হোম » অন্যান্য বিভাগ » খুলনায় ক্লাব ঘরে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান

খুলনায় ক্লাব ঘরে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান

খুলনা প্রতিনিধি: স্কুলটিতে নেই কোনও স্থায়ী ভবন। ক্লাসরুম বলতে রয়েছে, টিন দিয়ে ঘেরা ছোট্ট দুটি খুপরি ঘর। আর একটি ক্লাব ঘরের কক্ষ। গত দুই বছর ধরেই এভাবেই পাঠদান চলছে খুলনার রূপসা উপজেলার ৫ নং ঘাটভোগ ইউনিয়নের ডোবা এলাকায় অবস্থিত অবিনাশ চন্দ্র শীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ক্লাব ঘরের একপাশে অফিস, অন্যপাশ শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম ক্লাব ঘরটি নবারুণ সংঘ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের।
সরেজমিনে গতকাল সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টায় বিদ্যালয়টিতে গিয়ে জানাগেছে, ১৯৮৫ সালে উপজেলার ডোবা এলাকায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলটিতে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৭০ জন। শিক্ষক রয়েছে ৫ জন। তাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ ৪জন শিক্ষক বাইরে ট্রেনিংয়ে ছিলেন। দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন নেপাল চন্দ্র শীল। টিন সেটের ঘরে প্রথম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছিলেন। পাশের ক্লাব ঘরে নিচেয় বসে প্রাক শ্রেনির ক্লাস নিচ্ছিলেন ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ঝিনুক বরকোন্দাজ।
ঝিনুর বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক ৫ জন। চারজন শিক্ষক ট্রেনিংয়ে বাইরে আছেন। তাই আমাদের একজন স্যার একা ক্লাস করাচ্ছেন। এখন শিশু শ্রেণীর ক্লাস। স্যার অন্য ক্লাস নিচ্ছেন। তাই আমি ওদেরকে পড়িয়ে দিচ্ছি। আরেক শিক্ষার্থী ইচ্ছা রায় বলেন, প্রথম শ্রেণী থেকে আমি এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছি। এখন আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। আমাদের বিদ্যালয়টি খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সে কারণে প্রায় ২ বছর আগে পুরাতন ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। ক্লাস নেওয়ার কোন জায়গা না থাকায় ক্লাব ঘরটিতে ক্লাস নেওয়া শুরু হয়। পরবর্তী টিনের তৈরি একটি ঘর করে সেখানে আমাদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবক গোপাল রায় বলেন, আমরা গরিব মানুষ। পরের জমিতে কাজ করে সংসার চালায়। মেয়েকে বড় স্কুলে লেখাপড়া করানোর ইচ্ছা থাকলেও সাধ্য নেই। সে করণে এখানে ভর্তি করেছি। অন্য বিদ্যালয়ের মতো, এখানে শিক্ষার মান ভাল। তবে ভবন না থাকায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অতিসত্বর ভবনটি তৈরির দাবী জানাচ্ছি। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নেপাল চন্দ্র শীল বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি ২০১৯ সালে পরিতাক্ত ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা হওয়ার পর থেকে অনেক কষ্ট করে দেড় বছর ওই বিল্ডিংয়ের ভিতরেই ক্লাস করিয়েছি। তারপর যখন বিভিন্ন জায়গায় বিল্ডিংটি ভেঙে পড়ছিল। ছেলে মেয়েদের নিয়ে সমস্যায় পড়ছিলাম আমরা, তখন আমরা ক্লাবের কাছে এই প্রতিষ্ঠানটি চাই। চাওয়ার পরেই সবাই মিলে এই ক্লাব ঘরটি আমাদের শ্রেণিকক্ষের জন্য তারা দিয়েছে। পরবর্তীতে আমরা টিনসেটের ঘরটি করেছিলাম।
তিনি আরও বলেন, ক্লাব ঘরের একপাশের শ্রেণীকক্ষ আর অপর পাশে অফিস রয়েছে। যখন আমাদের মিটিং হয় তখন নানা সমস্যায় পড়তে হয়। অনেকদিন আগেই মাটির সয়েল টেস্ট হয়ে গেছে। সকল কাগজপত্র পাঠানো হয়ে গেছে। তবে এখন পর্যন্ত ভবনটি কেনো হচ্ছে না। তা আমাদের জানা নেই। শ্রেণিকক্ষের জন্য খুব সমস্যায় আমাদের দিন যাচ্ছে। সুন্দরভাবে ক্লাস পরিচালনার জন্য একটি ভবন আমাদের খুবই দরকার। সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নবারুন সংঘের সভাপতি চঞ্চল কুমার অধিকারী বলেন, ভবনটি যখন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ভেঙে ফেলা হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ বিষয়টি আমাদের জানালে আমাদের ব্যবহৃত ক্লাব ঘরটি তাদের ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টিতে এলাকার অনেক গরীব ঘরের ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করছে। দীর্ঘদিন হয়ে গেল এখনও পর্যন্ত নতুন ভবন তৈরির কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দ্রুত সময়ের ভিতর ভবনটি তৈরীর জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে।বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রমেশ চন্দ্র দাস বলেন, দ্রুত সময়ের ভিতরে একটি নতুন ভবনের দাবি জানাচ্ছি। তাহলে ছাত্রছাত্রীরা মনোযোগের সঙ্গে লেখাপড়া করতে পারবে। এ ব্যাপারে রূপসা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালে স্কুলটির সয়েল টেস্ট হয়। যার ভিত্তিতে সে সময় কর্মরত কর্মকর্তাগণ নতুন ভবন আসবে এমন পেক্ষাপটে পুরাতন ভবনটি নিলাম করার পর থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন না হওয়ায় নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমি যোগদান করার পরে ওই বিদ্যালয়টি সহ ৩০ বিদ্যালয়কে চিহ্নিত করেছি। যেগুলোর সয়েল টেস্ট হয়েছে। এই বিদ্যালয় প্রস্তাবনা আমরা উপর কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছি।
error: Content is protected !!