হোম » সারাদেশ » নির্মাণ সামগ্রী রেখে খেলার মাঠ দখল, কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকায় ক্রীড়া প্রেমীদের ক্ষোভ

নির্মাণ সামগ্রী রেখে খেলার মাঠ দখল, কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকায় ক্রীড়া প্রেমীদের ক্ষোভ

বগুড়ার ধুনটে ঠিকাদার কর্তৃক খেলার মাঠে সড়ক সংস্কার সামগ্রী রাখায় স্থানীয় ক্রীড়া প্রেমীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ ক্ষোভের প্রকাশ পেয়েছে। 
জানা যায়, পাঁচথুপি নছরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জাহের আলী উচ্চ বিদ্যালয় মিলে একটি মাঠ। নছরতপুর, পাঁচথুপি, বিষ্ণপুর, বহালগাছা, শ্যামবাড়ী, রুদ্রবাড়িয়া, ক্ষুদ্রপীরহাটি সহ আশেপাশে আরো দুই তিনটা গ্রাম মিলে একমাত্র এই মাঠেই খেলাধুলা করে থাকে। সম্প্রতি ওই মাঠের দক্ষিণ পাশ থেকে পাঁচথুপি আমগাছ তলা নামক স্থান পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তা মেরামতের জন্য এলজিইডি অফিস থেকে কাজ নেয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত কয়দিন আগে সে রাস্তা মেরামতের জন্য ঠিকাদার স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে মাঠের নির্মাণ সামগ্রী রাখার অনুমতি নেয় এবং খোয়া,পাথর, বালু সহ নির্মান কাজে ব্যবহৃত যাবতীয় মালামাল নিয়ে এসে মাঠের ভিতরে রাখে। পরে মাঠটিতে খেলতে এসে এসব দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা যুবকেরা। কেউ বলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি অর্থের বিনিময়ে মাঠটি ভাড়া দিয়েছে, আবার কেউ কেউ বলছে মাঠটি নষ্ট করতেই একটি চক্র মাঠে বাজার বসিয়ে চাঁদা সহ মাঠে সড়ক সংস্কার কাজের জন্য ভাড়া দিয়েছে। পূর্বেও এই মাঠে বেশ কিছু ঠিকাদার তাদের নির্মান সামগ্রী রেখেছিল। পরবর্তীতে মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা অবশিষ্ট (ইটের খোয়া, পাথর) সামগ্রীর কারনে খেলাধুলার সময় আহত হয়েছে অনেকে। তাছাড়া অনুমোদন না থাকলেও এই মাঠেই নিত্যপন্য ও কাঁচাবাজার বাজার বসে থাকে। সামগ্রী রাখার কারনে যেমন বাজার বসতেও সমস্যা হয়, তেমনি সংস্কার বা নির্মান পরবর্তী সময়ে মাঠ পরিস্কার করতেও সমস্যা হয়। অনেক সময় স্থানীয়ভাবে খেলা প্রেমীদের নিজেরা চাঁদা উঠিয়ে মাঠ পরিস্কার করে খেলাধুলার জন্য উপযোগী করতে হয়।
কার কারনে, কাদের সাথে কথা বলে কিভাবে মাঠে এ সকল সামগ্রী রাখা হয়েছে তা কারো জানা না থাকলেও প্রশাসন বিষয়টি অবগত কিনা এ নিয়ে ক্রীড়া প্রেমীসহ স্থানীয়দের মাঝে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্রীড়া প্রেমী জানান, কে বা কারা এই মাঠে পাথর-খোয়া রাখা, পিচ গলানোসহ অন্য যেকোনো কাজে ভাড়া দিয়েছে কিনা তা সবারই জানা দরকার। তবে মাঠের ভিতর এসব সামগ্রী রাখার সময় অনুরোধ করার পরেও তারা কর্ণপাত করেনি। মাঠে শুধু নির্মাণ সামগ্রী রাখা’ই নয়, এই মাঠ নিয়ে স্থানীয়রা জানিয়েছে আরো নানা অভিযোগ। এই মাঠে বাজার বসিয়ে, মাঠ সংষ্কারের জন্য চাঁদা তুলে সেই টাকা মাঠ সংষ্কারের কাজে ব্যয় হয়নি কখনোই! আবার অনেকে বলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের ম্যানেজ করেই হয়তো ঠিকাদার নির্মান সামগ্রী রাখতে পারে।
এ বিষয়ে জাহের আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলীম বলেন, রাস্তার কাজটি হচ্ছে সরকারি কাজ, স্কুল মাঠটিও সরকারি। তাই সড়ক সংস্কার সামগ্রী রাখার জন্য ঠিকাদার অনুরোধ করলে আর না করিনি। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন এ মাঠে এর আগেও রাস্তার কাজের জন্য মালামাল রাখা হয়েছে। তখন কেউ কিছু বলেনি। তখন যদি কেউ কিছু বলতো তাহলে আমরা মাঠে পাথর খোয়া রাখার অনুমতি দিতাম না। আমি ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শেষ করে মাঠ খেলার উপযোগী করে দিতে বলেছি।
উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা মনিরুল সাজ রিজন জানান, রাস্তার কাজে নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার জন্য ঠিকাদার জায়গা নির্ধারণ করে থাকেন। এ বিষয়ে আমি তাকে কোনো নির্দেশনা দেইনি। তিনি আরও বলেন এ কাজগুলো করতে আমরা ঠিকাদারকে আগে কোন প্রে করি না। সরকারি রাজস্ব বাচাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অল্প খরচ করার জন্যই সড়ক সংস্কার কাজের সামগ্রী রেখেছে। খেলার মাঠটি যেহেতু সরকারি, রাস্তার কাজও সরকারি তাই এলাকার মানুষের ওভাবে না দেখে সহযোগীতা মূলক মনোভাবে দেখা  উচিত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান জানান, রাস্তা সংস্কারের জন্য মাঠের এক পাশে কিছু জায়গা নেওয়া হয়েছে। আমি ইন্জিনিয়ারকে বলেছি কাজ শেষে মাঠটি খেলার উপযোগী করে দিতে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা  বলেন, এ বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ভাড়া দেয়ার কোনো বিধান নেই। আর যদি ভাড়া দিয়ে থাকেন, এর সব দায়-দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
-এম এ রাশেদ-

Loading

error: Content is protected !!