজুর গাছ। বসত ভিটা কিংবা মাঠে ঘাটে এমনকি রাস্তার পাশেও মিলছে না খেজুর গাছের। অনেকটাই বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ, পরিবেশ বান্ধব গুরুত্বপূর্ণ এ গাছ থেকে এক সময় রস সংগ্রহ করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করলেও বেশিরভাগ লোকই ছেড়ে দিয়েছেন এ পেশা।
গুলশাখালী ইউনিয়নের কালীবাড়ি গ্রামের সুমণ কাজি বলে ছোটবেলায় দেখতাম অনেকেই খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বিক্রি করতো, আমরাও আনন্দের বস তো গাছ থেকে রস নামাতাম, এখন গাছ ও নেই রস ও নেই। তবে এখন দুথএক জন ধরে রেখেছে এ পেশা। খেজুর গাছ বিলুপ্তি হওয়ার কারণে তাদেরকে আর দেখা যায় না ।  কলেজছত্রী মুন্নি(১৮) বলেন, শীতকাল এলেই নানা নানীর মুখে খেজুর রসের গল্প শোনা যায়, এখন আর বাস্তবতায় দেখা মেলে না। আমি কবে খেজুরের রস খেয়েছি তা মনে নেই। ছোটবেলায় মা বাবার সাথে বেড়াতে আসতাম খেজুর রসের পিঠা খেতে।
রস সংগ্রহকারী বেলাল মাদবার জানান ৩-৪ দিন হচ্ছে রস সংগ্রহনের কাজ শুরু করেছে তবে, এখনও রস বেশি মিলছে না গাছ থেকে শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে রসের পরিমান বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি ধারনা করেন। স্থানীয়দের বলেন, শীতকাল এলেই প্রতি বাড়িতে উৎসবের মেলা বসতো, দূর দূরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসত, শীতের সকালে সবাই একসাথে রসের পায়েস, খেজুরের গুড় দিয়ে চিতই পিঠা, খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ি খন্ড কি যে সুস্বাদু ছিল যা বলে বোঝানো যাবে না , খেজুরের গুড় দিয়ে নারিকেলের নাড়ু অত্যন্ত সুস্বাদু ও জনপ্রিয় খাবার। এখন কালের বিবর্তনে খেজুর গাছ হারিয়ে গিয়েছে গিয়েছে আমাদের উৎসব।
সচেতন মহলের দাবি খেজুরের গাছ সরকারী তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে সংরক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহন না করলে কয়েক বছরের মধ্যে হারিয়ে যাবে এই ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গাছ ও গুড়। এবং তালগাছের মতো খেজুর গাছের বীজ সংরক্ষণ ও রোপণ করা কর্মসূচির ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

Loading

error: Content is protected !!