হোম » ধর্ম » অধিবাসের মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় দুদিনব্যাপী রাস পূজা শুরু

অধিবাসের মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় দুদিনব্যাপী রাস পূজা শুরু

আওয়াজ অনলাইন : সাগরকন্যা কুয়াকাটায় আজ থেকে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শত বছর ধরে চলে আসা রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান।  

টানা দুই দিনব্যাপী রাসমেলা আজ রোববার (২৬ নভেম্বর) অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে সোমবার (২৭ নভেম্বর) ভোরে গঙ্গাস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন রাস পূজা ও মেলা আয়োজক কমিটি।

ইতোমধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গঙ্গাস্নান এবং রাস উৎসবে আগত পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে রাসমেলা আয়োজক কমিটি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

উৎসব ঘুরে দেখা গেছে, রাস উৎসবকে সামনে রেখে শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ  মন্দিরে প্রতিমায় রং তুলির আঁচরে ভিন্নতা পেয়েছে প্রতিমাগুলো। মেলায় অংশগ্রহণ করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাসমান দোকানিরা কুয়াকাটায় আসছে।

বিগত বছরে এ মেলায় বিভিন্ন ধর্ম বর্ণের প্রায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম হত। মাঝে দুই বছর করোনা আর এবার যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ নিয়ে অস্বস্তি বিরাজমান আয়োজকদের মধ্যে। আয়োজকদের কমতি নেই ভক্তবৃন্দকে বরণ করতে, তবে শঙ্কাও কাজ করছে হরতাল আর অবরোধের কারণে উপস্থিতি নিয়ে।

পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গঙ্গাস্নান ও রাসমেলা উৎসবকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও কুয়াকাটা পৌরসভা দফায় দফায় মেলা উদযাপন কমিটি ইতোমধ্যে বৈঠক করেছেন। ব্যাপক সংখ্যক আগত পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের তরফ থেকে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। পুলিশের পাশাপাশি নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেকোনো নাশকতা রোধে আনসার, র‌্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মোতায়েন করা হয়েছে।

অপরদিকে গঙ্গাস্নান ও রাসমেলায় আগত হাজার হাজার পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের সমাগমকে সামনে রেখে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে হোটেল মোটেল ও পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।

এ বিষয়ে শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ মন্দিরের পরিচালক ও পুরোহিত ব্রহ্মচারী শিশির মহারাজ জানান, আগত হাজার হাজার পুণ্যার্থীদের সমন্বয়ে রোববার শ্রী কৃষ্ণের মহা নামযজ্ঞের মধ্য দিয়ে এ রাস পূজা আরম্ভ হবে এবং ২৭ নভেম্বর (সোমবার) বিকেলে শ্রী কৃষ্ণের নামযজ্ঞ শেষে স্নানের মধ্যে দিয়ে রাস পূজা শেষ  হবে।

তিনি আরও বলেন, রাস উৎসব শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয়ভাব ধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের রসপূর্ণ অর্থাৎ তাত্ত্বিক রসসমৃদ্ধ কথা বস্তুকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবাত্মা থেকে পরমাত্মায় রূপান্তরিত করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ উৎসব পালন করে থাকে। প্রচলিত বিশ্বাসের জায়গা থেকে তারা মনে করে বঙ্গোপসাগরে জোয়ারের স্নানের মধ্যে দিয়ে জাগতিক পাপ মোচন হয়ে থাকে।

কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ জানান, মেলায় আগত দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীদের বরণ করতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন। পর্যটকরা হোটেলে রাত্রি যাপনে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় পাবে। অতিরিক্ত দর্শনার্থীদের চাপকে পুঁজি করে কোনো হোটেল মালিক যাতে ফায়দা লুটতে না পারে সেদিকে নজর রাখা হবে।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের ওসি হাসনাইন পারভেজ বলেন, যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ ধর্মীয় উৎসবকে সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে শেষ করার জন্য যা যা করার তা করব। কুয়াকাটার দর্শনীয় স্পটগুলো ও মন্দিরের আশপাশে আমরা নিরাপত্তার বলয় তৈরি করব।

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, রাসমেলা উপলক্ষে আগত পর্যটক ও পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় আমরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছি এবং প্রশাসনও সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রাসমেলা ও রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে আগত ভক্তবৃন্দকে নিরাপত্তা দিতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী করা হয়েছে।

error: Content is protected !!