হোম » সারাদেশ » ভালুকায় ৪০ বছরেও ভাগ্যের সুদিন ফেরেনি পত্রিকার হকার আইন উদ্দিনের।

ভালুকায় ৪০ বছরেও ভাগ্যের সুদিন ফেরেনি পত্রিকার হকার আইন উদ্দিনের।

আরিফুল ইসলাম(আরিফ) ময়মনসিংহ, ভালুকা,প্রতিনিধিঃ– ভালুকার হকার আইন উদ্দিনের ৪০ বছরেও ভাগ্যের সুদিন ফেরেনি।ভালুকায় আইন উদ্দিন সুদির্ঘ ৪০ বছর যাবৎ কাঁক ডাকা ভোর হতেই বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ভালুকা পৌর সদর সহ আশপাশের এলাকায় পত্রিকা বিক্রি করে কষ্টেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। হাসিমুখের আইন উদ্দিন হাফ পেন্ট পড়া অবস্থায় পত্রিকা বিক্রি শুরু করেছিলেন এই আইনউদ্দিন।

তিনি ২ ছেলে ও এক মেয়ের জনক। কষ্ট করে ২সন্তানকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে।এখন বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যজু।১৯৭৮ সালের দিকে গফরগাঁও রেলওয়ে বুকষ্টল হতে রেডিও মেকার প্রয়াত বাচ্চু মিয়া মাত্র ১০ কপি দৈনিক সংবাদ পত্রিকা এনে ভালুকায় বিভিন্ন জায়গায় দিয়ে পত্রিকা পাঠক তৈরী শুরু করেছিলেন।পরবর্তীতে পত্রিকা বিতান নামে একটি এজেন্সীর মাধ্যমে গফরগাঁওয়ের বাচ্চু মিয়া ভালুকায় প্রথম সংবাদপত্রের দোকান শুরু করেন।

এর আগে দু’ একটি দৈনিক পত্রিকা নদীপথে লঞ্চ সহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভালুকায় আসতো।পাঠক ছিলেন হাতে গুনা কয়েকজন মাত্র।ওই সময় দোকানপাট অফিস,কাচারী ছিল খুবই কম।ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক চালু হওয়ার পর ভালুকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করে।৮০’র দশকে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে সংবাদপত্রের কদর বেড়ে যায় ভালুকাতেও।বাচ্চু মিয়া ঢাকা হতে সরাসরি পত্রিকা আনতে শুরু করেন।ঠিক ওই সময় পত্রিকা পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে প্রয়োজন হয় হকারের।

ভালুকার রাস্তায় ঘুরতে দেখে আইন উদ্দীনকে পত্রিকা বিক্রির কাজে লাগিয়ে দেন বাচ্চু মিয়া।কিশোর আইন উদ্দীন বাচ্চু মিয়ার বিশ্বস্ত ও অনুগত হয়ে উঠেন।পত্রিকা বিক্রি করে মোটামোটি দুবেলা আহার যোগার করতে সক্ষম হয় এই আইন উদ্দীন।শিল্প কারখানা স্থাপন,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রসার, প্রশাসনের রদবদলে থানা উপজেলায় রুপান্তর হওয়ায় অফিস আদালত বেড়ে যায়।তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে সংবাদ পত্রের চাহিদা।তখন সাইকেল কিনে পিছনের ক্যারিয়ারে বক্স তৈরী করে তাতে সংবাদপত্র বহন করে পাঠককে পৌছে দিতে শুরু করেন আইন উদ্দিন।শিশু আইন উদ্দীন সংবাদপত্র হাতে নিয়ে কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে।সংসারে স্ত্রী,দুই ছেলে নিয়ে কোন রকমে দিন পার করছেন।

বড় ছেলে সোহেল (২৬) ক্যামেষ্ট্রিতে অনার্স মাষ্টার্স শেষ করে একটি ফিড মিলে স্বল্প বেতনে চাকরি করছেন।ছোট ছেলে আনোয়ার (২০) অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছে। মেঝো মেয়ে আমেনার বিয়ে হয়েছে।শত দুঃখ কষ্টের মাঝে স্ত্রী ফাতেমা (৪৫) ঘর সংসার সামাল দিয়ে তার পাশে থেকে দুই ছেলেকে লেখাপড়া করাতে সক্ষম হয়েছেন।বদলেছে দিন কিন্তু বদলায়নি আইন উদ্দীনের ভাগ্যের চাকা।নিরক্ষর আইন উদ্দীন যিনি পত্রিকা দেখেই বুঝে যার কোনটা কি পত্রিকা।

সাইকেলের চাকা ঘুড়িয়ে সংবাদপত্র বিক্রির টাকায় সংসার খরচ চালিয়ে দুই ছেলেকে শিক্ষিত করেছেন।২০১৮ সালের ২জানুয়ারী পত্রিকা বিতানের মালিক বাচ্চু মিয়া মারা যাওয়ার পর তাঁর ছেলে শের-ই বাংলা ব্যবসাটি ধরে রেখেছেন।হকার আইন উদ্দীন জানান, অনেক হকার আসছে গেছে কিন্তু তিনি বাচ্চু ভাইয়ের পত্রিকা বিতান ছেড়ে কোথাও যাননি। বাচ্চু ভাইয়ের কাছে তিনি ঋণ স্বীকার করে বলেন,দুই ছেলেকে শিক্ষিত করতে পেরে আমি খুবই গর্ব বোধ করি।

করোনার কারনে পত্রিকার কাটতি অনেক কমে যাওয়ায় আয় রোজগার কমে গেছে।তাঁর আশা বড় ছেলেটির পাশা পাশি এখন ছোট ছেলেটিও একটি চাকরী পেয়ে সংসারের হাল ধরা।দীর্ঘ ৪০ বছর সংবাদপত্র বিক্রির সাথে জড়িত থেকে আজ তিনি বয়সের ভারে ক্লান্ত।চলার সাথী সাইকেলটি পুরোনো হয়ে গেছে।তাঁর ইচ্ছা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সংবাদপত্র নিয়ে পাঠকের সেবায় হাজির থাকবেন।

error: Content is protected !!