হোম » অন্যান্য বিভাগ » একটি আদর্শবান সমাজ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন আদর্শবান মানুষ

একটি আদর্শবান সমাজ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন আদর্শবান মানুষ

মোহাম্মদ হানিফ (গোলজার হানিফ) নোয়াখালী প্রতিনিধি: শুধু মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেই কেউ মুসলমান হয় না, যতক্ষণ না সে ঈমান আনে ও ইসলামের সঠিক বিধি-বিধান মেনে চলে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর মনোনীত জীবন ব্যবস্থা হলো ইসলাম।এই পৃথিবীতে প্রত্যেকেই নিষ্পাপ মন নিয়ে আগমন করে। পরিবেশ পরিস্থিতি  মোকাবেলায় কেউ হয় অপরাধী। একটি আদর্শবান সমাজ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন আদর্শবান মানুষ।
পুরো সমাজের মানুষ হয়তো আদর্শবান হতে পারবে না, কিন্তু সমাজের যারা নীতিনির্ধারক তাদের আদর্শ যদি শূন্য কোটায় চলে যায় তাহলে সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গঠন সম্ভব নয়। কেউ অপরাধী হয়ে জন্মায় না। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ, সমাজে বিরাজমান নৈরাজ্য এবং হতাশা মানুষকে অপরাধী করে তোলে।মানুষ ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব। স্বীয় বিবেক-বুদ্ধি, মেধা-মননের গুণেই সে শ্রেষ্ঠ। কোনো মানুষই অপরাধী হয়ে পৃথিবীতে আসে না।
প্রতিটি মানুষই নিষ্পাপ অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। জন্মের পর বিরূপ পরিবেশ, নেতিবাচক পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে অনেক সময় তার বিবেক-বুদ্ধি, ন্যায়-অন্যায়, বিচারবোধ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। তখন সে পাপাচারে লিপ্ত হয়। মানুষের এই পাপকার্যে লিপ্ত হওয়ার পেছনে মুখ্যত সে নিজে দায়ী নয়।এটা খুবই স্বাভাবিক যে, ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে ওঠা মানুষের মূল্যবোধ ও স্বকীয়তার পার্থক্য থাকবেই।
 যেমনঃ হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া একজন মানুষ বেড়ে ওঠে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েই। তার কাছে তার ধর্মই শ্রেষ্ঠ। ফলে তার মনে গেঁথে যাওয়া স্বাভাবিক যে সে সারাজীবন হিন্দু হয়েই থাকবে।এরপর ও ধরা যাক, সে কোন একভাবে ইসলামের দাওয়াত পেয়েছে।
কিন্তু সে কেন তার ধর্ম পরিচয় বাদ দিয়ে নতুন আরেকটিকে বেছে নিবে? জন্মসূত্রে মুসলমান হয়ে বেড়ে ওঠা কোন মানুষের তুলনায় তার জন্য মুসলমান হওয়াটা কি অনেক কঠিন হয়ে গেল না? আমার নিজেরই ভাবতে ভয় লাগে যে, আমার জন্ম যদি মুসলমান ঘরে না হয়ে অন্য কোথাও হতো, তাহলে এতদিনে আমার অবস্থা কী দাঁড়াতো! তাহলে এটাই কি নিয়ম হওয়া উচিত ছিল না যে সবাই জীবনের শুরুর দিন থেকেই সমানভাবে ইসলামের ছায়াতলে আসার সুযোগ পাবে?
