হোম » সারাদেশ » ডুঁবতে বসেছে উপজেলার শ্রেষ্ঠ স্কুল থেমে নেই শিক্ষকদের দন্দ,হামলা-মামলা

ডুঁবতে বসেছে উপজেলার শ্রেষ্ঠ স্কুল থেমে নেই শিক্ষকদের দন্দ,হামলা-মামলা

আসাদ হোসেন রিফাতঃ নামুড়ী দ্বিমুখি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া স্কুলটি ২০২১ সালে ডুঁবতে বসেছে।অনাকাঙ্খিক ঘটনা প্রবাহে হারাচ্ছে নিজস্ব জৌলুশ।এসব কিছুই ঘটছে শিক্ষকদের মধ্যকার দন্দে।এ যাবতকালের শেষ কুড়ালটি মারা হয়েছে গত ১৫ নভেম্বর।এদিন সকালে সহকারী শিক্ষক ভুপতি রঞ্জন আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।ভারপ্রাপ্ত প্রধাণ শিক্ষক নজরুল ইসলামের নাক ফেটে রক্ত বের হয়।এ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন শিক্ষক নজরুল ইসলাম।
শিক্ষকদের এমন আচরণে ফিরে যেতে হয় কয়েক বছর আগে।প্রধান শিক্ষক এন্তাজুল হক পক্ষাঘাতের কারণে দায়িত্ব ছেড়ে দেন।কমিটি সহকারি প্রধাণ শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়।সহকারি প্রধান শিক্ষক কাজি আবদুর ছাত্তার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দায়িত্ব ছেড়ে দেন।কমিটি ২০১৮ সালে নজরুল ইসলামকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়।এর পর থেকেই শুরু হয় শিক্ষকদের মধ্যকার দন্দ-লড়াই।যা পরবর্তি সময়ে থানা পুলিশ এবং আদালত পর্যন্ত গড়ায়। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের মধ্যকার এমন দন্দে স্থানীয় অবিভাবক,শিক্ষার্থি সহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র অসন্তোষ এবং হতাশ। শিক্ষার্থিরা জানান,আমরা এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থি।আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটির মধ্যে এমন দন্দ আমাদের জন্য হতাশার।
সাবেক শিক্ষার্থি রানা বলেন,আমার দাদার বাবা এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।আমি নিজেও এখানকার ছাত্র ছিলাম।করোনার পরবর্তি সময়ে বাড়িতে এসেছি।তারপর শুনছি নানা রকম ঘটনা।সবার কাছে আমাদের একটাই আবেদন,আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচান। এলাকাবাসিরা জানান,এই স্কুল থেকে ২০১৯ সালে ১৯ জন শিক্ষার্থি এ প্লাস পায়।এমন প্রতিষ্ঠানে এই রকম ঘটনা কাম্য নয়।খোকা মিয়া নামের এবজন বলেন,আমরা এলাকার বাসিন্দা। আমাদের প্রকিষ্ঠানে শিক্ষদের মধ্যে এমন ঘটনা আমরা মেনে নিবো না।এর প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন।
সায়েম নামের একজন অবিভাবক বলেন,আমার শশুর মুক্তি যোদ্ধা হামিদ মোল্লা তখন সভাপতি।এন্তাজুল স্যার প্যারালাইজ্ড হয়ে অবসরে যান।পরে কমিটি সহকারি প্রধান শিক্ষক কাজি ছাত্তারকে প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়।কাজি ছাত্তার কিছু দিন দায়িত্ব পালনের পরে দায়িত্ব ছেড়ে দেন।তখন আমার শশুর তাকে অনেক বার বুঝিয়েছে।আমরাও বুঝিয়েছি।আমার শশুর তাকে বলেছিলেন,এটা একটা দায়িত্ব।এই ভাবে দায়িত্ব গ্রহণ বা ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়।তখন তিনি তার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দায়িত্ব ছেড়ে দেন।পরে কমিটি নজরুল স্যারকে দায়িত্ব দেয়।তারপর কিছু দিন পরেই শুরু হয় দন্দ।এমন একটি প্রতিষ্ঠানে এমন মারামারি,হামলা-মামলা ভালো লাগেনা। ভুপতি রঞ্জন রায়ের বিরুদ্ধে নানা  অভিযোগ গভর্নিং বডি,শিক্ষক,অভিভাবক,এবং অফিসারদের।
নথী তালাশে দেখা গেছে,ভুপতি রঞ্জন রায়ের বিরুদ্ধে গভর্নিং বডি মিটিং করে।সেই মিটিং এ ভুপতি রঞ্জনের বেতন স্কেল এক ধাপ নিচে নামনোর সীদ্ধান্ত হয়।সেই সীদ্ধান্ত মেনে ৪৮২৬৪৪ টাকা সরবারি কোষাগারে ফেরৎ দিতে বলা হয়।টাকা ফেরত না দিলে দুদকে মামলা করার জন্য শুপারিশ করা হয়েছে।সহকারী প্রধান শিক্ষক কাজি আব্দুস ছাত্তারের উত্তোলন করা ১৮৮৩০৪ টাকা সরকারি কোষাগাড়ে ফেরত দিতে বলা হয়। এবং তার বেতনও স্থগিত রাখার সীদ্ধান্ত নেয় কমিটি।
