হোম » অন্যান্য বিভাগ » সাংবাদিক-পুলিশ ছায়াসঙ্গী. একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে

সাংবাদিক-পুলিশ ছায়াসঙ্গী. একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে

মোহাম্মদ হানিফ ( গোলজার হানিফ)  নোয়াখালী প্রতিনিধি : পুলিশ ও সাংবাদিক একে অপরের পরিপূরক। পুলিশ ও সাংবাদিক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।পৃথিবীজুড়েই পুলিশ এবং প্রেস সম্পর্কের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা, মানসিক টানাপড়েন, গ্রেফতার, আঘাত, প্রতিবাদ হরহামেশাই শোনা যায়। গভীর অনুরাগের মধ্য দিয়ে এদের ভিতরকার সম্পর্ক প্রবহমান থাকবে তা ভেবে রাখা সমীচীন হবে না। আমরা যতই প্রেস-পুলিশ সম্পর্ককে ইতিবাচক দিকে নিয়ে যেতে চাই না কেন নেতিবাচক ঘটনা পরম্পরা ফলাফলকে সহজ সরল রেখায় প্রবাহিত হতে দেয় না।
আমাদের পুলিশ আইন বা পুলিশ প্রবিধানে সাংবাদিকদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করতে হবে তার সঠিক কোন নির্দেশনা নেই।পুলিশ ও সাংবাদিক একে অপরের পরিপূরক। পুলিশ যেভাবে জীবন বাজি রেখে কাজ করে, ঠিক সেইভাবে সাংবাদিকরাও জীবন বাজি রেখে কাজ করেন। পুলিশ ও সাংবাদিক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সাংবাদিক-পুলিশ ছায়াসঙ্গী। একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে ।পুুলিশ এবং সাংবাদিক পরস্পরের সহযোগি। পুলিশ অপরাধ দমনের জন্য অপরাধীকে আইনের আওতায় আনে, আর সাংবাদিকরা শান্তিপ্রিয় মানুষদের কল্যাণেএলাকাটি অপরাধ-অপরাধী মুক্ত রাখার জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পুলিশকে সহযোগিতা করে।
পুলিশ ও সাংবাদিকদের পেশার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি প্রচ্ছন্ন আবহ রয়েছে। পুলিশ চায় সঠিক তথ্যটি বের করে তার পর তা জনগণের সামনে হাজির করতে। কিন্তু সাংবাদিকের কাছে তখন এই খবর বাসি হয়ে পড়ে। তারা চায় তাৎক্ষণিক খবর। তাই কোন বিষয়ের উপর অসম্পূর্ণ বা অর্ধসত্য খবরও প্রকাশিত হতে পারে।
কোন সংবাদ পত্র ভুল বা মিথ্যে খবর প্রকাশ করলে তার সাজা হল পত্রিকায় পর দিন তার সংশোধনী প্রকাশ করা এবং কার্যক্ষেত্রে পাঠকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা বা আরো বেশি হলে ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু পুলিশের মিথ্যা খবর বা দায়িত্বের অবহেলা নিয়মিত মামলায় রূপ নিতে পারে। তাকে বিভাগীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা ফৌজদারি অপরাধ দুটোতেই অভিযুক্ত করা হতে পারে।
সংবাদকর্মীদের সাথে পুলিশ কিরূপ আচরণ করবে, সে সম্পর্কে সঠিক কোন দিক নির্দেশনা পুলিশ সদস্যদের দেওয়া হয় না। থানা প্রশাসনে যারা কাজ করেন, সেই সব পুলিশ সদস্যদের সাংবাদিকদের প্রতি এক প্রকার পূর্বসংস্কার জাত নেতিবাচক ধারণা অনুভব করা যায়।
 কতিপয় অসৎ বন্য গ্রাফি মামলার আসামি  ও    বক্কর চক্কর পত্রিকা বক্কেশ্বর টিভি  সাংবাদিকের সংকীর্ণ স্বার্থের উপর আঘাত পড়লেই তারা পুলিশ সম্পর্কে উল্টাপাল্টা খবর প্রকাশ করে বলে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা অনুমান করা যায়। অন্যদিকে পুলিশ সদস্যদের অপকর্ম নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলেও সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিকগণ চক্ষুশূল ভাবতে পারেন।
পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, সাংবাদিকগণ পুলিশের প্রতি সহানুভূতিশীল নন। প্রায়শই তারা পুলিশের উভয় সংকটাপন্ন অবস্থাকে মনোহর রূপ দিয়ে জনগণের সামনে উপস্থাপন করে। কোন প্রকার বাছ বিচার ছাড়াই পুলিশে বিরুদ্ধে প্রতিবেদন পত্রিকায় অহরহই ছাপানো হচ্ছে। পুলিশ সদস্যদের পক্ষে প্রায় ক্ষেত্রেই এর প্রতিবাদ করা সম্ভব হয় না।
