হোম » সারাদেশ » এই পৃথিবীতে যাকে যেভাবে চান ক্ষমতার মালিক বানান

এই পৃথিবীতে যাকে যেভাবে চান ক্ষমতার মালিক বানান

মোহাম্মদ হানিফ, নোয়াখালী প্রতিনিধি : এই পৃথিবী আমাদের কত সুন্দর, মনোহর ও চিত্তাকর্ষক মনে হয়। আসলে কী তাই? না, এমনটি নয়। এই দুনিয়া হলো পরীক্ষা কেন্দ্র। এখানকার পরীক্ষায় যে উত্তীর্ণ হতে পারবে তার জন্যই অপেক্ষাএই পৃথিবীতে আমরা সবাই ক্ষণিকের অতিথি। এই পৃথিবীতে ছিলাম না, আজ আছি, কাল আবার থাকব না। লক্ষ কোটি বছর ধরে বহমান এই পৃথিবীর এটাই চিরন্তন নিয়ম। এই নিয়মের ব্যতিক্রম অতীতেও ঘটেনি, ভবিষ্যতেও ঘটবে না। সুতরাং আমরা যারা আজ এই পৃথিবী নামক গ্রহটির বাসিন্দা, আমরাও সময়ের পরিক্রমায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চিরতরে চলে যাবো। মরণের মাঝ দিয়ে পৃথিবীর সব কিছুর সাথে একজন মানুষের সম্পর্ক চিরতরে ছিন্ন হয়। 
এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়। পরকালের গৃহেই রয়েছে প্রকৃত জীবন। এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। একদিন এ জগতের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই মানুষের উচিত আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে আল্লাহর বিধানকে ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বত্র পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। এছাড়া পরকালীন জীবনে সফলতার আশা করা বৃথা।
আত্মীয় স্বজন, প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হয়। ধন সম্পদ, বাড়ি গাড়ি, প্রভাব প্রতিপত্তি, ক্ষমতা কোন কিছুই আমাদের সাথে যাবে না। যেই অর্থসম্পদ, আভিজাত্য এবং ক্ষমতার জন্য এত মারামারি এবং হানাহানি, সেই অর্থসম্পদ, আভিজাত্য এবং ক্ষমতা সবই অটোমেটিকেলি পর হয়ে যায়। আবার এই মৃত্যু কার জীবনে কখন আসবে সেটা কেউ জানে না। কে কত বছর বাঁচবে সেটাও জানার কোন সুযোগ নেই। সুতরাং এই পৃথিবীতে মানুষের জীবন যেখানে খুবই ক্ষণস্থায়ী এবং অনিশ্চয়তায় ভরা, সেখানে আমাদের সবারই উচিত এই ক্ষণস্থায়ী জীবনকে সুন্দর, সুখী এবং শান্তিময় করা।
আমাদের উচিত ভালোবাসায়, মমতায় এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে জীবনকে গড়ে তোলা। তার জন্য আমাদের সবাইকে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে হবে। এই পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব এবং আগমন মানুষের ইচ্ছায় হয়নি। আবার এই পৃথিবীতে মানুষের অবস্থানের সময়টা তার ইচ্ছামত এবং প্রয়োজনমতও হয় না। একইভাবে মানুষের ইচ্ছানুযায়ী মানুষের মৃত্যু হয় না। এসবের নিয়ন্ত্রণ মানুষের হাতে নেই। মানুষের জীবন ধারণের জন্য যা প্রয়োজন তার সবকিছুই এই পৃথিবীতে বিদ্যমান।
 আবার এর কোনটিই মানুষের নিজের হাতে সৃষ্টি নয়। আজ পর্যন্ত অক্সিজেন, পানি এবং খাবারের অভাবে কোনো মানুষের মৃত্যু হয়নি। এ ক্ষেত্রে যে সঙ্কট তা মানুষে মানুষে বিভেদে সৃষ্টি। মানুষে মানুষে হিংসা, হানাহানি, যুদ্ধ-বিগ্রহে আজ প্রতিদিন পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে এবং আহত হচ্ছে। এই ধ্বংসযজ্ঞে ধ্বংস হচ্ছে মানুষের জীবন। প্রতিদিনই কোন না কোন মানুষ আত্মহত্যা করছে। এভাবে মানুষের জীবন থেকে শান্তি বিদায় নিচ্ছে, অশান্তির জন্ম হচ্ছে। মানুষের জীবন হচ্ছে বিপর্যস্ত, দুঃখ আর কষ্টে নিমজ্জিত। অথচ আমাদের সুন্দর চিন্তা, কর্ম এবং উদ্যোগ এই পৃথিবীর সকল মানুষের জীবনকে সুন্দর এবং শান্তিময় করতে পারে।
সবার জীবনকেই আনন্দময় এবং সুখী করতে পারে। আর এটাই তো মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। অথচ মায়া, মমতা এবং ভালোবাসাই এখন মানুষের জীবনে সবচেয়ে কম। তাইতো বলি- জীবন সেতো কিছুদিনের মিলনমেলা তবু কেন এত কম ভালোবাসা। এই পৃথিবীতে মানুষের জীবনকে সুন্দর এবং সুখীময় করতে হলে আমাদের সবাইকে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে হবে। জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সবাই চায় মানুষ সত্য কথা বলুক, মিথ্যা বলা পরিহার করুক। কারণ সত্য কথা মানুষের মাঝে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং মিথ্যা কথা অসুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে। অথচ মানুষ এখন হরদম মিথ্যা কথা বলে। তাই সমাজে এত অশান্তি। আমার আপনার মতো প্রতিটি মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক কিছু অধিকার আছে।