এছাড়াও আছে মেয়েদেরকে বিরক্ত করার অভিযোগ।একটি নথীতে দেখা যায়,ভুপতি রঞ্জনের সাক্ষর করা স্ট্যাম্পে ভুপতি একটি মেয়েকে বিরক্ত না করার অঙ্গিকার করেছেন।এবং স্ট্যাম্পটি ভুপতির নামেই তোলা।সেখানে সাক্ষকর করেছেন ৪ জন।তার মধ্যে নজরুল ইসলামও রয়েছেন।
শিক্ষক ভুপতি রঞ্জন বলেন,নিয়ম মত প্রধাণ শিক্ষকের দায়িত্ব সহকারি প্রধান শিক্ষক পায়।নজরুল স্যারের প্রধানের দায়িত্ব নিলে আমি এর প্রতিবাদ করি।এরই প্রেক্ষিতে আমাকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে সাময়িক বহিষ্কার করে।নতুন কমিটিতে কোনো শিক্ষিত মানুষকে রাখা হয়নি।আমার বিরুদ্ধে যে মেয়ে অভিযোগ করেছে,সে অভিযোগ করতে চায়নি।এরা জোর করে অভিযোগ করিয়েছে।আমি তখন আমার মামা ও সভাপতি ভব রঞ্জনকে বলি প্রধান শিক্ষক গাঁধার গাঁধা।আপনি নজরুলকে প্রধাণের দায়িত্ব না দিয়ে সহকারি প্রধান কাজি সাত্তারকে দায়িত্ব দেন।তিনি কথা শুনলেন না।
এখন যে ঘটনা গুলো ঘটছে এতে মাধ্যমিক ও জেলা শিক্ষা অফিসের অবহেলা দায়ি।আমি তাদেরকে লিখিত ভাবে বিষয় গুলো জানিয়েছি।তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।আমার মামলা ছাড়াও আরো ১১টি মামলা চলমান।মারামারির দিনও আমি সঠিক সময়ে গিয়েছি।আমি দেখলাম আমাকে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে।সহকারি প্রধান শিক্ষক কাজি সাত্তার স্যারকে বললে,তিনি অনুপস্থিত লেখার উপরেই সই করতে বলেন।আমি তাই করি।এতে দন্দ বাজে প্রধানের সাথে।একটা পর্যায়ে আমি প্রধান স্যারকে ধাক্কা দেই।আমি যদি আবার মামলা করি তাহলে ১০ বছর বসে বেতন নিতে পারবো।আদিতমারী উপজেলার একটি শ্রেষ্ঠ স্কুলকে ধ্বংস করা হচ্ছে।স্কুলটিকে বাঁচাতে হবে।
সভাপতি ভব রঞ্জন রায় বলেন,মারামারির ঘটনা সহ যা ঘটছে সেগুলো সব আপত্তিকর ঘটনা।এভাবে চলতে পারেনা।ভুপতি রঞ্জনই শুধু সমস্যা করছে।আমরা মারামারির ঘটনার পরে কোনো সীদ্ধান্ত নেই নি।প্রধান শিক্ষক আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।আইনের মাধ্যমে যা ভালো হয় করবেন।বেতনের টাকা ফেরত দিতে রেজুলেশন করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইমলাম বলেন,গত চার বছর থেকে আমি দায়িত্ব পালন করছি।শিক্ষক,গভর্নিংবডির আন্তরিকতায় স্কুলটি উপজেলার শ্রেষ্ঠ স্কুল হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।সকলের সুদৃষ্টি কামনা করছি। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুলটির  চলমান আবুল কালাম আজাদ বলেন,আজকেও একটা তদন্ত হওয়ার কথা।এর আগে একটি তদন্ত করা হয়েছে।সেই তদন্ত রিটোর্ট ঢাকায় ফরওয়ার্ড করেছি।এই স্কুলটিতে স্থায়ী একজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করলে হয়তো সমস্যার সমাধান হবে।সাম্প্রতিক ঘটনায় আমি নিজে হাসপাতালে গিয়েছিলাম।
ওই স্কুলটির বিষয়ে আমার অফিসের কোনো দোষ জড়িত না।প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর কাজি সাত্তারকে দায়িত্ব দেয় কমিটি।সে তখন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়।কমিটি তখন নজরুল ইমলামকে দায়িত্ব দেয়।ভুপতি রঞ্জন যদি আমার অফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ সহ আনতে পারেন,তাহলে মাথা পেতে নিবো।আমার অফিসের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভিত্তিহীন।আমি এতে অসম্মতি জানাচ্ছি।কাজি সাত্তার দায়িত্ব ছেড়ে আবার দায়িত্ব পালন করতে চাচ্ছেন।আমাদেরকে বিষয়টি জানিয়েছিল।কাজি সাত্তার এরপর আদালতে যান।আদালতের রায় কাজি সাত্তারে বিপক্ষে যায়।স্বাভাবিক ভাবেই নজরুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন,এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ কেউ করেনি,তাই জেলা প্রশাসনের মন্তব্য নেই।থানায় একটি ফৌজদারী মামলা হয়েছে,সেটা পুলিশ দেখবে।
error: Content is protected !!