হোম » সারাদেশ » বগুড়া ভূমি অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতি শহীদ পরিবার; অসহায় মানুষের জমি আত্মসাৎ করে বিক্রির অভিযোগ!

বগুড়া ভূমি অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতি শহীদ পরিবার; অসহায় মানুষের জমি আত্মসাৎ করে বিক্রির অভিযোগ!

রায়হানুল ইসলাম: বগুড়া সদরের মালগ্রাম মৌজার তফসিল বর্ণিত সাবেক ২০৪, ২০৫, ২০৬ নং দাগে কানুনগো ও জিপির প্রতিবেদনে ৯৪৩১হিসাবধারীর কোন স্বত্ত্ব নেই উল্লেখ থাকলেও এখননো তা কার্যকর করা হয়নি। সমাজ বিশ্লেষকরা দাবি করেন, অতি দ্রুত শহীদ পরিবার ও অসহায় মানুষের উক্ত জমি তাদের বুঝিয়ে দেয়া হোক। বগুড়ার বাবুরপুকুরে ১৪ জন শহীদ শায়িত রয়েছেন। শহীদ ওয়াজেদুর রহমান টুকুন নাম রয়েছে তালিকায় ১২ নাম্বারে। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী যা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে অনিয়ম ও অবমূল্যায়ন সহ অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকার গল্প এখনো রয়ে গেছে।
তাইতো দেখতে হচ্ছে, শুনতে হচ্ছে শহীদ পরিবার ও অসহায় মানুষের সম্পত্তি গ্রাস এর জন্য অভিনব কৌশলে অসদুদ্দেশ্যে দলিলপত্র সৃষ্টি করে কোন নোটিশ না দিয়ে অত্র অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভুল বুঝিয়ে বা যোগসাজশে অন্যায়ভাবে জমি খারিজ করে হাসিল করতে। শহীদ ওয়াজেদুর রহমান টুকুর স্ত্রী লাইলী বেওয়া জানান, আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। মোঃ জহুরুল ইসলাম পিতা মৃত মোহাম্মদ আলী, রাহাত আহমেদ রিটু পিতা মোঃ ওয়াহেদুর রহমান , আব্দুর রউফ পিতা মোঃ আব্দুস সাত্তার , নূরনবী পিতা শাহাদাত হোসেন , শামীম পিতা আব্দুস সামাদ,  দেলোয়ার হোসেন পিতা মোমিন বক্স মন্ডল সকলের থানা ও জেলা বগুড়া উল্লেখিতরা অফিসের সহযোগিতায় ভূয়া দলিল সৃষ্টি করে তাদের নামে খারিজ করে নিয়েছে। আমার দাবি পূর্বের খতিয়ান ও মাঠ রিপোর্ট বহাল রাখা হোক। সমাজের সচেতন মানুষের দাবী, অসৎ উদ্দেশ্যে ভুয়া দলিল পত্র সৃষ্টিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার।
উল্লেখ্য ২২ মে ২০১৮ তারিখে জিপির মতামত স্মারক নং জিপি / আইন/২০১৮/৬৭, ৩১ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে প্রতিবেদনে ৯৪৩১(বিবাদীর) হিসাবধারীর কোন স্বত্ত্ব নাই মর্মে উল্লেখ থাকলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। ৯৪৩১(বিবাদীর) হিসাবধারীর প্রকৃত জমির দাগ সমূহ ৩৩৭,৩৩৮,৪০৯,৪১২। তুর্কিত ২০৪,২০৫,২০৬ দাগে ৯৪৩১ হিসাবধারীর কোন স্বার্থ নেই। দলিল নং ১৩৫৮৪/১৪ এ দলিলে কোন ডিপি নাম্বার ছিল না এবং এই দলিল মূলে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খারিজের জন্য দাখিল করা হয় যা ২৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে আবেদন নামঞ্জুর হয়। পরে দলিল নং ১১৩২০/১৫ কে ডি পি নাম্বার বসানো হয়েছে যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
কারণ ১৩ নং ডিপিতে উক্ত দাগ সমূহ বিদ্যমান। ১ জুন ১৯৯৮ ইং তারিখে উক্ত দাগসমূহের ৪২.৫০ শতাংশ জমি জামিল উদ্দিন লিমিটেডের নামে ডিপি নং ১৩ তে পাওয়া যায়। ৩১ জানুয়ারি ২০০২ তারিখে ২৯৯১ নং ডিপিতে ৪৬ শতাংশ জমি দেখা যায়। দুই খতিয়ান মিলে জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৮.৫০ শতাংশ। কিন্তু প্রকৃত জমির পরিমাণ ৪৬ শতাংশ। সরকার রাস্তার জন্য অধিক গ্রহণ করেছে ৮.৭৫ শতাংশ ৪৬ শতাংশ থেকে। তাহলে জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮.২৫ শতাংশ।
জানে সাবা হাউজিং ৮.৭৫ শতাংশ অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য ৮ লক্ষ ২২ হাজার ৭০২ টাকা সরকার থেকে গ্রহণ করেন। শুকনা শাহর মৃত্যুর পর তিন ছেলে কছিম শাহ, জসিম শাহ , জমির শাহ ও এক মেয়ে জহুরা খাতুন উক্ত খতিয়ান ৩০৭ মূলে প্রাপ্য জমির পরিমাণ ৬৩ শতাংশ। সে মোতাবেক কছিম  শাহের অংশ দাঁড়ায় ১৮ শতাংশ। কিন্তু বিগত ২০০৫-২০০৬ সালে দুটি দলিল ১৩৫৮৪/১৪ ও ১১৩২০/১৫ মূলে বিক্রি করেছে একাই ৬০ শতাংশ।  ২০১৪-২০১৫ তে বিক্রি করেছে ৫৫ শতাংশ। সর্বমোট বিক্রয় ১১৫ শতাংশ। তার প্রাপ্য অংশের চেয়েও বেশি বিক্রি করেছে ৯৭ শতাংশ।
অপর ভুক্তভোগী আশরাফুল ইসলামের চাওয়া, জমির মালিকানা যেহেতু ‍সি.এস-এর উপর নির্ভর করে। সেখানে ১৩নং ডিপি বহাল থাকা অবস্থায় নতুন ২৯৯১ নং ডিপি কিভাবে প্রস্তুত হলো তা বিচারের আওতায় আনতে হবে।   সার্বিক বিষয়ে সহকারী কমিশনার ভূমি ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট বগুড়া সদর, মো: নুরুল ইসলাম-এর সঙ্গে উল্লেখিত বিষয়ে জানতে গেলে তিনি আসন্ন ২৮ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সময় দিতে পারেননি।
পরে কানুনগো মাহফুজার রহমান-এর সঙ্গে কথোপকথনে তিনি জানান, নতুন এসেছি আমার স্থলাভিসিক্ত জায়গায় ছিলেন নুরুল ইসলাম ভূইয়া উনি বলতে পারতেন। ভূমি অফিসের এমন দুর্নীতিতে সমাজ বিশ্লেষকেরা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভুয়া দলিলপত্র ও বেআইনি ভাবে জমি খারিজ বাতিল করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে শহীদ পরিবার ও অসহায় মানুষের সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দিয়ে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন।

Loading

error: Content is protected !!