সেগুলো হচ্ছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার অধিকার। সাথে রয়েছে মানুষের ধর্ম পালনের অধিকার এবং রাজনৈতিক অধিকার। মানুষ মাত্রই ধর্মে বিশ্বাসী। ধর্মে বিশ্বাস করে না এমন মানুষের সংখ্যা একেবারেই কম। অথচ আজকের পৃথিবীর বহু দেশে বহু সমাজে বহু মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরা সংখ্যালঘিষ্ঠ মানুষদেরকে ধর্ম পালনে বাধা দিচ্ছে। ফলে সংখ্যালঘিষ্ঠ মানুষদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষোভ, ঘৃণা এবং বিদ্রোহ। ফলে সমাজ অস্থির হচ্ছে, সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। ফলে একটি দেশের মধ্যে বসবাসকারী আন্তঃধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে, অশান্তির জন্ম নিচ্ছে।
যা ক্রমান্বয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের জীবন। সুতরাং আসুন আমরা সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান করি, তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং অধিকারকে রক্ষা করি। একই সাথে যারা ধর্মকে অস্বীকার করে নাস্তিক হিসেবে জীবন যাপন করতে চান তাদের প্রতি অনুরোধ আপনারা ধর্মকে অস্বীকার করুন এবং নাস্তিক হউন, এতে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। তবে অনুগ্রহ করে অন্যের ধর্ম, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ধর্মীয় অধিকারকে অবজ্ঞা করবেন না।
কারণ এতে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হয়। আর এটা গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, শিষ্টাচার ও সভ্যতার বহির্ভূত কাজ। রাজনৈতিক অধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার হলেও পৃথিবীর অনেক দেশেই এখনো মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অনেক দেশেই এখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়নি। জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার এই যুগেও দেশে দেশে চলছে রাজতন্ত্র, সামরিকতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্র। যার কারণে বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে, সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে এবং মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। তাই দেশে দেশে ক্ষমতায় থাকা স্বৈরাচারদের উদ্দেশে বলছি, আপনারা কিন্তু চিরদিন ক্ষমতায় থাকবেন না।
মৃত্যু অবশ্যই অবশ্যই আপনাদেরকে গ্রাস করবে। ফেরআউন, নমরুদ. আবু জেহেল আবু লাহাবের মতো ব্যক্তিদের.ও আলেকজেন্ডার দ্যা গ্রেটের মত ক্ষমতাধর শাসকেরা আজ কেউ নেই। সময়ের পরিক্রমায় সবাই হারিয়ে গেছে। তাদের সেই ক্ষমতাও নেই, সাম্রাজ্যও নেই, সম্পদও নেই। আজ তাদের কেউ স্মরণও করে না। সুতরাং শুধু শুধু মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তো কোনো লাভ নেই। মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার দিন, তাহলে জনগণের ভালোবাসায় আপনারা হবেন সত্যিকারের নায়ক এবং সম্রাট।
ক্ষমতা ক্ষমতাবানের কাছে আমানতস্বরূপ ক্ষমতা চিরস্থায়ী বস্তু নয়। মানুষ ক্ষমতার জন্য উন্মাদ হয়ে যায়। ক্ষমতায় থাকার জন্য, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, রাজ্য জয়ের জন্য, দেশ দখলের জন্য ক্ষমতাপাগল মানুষগুলো দানবের রূপ ধারণ করে। ক্ষমতান্ধদের লড়াইয়ে কেউ না কেউ জয়ী হয়। তবে সব সময় পরাজিত হয় মানবতা ও সাধারণ জনগণ। ক্ষমতার মদমত্ত মানুষগুলো ভুলে যায় ক্ষমতা কোনো চিরস্থায়ী বস্তু নয়।
আল্লাহতায়ালা সব ক্ষমতার মালিক। তিনি পৃথিবীতে যাকে যেভাবে চান ক্ষমতার মালিক বানান। প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থানে কিছু না কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমতার মালিক হয়ে থাকে। আর তার অধীনে থাকে কমবেশি মানুষ। যারা তাকে মান্য করে ভয়ে কিংবা শ্রদ্ধায়। এমতাবস্থায় ক্ষমতাধর ব্যক্তি যদি মহান আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী ইনসাফের সঙ্গে ক্ষমতার ব্যবহার না করে তাহলে তা জুলুম হবে। আর মহান আল্লাহ জালেমদের পছন্দ করেন না। যারা জুলুম করে তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জাহান্নামের ভয়ংকর শাস্তি।
যে যত বড় পদে কাজ করে তার দায়িত্ব তত বড় এবং পরকালে তার হিসাবও বেশি। তাই আল্লাহতায়ালা কাউকে কোনো বড় পদে অধিষ্ঠিত করলে তার উচিত যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করা। অন্যথায় দায়িত্বে অবহেলা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। মনে রাখবেন আল্লাহ তাআলা  ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর তোমরা প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কথাগুলোর উপরে আমল করার তৌফিক দান করেন । আখেরাতের ফিকির ওয়ালা দিল  দান করেন । জিকিরওয়ালা জিব্বা দান করেন । আখেরাতের কান্না ওয়ালা চক্ষু দান করেন  গুনার প্রতি ঘৃণা জন্মাইয়া দেন।  জালেম দুশমন মুনাফিকের হাত হতে কুদরতি হাতে হেফাজত করেন আমিন

Loading

error: Content is protected !!