হোম » সারাদেশ » পারিবারিক সচেতনতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে শিশুকে পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে রক্ষা করা সম্ভব

পারিবারিক সচেতনতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে শিশুকে পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে রক্ষা করা সম্ভব

হুমায়ুন কবির সুমন, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বহুসংখ্যক শিশুকে পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মন্তব্য করা হয়েছে গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’ আয়োজিত দুইদিন ব্যাপি এক কর্মশালায়। শনিবার (৩০ আক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রীর কনফারেন্স রুমে প্রথম দিনের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। দুদিন ব্যাপী এই প্রশিক্ষণে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ২২ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় দিন মাঠ পরিদর্শনের জন্য রায়গঞ্জে যাওয়া হবে।

পানিতে ডুবে মৃত্যু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ এর ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২১ মাসে সিরাজগঞ্জে ৫২ জনের মৃত্যু এর মধ্যে ৮৫ শতাংশই শিশু। জাতীয় পর্যায়ে গণমাধ্যম ও স্থানীয় পর্যায়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের ৪০টি ঘটনার কথা প্রকাশ হয়েছে। এসব ঘটনার  ৪৪ শিশুসহ মোট ৫২ জন ব্যক্তির পানিতে ডুবে মারা যায়।

পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চৌহালীতে ১২ জন। এছাড়া তাড়াশে ১১ জন, উল্লাপাড়ায় ৮ জন, সিরাজগঞ্জ সদরে ৭ জন, রায়গঞ্জ ও শাহজাদপুরে ৪ জন, কাজিপুরে ৩ জন,  কামারখন্দে ২ জন। সময় সবচেয়ে কম মৃত্যু ছিল বেলকুচিতে ১ জন।
পানিতে ডুবে মৃতদের ৮৫ শতাংশ শিশু।  চার বছর বা কম বয়সী ১৯ জন, ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ১৮ জন, ৯-১৪ বছরের ৫ জন এবং ১৫-১৮ বছরের ২জন। ৮ জনের বয়স ১৮ বছরের বেশি।

এসময়  ২ পরিবারের ৪ জন সদস্য পানিতে ডুবে মারা যায়। যাদের মধ্যে চাচাতো বোন ২ জন এবং চাচা-ভাতিজা ২ জন মারা যায়। পানিতে ডুবে নিহতদের মধ্যে ১৮ জন নারী এদের মধ্যে কন্যাশিশুর ১৭ জন পুরুষ মারা যায় ৩৪ জন, যাদের মধ্যে ২৭ জন শিশু।
দিনের প্রথম ভাগে অর্থাৎ সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ২৩ জন এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যা আগে ১৭ জন মারা যায়। এছাড়া সন্ধ্যার ১২ জন মারা যায়।

গত ২১ মাসের সিরাজগঞ্জে ৪৪ জন কোনো-না-কোনো ভাবে পানির সংস্পর্শে এসে ডুবে যায়।  ৮ জন মারা যায় নৌযান দুর্ঘটনায়। পরিবারের সদস্যদের যথাযথ নজরদারি না থাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পানিতে ডোবার ঘটনা ঘটে। অধিকাংশ শিশু বড়দের অগোচরে বাড়ি সংলগ্ন পুকুর বা অন্য জলাশয়ে চলে যায় এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়।  গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ এর ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সাড়া দেশে পানিতে ডুবে মৃত্যু ২১ মাসে ১৯০১ জনের : যার ৮৩ শতাংশ শিশু।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর ৪৩ শতাংশের কারণ পানিতে ডুবে মারা যাওয়া। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হারে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী প্রতিবছর এখানে প্রায় ১২ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো জাতীয় কর্মসূচী গৃহিত না হওয়ায় এই উচ্চ মৃত্যুহার এখনো একটি সমস্যা হিসেবে থেকে গেছে।

শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস। যদিও পানিতে ডুবে মৃত্যুর সবগুলো ঘটনার তথ্য গণমাধ্যম পায়না। এ নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে কোনো কার্যকর তথ্য ব্যবস্থা এখনো গড়ে উঠেনি। আবার গণমাধ্যম প্রতিবেদনগুলো শুধুমাত্র ঘটনাকেন্দ্রীক। এ নিয়ে গভীরতাধর্মী প্রতিবেদনের অভাব রয়েছে। গভীরতাধর্মী প্রতিবেদনে গণমাধ্যমগুলো গুরুত্ব দিলে বিষয়টি নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্ব পাবে এবং এ নিয়ে জাতীয় কর্মসূচী গ্রহণের বিষয়টিকে তরান্বিত করবে।

সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত এ কর্মশালার বিভিন্ন অধিবেশ পরিচালনা করেন সমষ্টি’র পরিচালক ও চ্যানেল আইয়ের জেষ্ঠ্য বার্তা সম্পাদক মীর মাসরুর জামান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর এর কমিউনিকেশন ম্যানেজার সারোয়ার-ই-আলম, গবেষনা ও যোগাযোগ সমষ্টি এর পরিচালক রেজাউল হক, সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন রামপদ রায়, দৈনিক প্রথম আলোর পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার পার্থ সংকর সাহা ও দৈনিক সমকাল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার জাহিদুর রহমান প্রমুখ।

Loading

error: Content is protected !!