হোম » অন্যান্য বিভাগ » সাংবাদিকতা পেশা সবখানেই চ্যালেঞ্জের

সাংবাদিকতা পেশা সবখানেই চ্যালেঞ্জের

মোহাম্মদ হানিফ গোলজার হানিফ, নোয়াখালী প্রতিনিধি : স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি ক্ষমতাধরদের দিক থেকে চ্যালেঞ্জ তো সব সময়ই কমবেশি ছিল আমাদের চারপাশে যে অনিয়ম-দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন- সেগুলো প্রথম গণমাধ্যমে আসছে না কেন? আমরা দেখি সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনা প্রথমে মূলধারার গণমাধ্যমে আসেনি। এটি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 
সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তারপর মূলধারার গণমাধ্যমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা ছড়ায় তার একটা বড় অংশ অসত্য। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে ধারণ করা নির্যাতনের ভিডিও, দুর্নীতির কথোপকথন ইত্যাদি সারা দেশের বিবেককে স্তব্ধ করছে। শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণেই কি এখন সাংবাদিকতায় অনুসন্ধানী উন্মোচন নেই, সত্য প্রকাশের সাহস সংযত? এটা কি বনের বাঘের ভয়ে ঘরে গুটিয়ে থাকা?
একজন সাংবাদিকের প্রধান কাজ হলো, সত্য এবং শুধু সত্য তথ্য পাঠকের কাছে তুলে ধরা। কিন্তু একজন সাংবাদিক অনেক ক্ষেত্রে নিজেই জানেন না যে, তিনি যে তথ্য সংগ্রহ করছেন তা সঠিক কি না।
 এখন তথ্যের উৎসেই ভেজাল মেশানো হচ্ছে। আর এ বাস্তবতায় একজন সংবাদকর্মীর প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, যে তথ্য তিনি পাচ্ছেন তা সঠিক কি না। তাছাড়া একটি সংবাদ সংগ্রহের জন্য একজন সংবাদকর্মীকে যতটা নির্মোহ বা নিরপেক্ষ থাকতে হয় সেটি তিনি থাকতে পারছেন না নানা বাস্তবতায়
  শুধু পেশার ঝুঁকি নয়, নানা কারণেই সাংবাদিকতা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিপ্লব সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলেছে। মানুষ এখন মূলধারার গণমাধ্যমের তথ্যের চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার নানা গুজব এবং অসত্য খবরে (ফেক নিউজ) আসক্ত হচ্ছে। বিশ্বের দেশে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনের উত্থান সাংবাদিকতার স্বাচ্ছন্দ্য গতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় সাংবাদিকতায়। বিভিন্ন ধরনের হুমকি, মামলা-হামলার শিকার হতে হয় যে পেশায় সেটাই হলো সাংবাদিকতা। তবে ঝুঁকি থাকলেও অত্যন্ত সম্মানজনক পেশা এটা। সাংবাদিকদের সমাজের দর্পণ বা আয়না বলা হয়। তবে হলুদ সাংবাদিকদের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়।
 এরা প্রকৃত সাংবাদিকদের সম্মানহানি করে থাকে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের অনেক পরিশ্রম রতে হয়। একটা সংবাদ তৈরি করতে হলে ছুটতে হয় একেবারে তৃণমূলে। অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় মফস্বল সাংবাদিকদের। দুর্নীতি, অনিয়মের সংবাদ তৈরি করতে হুমকি বা হামলা হয়। জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন বা ক্ষমতাশীনদের বিরুদ্ধে সংবাদ হলেই অবস্থা কিছুটা অন্যরকম হয়।
 মফস্বল এলাকায় সাংবাদিকদের তেমন নিরাপত্তা দেওয়ারও কেউ থাকে না। অনেক সময় মামলা হয়। কিছু কিছু ব্যতিক্রম ঘটনাও ঘটে, যেমন পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আগে কোনো বিরোধ থাকলে তুচ্ছ কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাতকড়াও পরানো হয়। সাংবাদিকদের জন্য চরম লজ্জাজনক বিষয় এটা। সারাদিন ছুটতে হয় সংবাদের জন্য।
 সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য আইন পাস করা উচিত এবং আইনের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আইনের পাশাপাশি
 সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কেননা একতাই বল। একত্রে থাকলে শক্তি পাওয়া যায় এবং প্রতিপক্ষ ভীতচিত্ত অবস্থায় থাকে। দেশে দিন দিন সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন বেড়েই চলেছে। সাগর-রুনি হত্যার কোনো আসামি এখন পর্যন্ত শনাক্ত বা গ্রেপ্তার হয়নি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংবাদিকের ওপর হামলা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। কিন্তু এর কোনো বিচার লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
এ অবস্থায় সাংবাদিকরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। সরকারের উচিত সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ নজর দেওয়া এবং সাংবাদিক নেতাদের উচিত সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করা। মফস্বল সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন। আর এমনিতেই তো মফস্বল সাংবাদিকতা একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা। এটা দেশের সব শ্রেণির জনগণই জানে। এক ধরনের যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হয় মফস্বল সাংবাদিকদের
সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ আসলে আমরাই। এখন সংবাদকর্মীরা (সবাই নন) সবকিছু করছেন, একমাত্র সাংবাদিকতা ছাড়া। সাংবাদিকতা পেশাটা আসলে মমতার, ভালোবাসার। এ পেশায় ভালোবাসা না থাকলে তা মানুষকে আকৃষ্ট করবে না। সাংবাদিকতা চলে যাবে গুজবের কনটেন্টে। তাই, আইন আর বিধিনিষেধের বাঘের ভয়ে সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, এ কথা বলার আগে মনের বাঘটা আগে তাড়াতে হবে।
সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ আসলে আমরাই। এখন সংবাদকর্মীরা (সবাই নন) সবকিছু করছেন, একমাত্র সাংবাদিকতা ছাড়া। সাংবাদিকতা পেশাটা আসলে মমতার, ভালোবাসার। এ পেশায় ভালোবাসা না থাকলে তা মানুষকে আকৃষ্ট করবে না। সাংবাদিকতা চলে যাবে গুজবের কনটেন্টে। তাই, আইন আর বিধিনিষেধের বাঘের ভয়ে সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, এ কথা বলার আগে মনের বাঘটা আগে তাড়াতে হবে।
error: Content is protected !!