তা ছাড়া সাংবাদিক তো ভাল খবর লেখে না। তাদের কাছে খারাপ খবরই হল ভাল খবর। এমতাবস্থায়. কোন সাংবাদিক পুলিশের কাছে আসলে যে পুলিশের খারাপ খবরটিই লিখবেন, তা সহজেই অনুমান করা যায়। তাই, তারা মনে করে সাংবাদিকদের যত বেশি দূরে রাখা যায়, ততোই ম।
 পুলিশ এবং গণমাধ্যম পারস্পরিক স্বার্থে সম্পর্কযুক্ত অবস্থায় থাকবে। দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য অপরাধজনক তথ্য সরবরাহ করে সহযোগিতা করবে, এটাই পুলিশের কাছে সাংবাদিকদের প্রত্যাশা।  অন্যদিকে পুলিশের এক ধরনের কায়েমী স্বার্থ থাকে যা মিডিয়ার মাধ্যমে ইতিবাচকভাবে জনসম্মুখে তাদের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
গণমাধ্যম ও পুলিশ দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যা সামাজিক পরিবেশে সমন্বয় সাধন করতে পারে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো জনসমাজের মধ্যে খবর এবং তথ্য প্রচার করে এবং মতবিনিময় সৃষ্টি করে যাতে জনগণ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পারে এবং নির্ধারিত সময়ে সঠিক তথ্য পেতে পারে। অন্যদিকে পুলিশ প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য কাজ করে যাতে অপরাধ প্রতিরোধ দন্ড বিধান সহজতর হয়।
পুলিশ ও সাংবাদিকদের পেশার ভিতর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক টানাপড়েনের প্রচ্ছন্ন আবহ রয়েছে। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো খবর প্রকাশ করতে আগ্রহী থাকে না, তারা প্রাপ্ত ঘটনা যাচাই-বাছাই শেষে জনসম্মুখে হাজির করতে চায়। অন্যদিকে সাংবাদিক চান তাৎক্ষণিক টাটকা খবর। একটু বিলম্ব হলেই অন্যের তুলনায় সে পিছিয়ে পড়ে। টাটকা সংবাদ পরিবেশনার মধ্যে রিপোর্টারের আত্মতৃপ্তির বিষয়টি জড়িত ফলে অনেক সময় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে খবরে অতিরঞ্জন ঘটে সত্য-মিথ্যের মিশেল হয়ে যায়।
 ভুল সংবাদের সাজা হলো পরদিন সংশোধনী প্রকাশ করা কিংবা দুঃখ প্রকাশ করা অথবা সর্বোচ্চ ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে মিথ্যা সংবাদ সরবরাহ তার জন্য বুমেরাং হতে পারে।
একটি সশস্ত্র পেশা ও নিরস্ত্র পেশার মানুষের মধ্যে আমরা যতই বন্ধুত্ব আশা করি না কেন এ দুটোর মধ্যে চরিত্রগত অমিল সতত প্রবাহিত হতে থাকবে। অস্ত্রের নির্মম বল প্রয়োগের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করার নিরস্ত্র কর্মে নিয়োজিত করা কম কথা নয়। যদিও কেতাবী কথায় পুলিশের অস্ত্র দুষ্টের দমনের জন্য। তদুপরি মানবিক ভুলত্রুটি এমন পর্যায়ে যাতে না চলে যায়, যার ফলে সাধারণ মানুষ নির্যাতিত হতে পারে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকরা পৃথিবীর সর্বত্রই প্রহরীর কাজ করেন। সত্য উদঘাটন করেন এবং মানুষের বিরুদ্ধে অন্যায় সংঘটনের প্রতিবাদ করেন।
সব বৈরিতা সত্ত্বেও প্রেস ও পুলিশকে কাছাকাছি থাকতে হবে। হতে হয় একে অপরের পরিপূরক। পুলিশের কাছ থেকে গোপনীয় নয় এমন সংবাদ সংগ্রহের জন্য ব্যক্তিগত যোগাযোগ অত্যন্ত কার্যকরী। ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে খুব সহজেই পুলিশকে সংবাদ উৎস করে নেওয়া যায়। পুলিশও পারে বৈরিতার মধ্যেই সাংবাদিককে সফলভাবে বন্ধু করে নিতে।  ব্যক্তিগত ও পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক মিথস্ক্রিয়া অত্যন্ত কার্যকর যা সচরাচর নজরে পড়ে না। উভয়ের স্বার্থে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ নিবিড়তর হোক।
error: Content is protected !!