হোম » সারাদেশ » মিয়ানমারে গুলির শব্দে কাঁপছে সীমান্ত 

মিয়ানমারে গুলির শব্দে কাঁপছে সীমান্ত 

মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী: মিয়ানমারে সামরিক জান্তার সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ, রাজ্য দখল, উদ্ধার, হতাহতের ঘটনা দীর্ঘদিনের গেল সপ্তাহ থেকে আবারো সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। 
জানা গেছে , গত শুক্রবার ও শনিবার বিকেলে রাখাইনের রামরি শহরে বোমারু বিমান নিয়ে আরাকান আর্মির ওপর হামলা চালায় ‘তাতমাদো’ নামে পরিচিত মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী। এ ছাড়া একই দিন ভোর থেকে রাখাইনের ‘বুচিডং’ ও ‘ফুমালি’ নামক রোহিঙ্গা -অধ্যুষিত এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের উলুবনিয়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের বসত ঘরে মিয়ানমার থেকে ছোড়া এসে পড়েছে। এনিয়ে টেকনাফ সীমান্তবর্তী শাহপরীর দ্বীপেও ভারী গুলির শব্দে স্থানীয়দের মধ্যে আবারও ভয়ভীতি দেখা দিয়েছে।এমন কি সীমান্ত এলাকায় হেলিকপ্টার চক্কর দিতেও দেখা যাচ্ছে বলে জানান সীমান্তে বসবাসকারী মাং জানান।
এ বিষয়টি জানিয়েছেন নুরুল ইসলামের শাশুড়ি সামজিদা বেগম। তিনি বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্তের মিয়ানমারের ওপারের মর্টারশেল ও গোলাগুলির শব্দ এপারে ভেসে আসতেছে। আমরা ভয়ে ও আতঙ্কে নিরাপদে সরে গেছি। হঠাৎ দেখি ভারী একটা গুলির শব্দ হলো। তখন দেখি আমার মেয়ের জামাইয়ের বসতঘরে টিনের দরজা ছিদ্র হয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে একটি গুলি। তখন আমরা আতঙ্কের মধ্যে পড়ে গেছি। পরে বিজিবির সদস্যরা খবর পেয়ে তারা এসে বসতঘরের উঠান থেকে গুলিটা নিয়ে যায়।
সীমান্তে বসবাসকারী মানুষদের ভাষ্য, শুক্রবার বিকাল থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত সীমান্তে থেমে থেমে ভারী গুলিবর্ষণের বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছেন তারা। এছাড়া তুমব্রু সীমান্তের ঘুমধুমের বাজার পাড়ায়, বাইশ ফাঁড়িসহ তুমব্রু রাইট এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং ও শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে ভারী গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সীমান্তে বসবাসকারী মানুষ।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মো. সোলেমান বলেন, মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির শব্দে বাড়ি ঘরে থাকতে পারছি না। শনিবার নুরুল ইসলামের বসতঘরে একটি গুলি এসে পড়েছে। তিনি আরোও বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে এই সীমান্তের ওপারে মর্টারশেল ও গুলির শব্দে অনিরাপদ মনে করছি। সন্তান নিয়ে রাতে ও দিনে সবসময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এ বিষয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায় গুলির শব্দ পাওয়া যায়। ভয়ে আমরা বাড়ি-ঘরে থাকতে পারছি না। চিংড়ি ঘেরেও যেতে পারছি না। সীমান্তের ওপারে ফায়ার চলাচলের সময় একটি গুলি এপারে উলুবনিয়ার নুরুল ইসলামের বসত ঘরে এসে পড়ে। এখনো সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলি চলছে।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আহমেদ আনোয়ারী জানান, শনিবার সকালে মিয়ানমার থেকে  মর্টারশেলের মতো বিকট শব্দ শোনা গেছে। বিষয়টি সীমান্ত এলাকায় দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি’। নতুন করে কোন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উক্ত বিষয়টি তার জানা নেই। এ বিষয়ে টেকনাফ ২বিজিবি অধিনায়ক লে: কর্ণেল মো.মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, টেকনাফ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে নতুন করে ফের ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। তিনি আরো বলেন, গত ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে ওপারে যুদ্ধ চলছে। এরপর থেকে সীমান্তে নিয়মিত টহল পাটিকে আরো জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের বিজিবি সৈনিকরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, যাতে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে।
টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনেছি মিয়ানমার থেকে এপারে উলুবনিয়া সীমান্তের একটি বসতঘরে গুলি এসে পড়েছে। গোলাগুলির এ ঘটনায় স্থানীয়দের নিরাপদে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
error: Content is protected !!