হোম » সারাদেশ » না’গঞ্জে অটো-ইজিবাইক ছিনতাই ও খুনী চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার, ৫ চোরাই গ্যারেজের সন্ধান

না’গঞ্জে অটো-ইজিবাইক ছিনতাই ও খুনী চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার, ৫ চোরাই গ্যারেজের সন্ধান

অটো রিক্সা ও ইজিবাইক চুরি, ছিনতাই, অপহরণ এবং খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার ঘটনায় সংঘবদ্ধ খুনি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ। বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ভুইগড়ে অবস্থিত পিবিআইয়ের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন পিবিআই নারায়ণগঞ্জ ইউনিটের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও আড়াইহাজার, নীলফামারীর ডিমলা এবং ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় এই অভিযান চালানো হয় বলে জানান তিনি।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, নারায়নগঞ্জ বন্দর উপজেলার ধামগড় চৌরার বাড়ি এলাকার মৃত আ. সালামের ছেলে শাহ আলম (৩৮) বর্তমানে সে সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকার বাসিন্দা, বরগুনা জেলার গৌরিচন্নার আমতলী এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে হালিম (৪২), পিরোজপুর জেলার কাউখালীর জোলাগাতি এলাকার আ. খালেকের ছেলে মো. শহিদুল (৩২), বরগুনার বউ ঠাকুরানী এলাকার মৃত আ. রবের ছেলে বাদশা (৪৭), সোনারগাঁয়ের ৮নং ওয়ার্ড এর হাতুরাপাড়া এলাকার মো. সালাম মিয়ার ছেলে মো. আসলাম (৩০) ও সোনারগাঁয়ের ৩ নং ওয়ার্ড এর পেঁচাইন এলাকার মৃত আলী আকবরের ছেলে মো. মনির (৪০)।

গ্রেপ্তারের সময় আসামী শাহ আলমের কাছ থেকে আ. কুদ্দুস নামের এক ভিকটিমের মোবাইল এবং ছিনতাই কাজে ব্যবহার করা একটি ডাবল ডেগার (সুইচ গিয়ার চাকু) জব্দ করা হয়। পিবিআই চোরাই রিক্সা ও অটো ও ইজিবাইক ক্রয় করে এমন পাঁচটি গ্যারেজের সন্ধান পেয়েছে বলে জানান তিনি। তবে তদন্তের স্বার্থে আপতত তাদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করা যাবে না বলে জানান।

পিবিআই পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম আরো জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লার নরসিংহপুর কাউয়াপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীরের গ্যারেজ থেকে প্রতিদিনের মতো ব্যাটারি চালিত মিশুক নিয়ে বের হয় আব্দুল কুদ্দুস। রাতেও সে বাসায় না ফেরায় তার পরিবার তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে সন্ধান না পেয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী রীনা খাতুন ফতুল্লা মডেল থানায় একটি জিডি করেন। এ ঘটনায় থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় পিবিআইয়ের সহায়তায় রীনা খাতুন অপহরণের মামলা দায়ের করেন। পরে পিবিআই স্ব-উদ্যোগে মামলটির তদন্তভার গ্রহণ করে এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে একে একে ৬জনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে যে, তারা মূলত ৮/১০ জনের একটি গ্রুপ নারায়ণগঞ্জসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলায় অটোরিক্সা, ইজিবাইক, অটো মিশুক ছিনতাই করে। এ সময় তারা ফিল্মি স্টাইলে কীভাবে এ ছিনতাই করে তার বর্ণনা দেন। তারা জানান, চক্রের একজন সদস্য শহরের যে কোন একটি বাসার সামনে কেয়ারটেকার/দাড়োয়ান সেজে থাকে এবং একটি রিক্সা বা অটো ডেকে আনে। পরে ঐ চক্রের আরেক সদস্য বাড়ির মালিক সেজে চালককে শুনিয়ে তার বানানো দাড়োয়ানের সাথে কুশল বিনিময় করবে (যেমন- গ্যাস বিল দেয়া হয়েছে কী না, পানি ওঠানো হয়েছে কী না, গাড়ী কোথায়, গেট খোলা কেন ইত্যাদি)।

