হোম » রাজনীতি » ভোলা-৩ আসন তৃনমুলের অপেক্ষা আওয়ামী লীগে শাওন, বিএনপিতে হাফিজ 

ভোলা-৩ আসন তৃনমুলের অপেক্ষা আওয়ামী লীগে শাওন, বিএনপিতে হাফিজ 

মেহেদী হাসান মামুন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১৭, ভোলা-৩ (তজুমদ্দিন-লালমোহন) আসনে ভোটাররা অপেক্ষায় আছেন জমজমাট নির্বাচনী লড়াইয়ের। আওয়ামী লীগের শাওন আর বিএনপির হাফিজের মধ্যেই কেবল গড়ে উঠবে প্রতিদন্ধিতা। বড় দুই দলে এই দুজন প্রার্থী হলেই কেবল তীব্র লড়াই হবে। কেন্দ্র থেকে এর ব্যতিক্রম প্রার্থী নির্বাচন করলে নিশ্চিত আসন হারাতে হবে বলেই মনে করেন উভয় দলের তৃণমূল পর্যায়।
 বিএনপি ভোটে না আসলে শেষ মুহূর্তে সাবেক মন্ত্রী ও ৬ বারের সাংসদ মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন অন্য কোন দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। তাই হাফিজের সাথে প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করলে আসন হারাতে হতে পারে আওয়ামী লীগকে। সাধারণ ভোটাররাও তাই ২০১০ সালের উপ-নির্বাচনের মতো এমন একটি প্রতিদন্ধিতাপূর্ণ নির্বাচন চায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
আওয়ামী লীগ থেকে এখন পর্যন্ত ছয় প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও মেজর (অবঃ) হাফিজ নির্বাচনে প্রার্থী হলে পাল্টে যাবে ভোটের সমীকরণ। শাওন ছাড়া হাফিজের সাথে আওয়ামী লীগের অন্যকোন প্রার্থী ভোটের মাঠে দাড়াতেই পারবেনা বলে অভিমত সাধারনের। আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলের নেতা কর্মিদের বক্তব্য, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন প্রার্থী না হলে হাফিজ আবারও নিজের হারানো আসনটি ফিরে পেতে তেমন বেগ পেতে হবেনা।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, ভোলা-৩ (লালমোহন ও তজুমদ্দিন) আসনে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোতাহার হোসেন মাস্টার ও ১৯৭৯ সালে নজরুল ইসলাম বিজয়ী হন। এরপর আসনটি চলে যায় মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বীরবিক্রমের কাছে। তিনি জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এসব নির্বাচন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন। আইনি জটিলতার কারণে দুই বছরের মাথায় আসনটি শূন্য হয়। ২০১০ সালের উপনির্বাচনে হাফিজ উদ্দিনকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী নূরনবী চৌধুরি শাওন। তৎকালীন কেন্দীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাওনের সাংগঠনিক দক্ষতায় ঝিমিয়ে পড়া লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে এবং ২০১৮ সালে বিএনপির হাফিজকে হারিয়ে তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন।
তার সময়ে শাওন লালমোহন ও তজুমদ্দিনের নদীভাঙন সমস্যা সমাধানে প্রায় সাড়ে ২৫০০ কোটি টাকার সিসি ব্লক ও নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন। দুর্গম চরাঞ্চলসহ এলাকার ৯০ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুতায়ন ও সজীব ওয়াজেদ ডিজিটাল পার্ক স্থাপন করেন। ফায়ার স্টেশন, স্কুল-কলেজ স্থাপন, নতুন ভবন, অসংখ্য পুল-কালভার্ট, উপজেলা কমপ্লেক্সসহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেন। আগামী নির্বাচনের জন্য দুই উপজেলার আওয়ামী লীগকে সু-সংগঠিত করে মাঠও গুছিয়ে নিয়েছেন। সে কারনে দলের মধ্যে শাওনের বিকল্প চিন্তার সুযোগ নেই বলেই মনে করছেন অনেকে।
অন্যদিকে, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রবিবার দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আবু নোমান হাওলাদার, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি এবং হরাইজন গ্রুপের সিইও ইঞ্জিনিয়ার মীর মোবাশ্বের আলী স্বপন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন সোহেল, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ কামরুজ্জামান শাহ। বর্তমান এমপি আলহাজ্ব নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন সোমবার দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তজুমদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক দেওয়ান জানান, এই আসনে গত ১৫ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন ও তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করেছেন বর্তমান সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। হাফিজের সাথে শাওন ব্যতীত অন্য কেউ এই আসনে ভোটের মাঠে লাড়াই করতে পারবেনা। তাই তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও এই আসনটিতে দলের জয় নিশ্চিত হবে।
অপরদিকে, এই আসনের বিএনপির ক্ষমতার আমলে মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন যখন পানিসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন তখন তারপরে সবচাইতে ক্ষমতাবান ছিলেন তার ভাতিজা মার্শাল হিমু। মেজর হাফিজের হাত ধরেই তার উত্থান হয়। তখন কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি রাতারাতি কোটিপতি বনে যান। তার নিয়ন্ত্রণেই চলত লালমোহনের অনেক কিছু। পরবর্তীতে তাকে লালমোহন উপজেলা বিএনপির সম্পাদক করা হয়। তিনি জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন। এ আসনে তার চাচা বিএনপির একজন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে পরিচিতি। কিন্তু হঠাৎ করে মার্শাল হিমু নিজেই সম্ভব্য প্রার্থী হিসেবে গণমাধ্যমের কাছে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. কামাল হোসেন ও লালমোহন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও চরভূতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান টিটবও এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলটির ভোলা জেলার সাধারণ সম্পাদক নুরুননবী সুমন ও মাওলানা কামাল উদ্দিন, ইসলামী শাসনতন্ত্রের হাফেজ মোসলে উদ্দিন ও মাওলানা রাশেদুল ইসলামের নাম শোনা যাচ্ছে। যদিও বিগত কয়েকটি নির্বাচনে এই দুই দলের প্রার্থীরা কোন প্রতিদন্ধিতাই তৈরি করতে পারেননি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে। সে হিসেবে এই আসনে শাওন-হাফিজেই ভোট হবে জমজমাট এমনটাই মনে করছেন এলাকার সর্বসাধারণের।
নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা যায়, ভোলা-৩ আসনটি জেলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলা নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে লালমোহন উপজেলায় রয়েছে ১টি পৌরসভা (লালমোহন পৌরসভা), ইউনিয়ন রয়েছে ৯টি। এখানে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫৪ এবং নারী ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৭৮ জন।
নারী ও পুরুষ মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪ জন। এছাড়া তজুমদ্দিন উপজেলায় রয়েছে ৫টি ইউনিয়ন। এখানে পুরুষ ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ৫৬ হাজার ৩৯৩ জন এবং নারীর ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ৫২ হাজার ৭৪১ জন। নারী ও পুরুষ মিলিয়ে মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১ লাখ ৯ হাজার ১৩৪ ভোট। সব মিলিয়ে ভোলা-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ১৬৮ জন।
error: Content is protected !!