হোম » শিক্ষা » করোনাকালীন শিশু-কিশোরদের অধ্যয়ণ

করোনাকালীন শিশু-কিশোরদের অধ্যয়ণ

 জুলফিকার বকুলঃ দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত। এই অবস্থার জন্য মরণ ভাইরাস করোনা দায়ী। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের কাছে পরাভূত হয়ে শিক্ষার্থীরা আজ ঘরে বন্দী। তাদের কৌতুহলী মনও অবরুদ্ধ হয়ে নিজের কাছে প্রতিবাদী হয়ে উঠছে। নিত্যসঙ্গী বইয়ের সাথে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সখ্যতা।কেউ কেউ আবার পারিবারিক চাপে অনুরোধে ঢেঁকি গিলছে।কিন্তু এই অনিচ্ছাকৃত অধ্যয়ণ কতটুকু ফলপ্রসূ হচ্ছে তা ভাবার বিষয়।ফলপ্রসূ অধ্যয়ণের জন্য একজন শিক্ষার্থীর মানসিক প্রস্তুতি ও ইচ্ছাশক্তি প্রবল থাকা পূর্ব শর্ত।শিক্ষার্থীরা যেমন পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে খাপখাইয়ে বেড়ে উঠে তেমনি তাদের মধ্যে প্রবল ইচ্ছাশক্তি কাজ করে।

এই ইচ্ছাশক্তিকে পুরোপুরি যথাযথ ব্যবহার করে মেধায় পরিনত করা সম্ভব।আর এই কাংখিত মেধা অর্জনে শিক্ষার্থীর একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়েরই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সদিচ্ছা পোষণের উপর নির্ভর করে।সরকার জন নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বন্ধ রাখলেও বিভিন্ন ভাবে শিক্ষার্থীর নিয়মিত অধ্যয়ণের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে।দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাবিদরা শিক্ষার্থীর মনস্তাত্ত্বিক উদ্দীপনা সৃষ্টি সহ দেশ ও জাতির এই ক্লান্তিলগ্নে ঘরে বসে অধ্যয়ণ কৌশলের রোডম্যাপ প্রদান করে যাচ্ছেন।এখন প্রশ্ন হলো শিক্ষার্থীর জন্য নিয়মিত অধ্যয়ণ কেন প্রয়োজন? একজন মেধাবী শিক্ষার্থী শুধু দেশের সম্পদ নয় বাবা-মা ও নিজের কাছে সম্পত্তিও বটে।প্রতিটি মানুষ বড় হতে চায়।জ্ঞান, অর্থ, সম্মান ইত্যাদি পরিপূর্ণ ভাবে পেতে চায়।এই পরিপূর্ণতা অর্জনে কঠোর পরিশ্রম করা একজন শিক্ষার্থীর জন্য অনস্বীকার্য।

করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের হাতে পর্যাপ্ত সময় রয়েছে।যা সঠিকভাবে কাজে লাগালে জ্ঞান অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।এ সময়টাতে একটা বিশেষ রুটিন মাফিক শিক্ষার্থীরা তাদের নিয়মিত অধ্যয়ণ চালিয়ে যেতে পারে।দিনে ৫/৬ ঘন্টা অর্থাৎ দিনের এক-চতুর্থাংশ সময় যদি তারা মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ণ করে তবে তারা বিনোদন সহ অন্যান্য পছন্দের কাজগুলো করতে পারবে।এতে করে কয়েকটি ইতিবাচক অভ্যাস ও অনুশীলন তার মধ্যে গড়ে উঠবে। সময়ানুবর্তিতা, অধ্যবসয় সহ মানসিক প্রফুল্লতা সৃষ্টি হবে।যা শিক্ষার্থীর শরূর ও মনকে সতেজ রাখবে।মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের কথা যদি বলি তবে,তারা এখন কিশোর বয়সের। কারো কারো বয়ঃসন্ধিকাল চলছে।আমি মনে করি এখন তারা এই আধুনিক ও প্রযুক্তির যুগে অনেকটাই বোঝে।এই বয়সে প্রয়োজন শুধু সঠিক গাইডলাইন ও প্রেরণা। যা খুব ভাল কাজ দেয়।তাই অভিভাবক সহ শিক্ষককে মটিভেটর এর ভূমিকা পালন করতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু ভিন্ন।তবে শিশুমনের সাথে মিশে গিয়ে শিশুকে শেখানো একটি অভিনব প্রক্রিয়া। তাই শিশুদের কে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।তাদের ভাল লাগার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে।’দৈনিক যুগান্তর ‘ পত্রিকায় প্রকাশিত অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী -এর লেখা ‘ প্রাথমিক শিক্ষা হতে হবে আনন্দদায়ক’ হতে,” শিক্ষার সঙ্গে কল্পনাশক্তি প্রয়োগের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।কল্পনাশক্তি মানুষের মধ্যে চিন্তাশক্তি সৃষ্টি করে।ভিন্ন ভিন্ন ভাবে মানুষ ভাবতে পারে বলে ভাবনার বৈচিত্র্য পৃথিবীতে নতুন নতুন ধারণা দিয়ে প্রভাবিত করে।এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রাথমিক শিক্ষাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে,যেন শিশিদের ভাবনা গতানুগতিক ও একমূখী না হয়ে আধুনিক ও বহুমাত্রিক হয়।”

শিশুদের মধ্যে নিয়মিত চর্চ্চা ধরে রাখার জন্য আগে প্রয়োজন শিশুমন কে বুঝতে পারা।শিশুমনের কৌতুহলকে জাগ্রত করলে একাই বই নিয়ে পড়তে বসে।আর পছন্দ -অপছন্দ অনুভব না করে চাপ দিয়ে পড়তে বসালে শিশুমনে ক্ষোভ ও বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।তাছাড়া, খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, যেন পরিবারে কোন ভাবেই ঝগড়া – বিবাদ সৃষ্টি না হয়।কারণ,পারিবারিক কলহ একটি শিশুর মনকে নষ্ট করে তার পাঠোভ্যাস থেকে তাকে দূরে নিয়ে যেতে পারে।আমাদের প্রতিটি বাবা-মার জানা উচিৎ যে,জন্ম দিলেই বাবা- মা হওয়া যায়না।সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তার কাংখিত লক্ষ্যে পৌছে দিলেই কেবল গর্বিত বাবা- মা হওয়া যায়।বিখ্যাত পরমানু বিজ্ঞানী ড. এ পি জে আবুল কালাম বলেছেন,” তুমি যা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো তা স্বপ্ন নয়, যা তোমাকে ঘুমাতে দেয়না তাই স্বপ্ন। ” আর আমি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বাড়ি, গাড়ি, অর্থ আপনার প্রকৃত সম্পত্তি নয়,একটি সুশিক্ষিত সন্তানই আপনার প্রকৃত সম্পদ ও সম্পত্তি। তাই সন্তানকে ভালবাসুন,কাছে টানুন, ভয় মিথ্যা না শিখিয়ে নৈতিকতার শিক্ষা দিন, মানবিক করে গড়ে তুলুন।অপেক্ষা ও কামনা করুন খুব তারাতাড়ি এই করোনা থেকে মুক্তি পাব এমনটাই প্রত্যাশা করছি।

লেখকঃ জুলফিকার বকুল
শিক্ষক, ঢাকা ইন্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল, ডুয়েট ক্যাম্পাস,গাজীপুর।

error: Content is protected !!