চালক ভাববে বাড়ির মালিক তার দাড়োয়ানকে জবাবদিহি করছে। চালকের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি করাই হলো তাদের মূল লক্ষ্য। তারপর বাড়ির মালিকের অভিনয় করা রিক্সায় ওঠে একটি গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রওনা হয়। কিছুদুর যাওয়ার পর রিক্সায় ওঠা মালিক সাজা লোকটির মোবাইলে কল আসে তখন সে মোবাইলে কথা বলার এক ফাঁকে রিক্সা থামায়, রিক্সাওয়ালাকে তার দাড়োয়ানকে ডাকার জন্য বলে। সে সত্যিকারে মালিক ভেবে দাড়োয়ানকে ডাকতে গেলে আগে থেকে পরিকল্পনা মোতাবেক তাদের অন্য সদস্যরা মিলে রিক্সাটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তারা রিক্সাটি তাদের নির্দিষ্ট চোরাই গ্যারেজে বিক্রি করে দেয়।

অন্য উপায়ে দাড়োয়ান সাজা লোকটি অটোরিক্সা ডাকে, একজন কোট টাই পরে সাহেব সেজে অন্য আরও দুইজন সাহেব বন্ধুকে সাথে নিয়ে চালকের চাহিদামত ভাড়ায় রাজি হয়ে চক্রের পূর্বপরিকল্পিত স্থানে যেতে বলে। পথিমধ্যে সুবিধাজনক স্থানে নেমে ড্রাইভারের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে তাকে চা খাওয়ার প্রস্তাব দেয় এবং সু-কৌশলে চায়ের মধ্যে চেতনানাশক/ উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেয়। এর ফলে চালাতে চালাতে চালক নিস্তেজ হয়ে পড়লে তারা গাড়ি নিয়ে সটকে পড়ে।

এসব উপায়ের মাঝখানে যদি চালক কোনপ্রকার টের পেয়ে যায় তাহলে তাকে উর্পযুপরি ছুড়িকাঘাত করে মৃত অথবা অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রেখে গাড়িটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এসব গাড়ি যারা ক্রয় করে গাড়িটিকে যাতে মূল মালিক চিনতে না পারে, সেজন্য তাদের নির্ধারিত গ্যারেজে নিয়ে গিয়ে গাড়ীটির রং-পরিবর্তনসহ আনুসাঙ্গিক কাঠামোর আমূল পরিবর্তন করে অধিক দামে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেয়।

জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায় যে, আসামী শাহ আলম, হালিম এবং রাশেদ রিয়ন ভিকটিম মিশুক চালক আ. কুদ্দুসকে নারায়ণগঞ্জ চিটাগাং রোড স্ট্যান্ড থেকে ৫০০ টাকা ভাড়ায় কালীবাজারে আসা-যাওয়ার জন্য ভাড়া করে। রাস্তায় তারা আদমজী এলাকায় ভিকটিম ড্রাইভারকে নিয়ে পূর্বনির্ধারিত চায়ের দোকানে নিয়ে চা খেয়ে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়। তারা সদরের টানবাজারে গিয়ে ৩০০ টাকায় আধা লিটার মদ কিনে খানপুর হাসপাতালের আশপাশের স্থানে গিয়ে নিজেরা মদ খায় এবং ভিকটিম ড্রাইভারকে মদ খাওয়ার প্রস্তাব দিলে সেও খেতে রাজি হয়। এসময় তারা কৌশলে মদের মধ্যে উচ্চমাত্রার ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে চালক অচেতন হয়ে পড়লে

তারা আদমজী এলাকার বিহারী পট্টিতে নেমে পড়ে চালক কুদ্দুসকে বিহারী পট্টিতে ময়লার ভাগারের পাশে রেখে চলে যায়। পরে গাড়িটি তারা তাদের পূর্ব নির্ধারিত চোরাই গাড়ির ক্রেতা আসামী আসলামের কাছে গাড়ীটি ৩৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। আসামী আসলাম গাড়ীটির রং, সীট কভার এবং হুড চক্রের অপর সদস্য আসামী মনিরের মাধ্যমে পরিবর্তন করে ফেলে। তাদের গ্রেপ্তারের পর তাদের দেয়া তথ্যমতে ছিনতাই হওয়া মিশুক অটো রিক্সাটি আসামী আসলাম এবং মনিরের যৌথ গ্যারেজের পেছন থেকে উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। তারা প্রায় ৩ বছর যাবৎ অনুমানিক ২৫০টিরও বেশী ইজিবাইক এবং অটো রিক্সা ছিনতাই করেছে বলে স্বাীকার করেছে। মামলার ভিকটিমকে উদ্ধারসহ এই চক্রের আরও কোন সদস্য জড়িত আছে কী না তা তদন্ত করে গ্রেফতারপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে পিবিআই জানিয়েছে।

error: Content is protected !!