হোম » সারাদেশ » প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় চাকরি হারাচ্ছেন ১৯৯ জন

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় চাকরি হারাচ্ছেন ১৯৯ জন

আজ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৩০ জুন থেকে চাকরি হারাচ্ছেন মডেল হাসপাতালের তকমা পাওয়া কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকসহ ১৯৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আইসিইউ, সিসিইউসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। ফলে জেলার সর্বোচ্চ সরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানটির এই দুঃসংবাদে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন স্বয়ং চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট মহল। উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় রয়েছেন জেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষও।
কক্সবাজারের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবার সরকারি প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালটি জেলার ২৫ লাখ মানুষের পাশাপাশি দেশে আশ্রিত ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির সেবা প্রদান করে আসছে। সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত মোট অর্থের ২৫ শতাংশ স্থানীয় জনগোষ্ঠির কল্যাণে ব্যয় করার আদেশ রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে হাসপাতালটি আধুনিকায়ন ও চিকিৎসা সেবার উন্নত করতে স্থানীয় জনগোষ্ঠির কল্যাণে ব্যয়ের বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নানা প্রকল্প শুরু করা হয়। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিও সংস্থার অধীনে প্রকল্পের মাধ্যমে হাসপাতালের সেবা পরিধি বৃদ্ধি, জনবল নিয়োগ প্রদান করা হয়।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, স্থানীয় জনগোষ্ঠির কল্যাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৬টি সংস্থার অধীনে ১৯৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদায়ন রয়েছে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে। এই ৬টি সংস্থা হল, আইওএম, ইউনিসেফ, ইউএসএফপিএ ও শেড। যেখানে আইসিইউ ও সিসিইউ পরিচালনার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মোট ৪৬ জন চিকিৎসক রয়েছেন।
এছাড়া রয়েছেন নার্স ও মিডওয়াইফ ১৩ জন, বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার ১ জন, মেডিকেল টেকনোলজিস ৫ জন, ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস ২জন, রিডওলজি টেকনোলজিস ২জন, লাইফ অপারেটর ১ জন, অ্যাম্বুলেন্স চালক ১ জন, বৈদ্যুতিক কারিগার ১ জন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৩৮ জন, ওয়ার্ড মাস্টার ১ জন, আনসার সদস্য ১৫ জন, নিরাপত্তা কর্মী ৭ জন, ওয়ার্ড বয়/আয়া ২০ জন, অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) সহযোগি ৬ জন, সিনিয়র ফার্মাসিস্ট ১ জন, ল্যাব সহকারি ২ জন, স্টোর কিপার ১ জন, ডাটা অপারেটর ১ জন, আইএমসআই বিশেষজ্ঞ ২ জন, ক্লিনিক্যাল বিশেষজ্ঞ ৪ জন, সমন্বয়কারি ১ জন, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ১ জন, টিকেট বিভাগে ৫ জন, ম্যানুয়ার ওর্য়াকার ১০ জন, কেস ওর্য়াকার ২ জন, ইডি সহযোগি ৮ জন, স্যানিটারি কর্মী ১ জন। এর বিপরীতে ২৬ জুন প্রাপ্ত তথ্য বলছে, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সরকারি মঞ্জুরীকৃত ৩২৮টি পদের মধ্যে ৭৬টি আগে থেকেই শূন্য রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ছয়টি সংস্থার পরিচালিত প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে আজ ৩০ জুন। ফলে ৩০ জুনের পর আর থাকছে না ১৯৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এতে রোগী ভর্তি-বহি বিভাগ ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবায় নেমে আসতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আশিকুর রহমান জানান, প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ হাজার রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। জরুরি বিভাগে বর্তমানে ১৫ জন চিকিৎসকের পরিবর্তে দুজনকে সামলাতে হবে এবং এটি কোনভাবেই সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা নিয়ে তৈরি হবে জটিলতা। এমন পরিস্থিতিতে এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মং টিং ক্রো বলেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থা প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বাস্থ্য বিভাগের আলাপ আলোচনা চলছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো. মাহবুবুর রহমান জানান, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ চালুর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আজ পর্যন্ত চালু হয়নি। যার কারণে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের উপর জেলাবাসী ও বৃহৎ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নির্ভরশীল। এটা দ্রæত সময়ের মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণে ব্যর্থ হলে চিকিৎসা সেবায় বেহাল পরিস্থিতি তৈরি হবে।
-মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী-

Loading

error: Content is protected !!