হোম » সারাদেশ » মাওলানা উমায়ের আহমদের কুরআন শেখানোর স্বপ্ন যেন বাস্তবে রুপ নিয়েছে

মাওলানা উমায়ের আহমদের কুরআন শেখানোর স্বপ্ন যেন বাস্তবে রুপ নিয়েছে

শেখ মাজহারুল ইসলাম সোহানঃ শিক্ষাদান পদ্ধতি ব্যক্তিনির্ভর।কেউ স্বতন্ত্র পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষা দানের মাধ্যমকে আনন্দঘন পরিবেশ শ্রেষ্ঠতর উপায় হিসেবে গ্রহণ করেন।যদি বা সেই শিক্ষাটা হয় সৃষ্টিকর্তার নাজিলকৃত গ্রন্থ থেকে তাহলে তো কথাই নেই। পবিত্র কুরআনের বাণী সব বয়সের মানুষের বোধগম্য করে উপায়ান্তর সহজভাবে উপস্থাপনার মাধ্যমে কুরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে কুরআন শেখানোর প্রচেষ্টায় অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন মাওলানা উমায়ের আহমদ।
তারই প্রচেষ্টায় অনলাইনের মাধ্যমে যে কোন বয়সের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিরাও সহজেই শিখতে পারছে পবিত্র কুরআন। আর এভাবেই কুরআনের বাণী পড়তে পেরে অতি সহজেই হৃদয়াঙ্গম করতে পারছে কুরআনের মর্ম। বর্তমান সময়ে সহজাত করে কুরআনের এই উপস্থাপনার শিক্ষক মাওলানা উমায়ের আহমদের জন্ম  নরসিংদী সদরে।পড়ালেখার হাতেখড়ি নরসিংদী সাহেপ্রতাপ মাদরাসায়। দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেছেন মতিঝিল ওয়াবদা মাদরাসা থেকে। বর্তমানে থাকেন ঢাকার খিলগাঁওয়ে।
মাওলানা উমায়ের আহমদের পূর্ববর্তী জীবনের গল্প খুব একটা সহজতর ছিলো না।অভাবের সংসারে কষ্ট করে পড়ালেখা করেছেন।শুধু তাই নয়,নিজে শিখেই বসে থাকেন নি।কোরআন শেখানোর টিউশনির ব্যবস্থা নিজ প্রচেষ্টাতেই করেছেন।মাত্র দুজন শিক্ষার্থীকে পড়াতে অতিবাহিত করেছেন দুই মাইলের পথ।টিউশনি খুঁজে বের করেন। পাঁচ শত টাকা মাইনে পেতেন। পাঁচতলার সিঁড়ি ভেঙে পড়াতে যেতেন। এর মধ্যে একদিন প্রতিজ্ঞা করলেন, সাধারণ মানুষের কাছে কোরআন শিক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবেন। মানুষকে কোরআনের কাছে নিয়ে আসবেন।
২০১৭ সাল। খিলগাঁওয়ে এক প্রাইভেট মাদরাসায় বাচ্চাদের পড়াতেন উমায়ের। অল্প বেতন পেতেন। বিকেলে পথে পথে দেখা মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন। অনেকেই কোরআন পড়তে জানে না—শুনে কষ্ট পেতেন। ঠিক করলেন, ফ্রি কোরআন পড়াবেন। পকেট তখন ফাঁকা। একজনের কাছ থেকে এক হাজার টাকা ধার নেন। এক স্কুলের একটি রুম বিকেলের জন্য ভাড়া নেন। মানুষকে বোঝাতে থাকেন। লিফলেট বিতরণ করেন। মসজিদে মসজিদে নামাজ শেষে কোরআন শিক্ষার কথা বলেন। শুরুতে কেউ আসেনি। একদিন এক ভার্সিটি পড়ুয়া তরুণকে বুঝিয়ে নিয়ে আসেন। অন্যদিন হোটেলের দুই কর্মচারী। তাঁদের হাতখরচও দেন। এভাবে চলতে থাকে। এভাবে কয়েক শত মানুষকে পড়িয়েছেন উমায়ের।
শুধু তাই নয়,ইউনেসকোর অধীনে মানুষকে কোরআন শিখিয়েছেন উমায়ের। ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ড. দীপু মনির উদ্বোধনের মাধ্যমে এই কোর্স চালু হয়। সেগুনবাগিচার একটি ভবনে সচিব, উপসচিবসহ সরকারি কর্মকর্তারা কোরআন শিখতেন। ইউনেসকো এই আয়োজন করেছিল। উমায়ের সেখানে কোরআন শেখানোর শিক্ষক হয়েছিলেন। ২৮ দিনের কোর্স ছিল। লোকেরা ১০ মাস পড়েছিল। সপ্তাহে দুই দিন। ইউনেসকো উমায়েরকে বেশ সম্মান করেছিল। উমায়ের বলেন, ‘সেখানে সবাই ছিল সরকারি বড় বড় আমলা। কোরআনের প্রতি তাঁদের দরদ দেখে আমার যারপরনাই ভালো লেগেছিল। আমি সাধ্যমতো তাঁদের শিখিয়েছি। কোরআনের কাজে এটা বোধ হয় ইউনেসকোর প্রথম কাজ।’
তারই পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপ বিনা মূল্যে কোরআন পড়াচ্ছে। ‘এভারগ্রিন বাংলাদেশ, ইসলামিক জীবন’-এ ক্লাস করিয়েছেন। ইসলাম প্রতিদিন ইউটিউব চ্যানেলে কোরআন শেখার ১২০টি ক্লাস ভিডিও করেছেন। ‘দ্য লাইট অব ইসলাম’ ফেসবুক পেজে কোরআন শেখান সপ্তাহের শনি, রবি ও বুধবার। রাত ৯টায় সেখানে ক্লাস নেন। সেখানে সদস্য আছেন প্রায় ৩০ লাখ। নিয়মিত পড়ান উস্তাদ ডট কমের ফেসুবক পেইজে। সেখানে নিয়মিত দুই হাজার মানুষ কোরআন শেখেন। তাঁর একটি ক্লাসের সর্বোচ্চ ভিউ হয়েছে ২৮ লাখ।
মাওলানা উমায়ের এখন নিজের দেশের মধ্যেই কুরআন শেখাচ্ছেন এমনটা নয়।কুরআন শেখানোর সপ্ন যেন এখন বাস্তবে রুপ নিয়েছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সৌদি আরব, লন্ডন, আমেরিকা, জাপান, ইংল্যান্ড, মেক্সিকো, ভারত, কলকাতাসহ নানা দেশের শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন কুরআন। তাদের জন্য আলাদা আলাদা সময় বেছে দিয়েছেন। ইমু, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও জুমের মাধ্যমে তাদের পড়ান। বিদেশি অনেকে পড়তে চাচ্ছেন। উমায়ের তেমন ইংরেজি জানেন না। এখন ইংরেজি শিখছেন। আশা করছেন, দুই মাস পর বিদেশিদেরও কোরআন শেখাবেন।আর এভাবেই কুরআন শেখানোর স্বপ্নে বিভোর থাকা মাওলানা উমায়ের আহমদের মাধ্যমে অনলাইনে হাজারো মানুষ তাঁর কাছ থেকে কোরআন শিখছে।

Loading

error: Content is protected !!