হোম » সারাদেশ » উল্লাপাড়ায় শুরু হয়েছে শুটকি তৈরির কাজ, ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত নারী শ্রমিকরা

উল্লাপাড়ায় শুরু হয়েছে শুটকি তৈরির কাজ, ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত নারী শ্রমিকরা

রায়হান আলীঃ দেশের উত্তরাঞ্চলের চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নানা প্রজাতির শুটকি মাছ তৈরী করা শুরু হয়েছে। রাস্তার পাশ দিয়ে চলার সময় বাতাসের সাথে ভেসে আসে শুটকি মাছের গন্ধ। সূর্য ওঠার সাথে সাথে বিলের মধ্য এবং আড়ত থেকে মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে আসে শুটকি ব্যবসায়ীরা। আর সেই মাছ পরিস্কার পরিছন্ন করা,মাছে লবন মেশানো এবং মাছ শুকানোর জন্য চাঁতালে তোলা এসব কাজ যেন হয় নারীর হাতে। বিশেষ করে উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়ন,মোহনপুর ইউনিয়ন,পাঙ্গাসী ইউনিয়ন ও বাঙ্গালা ইউনিয়ন চলনবিল অধ্যুষিত হওয়ায় এ অঞ্চলে মাছ বেশি পাওয়ায় যায়। গত এক সপ্তাহে বন্যার পানি কমে যাওয়ায় এসব এলাকার জেলেরা এখন মাছ ধরতে ব্যস্ত। বর্ষা মৌসুমে এলাকার জেলেরা মাছ ধরে তা বিক্রি করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

বাঙ্গালা ইউনিয়নের শুটকি ব্যবসায়ী ওয়াজেদ আলী আকন্দ জানান,আমি প্রায় দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে এ ব্যবসার সাথে জড়িত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলনবিলের মিঠা পানির শুটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এই বর্ষা মৌসুমে কাঁচা মাছ কিনে শুটকি তৈরী করে থাকি। বন্যার পানিতে নদী-নালা খালবিল তলিয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যায়। বিশেষ করে পুঁটি,টেংরা, খলসে,বাতাসী, চেলা, মলা, ঢেলা, চিংড়ী , টাকি, বাইম, শোল, কৈ, নন্দই, বেলে সহ নানা মাছ মাচায় শুকানোর জন্য ছিটিয়ে রাখা হয়। তবে এখন মাছ তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। পানি আরো কমলে তখন মাছ বেশি পাওয়া যাবে। বর্তমানে ছোট আকৃতির মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মন দরে কেনা হচ্ছে৷ আবার এই মাছ যখন বড় হয়ে যাবে তখন ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা দরে কেনা হয়।

তিনি আরো বলেন,প্রতি চাঁতালে ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করে থাকে। কিন্তু এবারে এখানো পুরোদমে কাজ শুর হয়নি। তাই অল্প শ্রমিক দিয়েই কাজ শুরু করেছি। এখন ৩ থেকে ৪ জন শ্রমিক সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত কার করছে। যে মাছ গুলো শুকানো হচ্ছে তা সংরক্ষণ করে পুরোদমে যখন শুটকি তৈরী করার কাজ শুরু হবে তখন তা বিক্রি করা হবে। আর এসব শুটকির চাহিদা সৈয়দপুরে সব চেয়ে বেশি। এবারে আগাম শুটকি তৈরি করার দামও বেশ ভালো। এসব শুটকি প্রকার ভেদে ৬ হাজার টাকা মন থেকে ১৬ হাজার টাকা মন দরে ব্যাপারিদের কাছে বিক্রি হয়ে থাকে।

এসময় কথা হয় শুটকি চাতালের নারী শ্রমিক ফাতেমা খাতুনের সাথে তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান,প্রতি বছর বন্যার পানি আশায় এ অঞ্চলে ব্যাপক হারে শুটকি তৈরি করা হয়। সংসারের কাজ শেষ করে একটু বাড়তি আয়ের আশায় আমরা এসব কাজ করে থাকি। তবে যে পরিশ্রম করা হয় সে অনুপাতে পারিশ্রমিক আমরা পাই না। সারাদিন কাজ করে ১৫০ টাকা মজুরি পাই। রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে মাছ শুকাতে হয়। আমরা যদি এই কাজের ন্যায্য মুল পেতাম তাইলে আমাদের ভালো হত।

উল্লাপাড়া উপজেলা মৎস্য কমকর্তা বায়েজিদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন,উপজেলার কিছু এলাকায় অল্প পরিসরে শুটকি তৈরি করার কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ মুলত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত শুটকি তৈরি করার মৌসুম। বিশেষ করে উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়ে সব চেয়ে বেশি শুটকি তৈরি করা হয়ে থাকে। উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রতি বছরে ২০ জন করে শুটকি চাষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তারা যেন স্বাস্থ্য সম্মত এবং ভোক্তার জন্য নিরাপদ এবং কোন রকমের কীটনাশক ব্যবহার করা না হয়। এ উপজেলায় যারা মুলত শুটকি চাষের সাথে জড়িত তার সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন।

Loading

error: Content is protected !!