তাই পাপকার্য ঘৃণিত ও বর্জনীয় হলেও পাপীকে বর্জন করা উচিত নয়। বরং তাকে কলুষতামুক্ত জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া অন্য সকল মানুষেরই দায়িত্ব এবং কর্তব্য। পাপ এক ধরণের ব্যাধি। মানুষ রোগ-ব্যাধিকে ঘৃণা করলেও রোগাক্রান্ত মানুষকে ঘৃণা করে বর্জন করতে পারে না।
পাপ ময়লা-আবর্জনা স্বরূপ। ময়লা-আবর্জনা ধারণকারী ডাস্টবিনকে কেউ সযত্নে ঘরে তুলে রাখে না।পাপরূপী আবর্জনাকে ধারণ করলেও মানুষ কিন্তু ডাস্টবিন নয়। ডাস্টবিন জন্ম থেকেই ডাস্টবিন। আর মানুষ জন্ম থেকেই মানুষ। আবর্জনা পরিষ্কার করলেও ডাস্টবিন গ্রহণীয় নয়।
কোন ব্যক্তিই অন্য কোন ধর্মে জন্মগ্রহণ করে না। বরং প্রতিটি মানুষই ইসলাম ধর্মের উপরই জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু পরবর্তীতে তার বাবা, মা ও পরিবার, সমাজ ইত্যাদির দেখাদেখি বিভিন্ন ধর্মে অভ্যস্ত হয়।
খৃষ্টান ঘরে জন্ম নেয়া মুসলিম শিশু পরিবারের দেখাদেখি খৃষ্টান হয়। ইহুদীর সন্তান ইহুদী আর হিন্দুর সন্তান হিন্দু হয়।
 কিন্তু তার জন্ম উক্ত ধর্মগুলোতে হয়নি। হয়েছে মুসলিম হিসেবেই। কিন্তু মানুষ পাপমুক্ত হলে সভ্যসমাজে সাদরে গ্রহণীয়। দিনের পর দিন অপরাধ করলেও মহান স্রষ্টা তাঁর প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে ঘৃণায় ছুঁড়ে ফেলেন না। আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে সুস্থ-সুন্দর জীবনে ফিরে আসার পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দান করেন।
 ভয়ঙ্কর অপরাধীকেও অনুতপ্ত হয়ে আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করতে দেখা যায়। ইতিহাসে এরূপ বহু নজির আছে। বস্তুত পাপী বড় অসহায়, দুঃখী। তাকে ঘৃণায় দূরে ঠেলে দিলে সে আরও অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়তে পারে। আলোকিত জীবনে ফিরে আসার সুযোগ না পেয়ে সে গভীর অন্ধকারে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।
অমুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করা যেমন পরীক্ষা। তেমনি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করাও পরীক্ষা। মুসলমানরাও নানাভিদ দুঃখ কষ্ট, হতাশায় ঈমানের পরীক্ষায় পরীক্ষায় নিপতিত হয়। আবার অমুসলিমরাও নানাভিদ পরীক্ষা পতিত হয়। এর মাঝে অমুসলিম পিতা মাতার ঘরে জন্ম নেয়াটাও তার জন্য পরীক্ষা। সেইসব পরীক্ষায় যারা যথার্থ উত্তীর্ণ হতে পারবে, তারাই হবে সফলকাম।
আল্লাহর দেয়া, জ্ঞান, বিবেক বুদ্ধি ইত্যাদি কাজে লাগিয়ে সৃষ্টি ও কুরআন রিসার্চ করে সত্য পথ অনুসরণ না করার কারণে ব্যক্তি অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাই তার কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি হবে। আর যারা সত্য পথ দেখে তা অনুসরণ করবে, তারা হবে আখেরাতে সফলকাম
পাপকাজ অবশ্যই ঘৃণিত ও পরিত্যাজ্য। কিন্তু পাপীকে ঘৃণায় দূরে না ঠেলে তাকে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে তাকে সহানুভূতির সঙ্গে সহায়তা করতে হবে।
একটি আদর্শবান সমাজ বিনির্মাণে গ্রামীণ আদর্শবান নেতৃত্ব যেমন রোল মডেল, ঠিক তেমনি একটি সমাজে ধ্বংসাত্মক কাজ, অসামাজিকতা, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বৃদ্ধি করতেও তারাই মুখ্য ভূমিকা রাখে। একটি পরিবারের বাবা-মা অথবা প্রধান যদি ভালো হয়, তবে পরিবারটা ভালো হবে আশা করা যায়। ঠিক তেমনি একটি ন্যায়নিষ্ঠ, আদর্শবান ও সুশীল সমাজ গঠনে আদর্শবান নেতৃত্ব তদ্রƒপ। তাই আদর্শবান নেতৃত্ব গঠনে এবং আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ, বলিষ্ঠ ও শিক্ষিত মানুষের নেতৃত্বে আশার কোনো বিকল্প নেই। আপনার-আমার সদিচ্ছা ও সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে যাক সমাজ এবং ফিরে আসুক শান্তি ও সম্প্রীতিএটাই কামনা।
 আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে এই কথা গুলোর আমল করার তৌফিক দান করেন আমিন
error: Content is protected !!