হোম » অন্যান্য বিভাগ » দাগনভূঞায় অতিরিক্ত মূল্যে ও নিষিদ্ধ ঔষধ বিক্রি , যুক্ত আছে কয়েকটি সিন্ডিকে

দাগনভূঞায় অতিরিক্ত মূল্যে ও নিষিদ্ধ ঔষধ বিক্রি , যুক্ত আছে কয়েকটি সিন্ডিকে

মোঃ আবদুল মুনাফ পিন্টু: ফেনী দাগনভূঞা ফাজিলের ঘাট রোড়ে  দত্ত ফার্মেসির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মূল্যে ঔষধ বিক্রির অভিযোগে অনুসন্ধানে থলের বেড়াল বেরিয়ে এসেছে , এ সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ ও রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
২৯শে জুলাই শুক্রবার দুপুর ১২টার  দিকে আরাফাত  নামে এক জন ব্যক্তি সাংবাদিকদেরকে জানান আমি  দত্ত  ফার্মেসি থেকে স্কয়ার কোম্পানির জি ক্যালবো নামের ভিটামিন  ঔষধ ক্রয় করি,  বাসায় নিয়ে দেখি আগের কোটার সাথে এর দামের পার্থক্য দেখতে পাই।
আগের কোটায় দাম ছিল ৩০০ টাকা। আর আমি যে কোটা দত্ত ফার্মেসি থেকে কিনে নিয়ে এসেছি সেখানে কলম দিয়ে ৪৫০ টাকা লেখা। আমার বাসায় যে ঔষধ আছে আর আমি দত্ত ফার্মেসি থেকে যে ঔষধ কিনেছি দুইটার উৎপাদনের তারিখ একই। এই ব্যাপারে আমি দত্ত ফার্মেসিতে গেলে তারা প্রথমে আমার কাছে ঔষধ বিক্রির কথা অস্বীকার করে এবং আমার সাথে তর্কে জড়ায়।
আরাফাত  আমাদের কাছে এসে বলে  আপনাদের সহযোগিতা চাই এই অন্যায়ের বিচার চাই যাতে আমাদের মত অন্য কোন রুগীকে এরকম হয়রানি হতে না হয়,তার  কাছে থাকা ঔষধ নিয়ে  তথ্য যাচাই করতে  গেলে দত্ত  ফার্মেসির রনি আমাদের সাথেও খারাপ ভাষা ব্যবহার করে। সে বেশি দামে ঔষধ বিক্রির কথা অস্বীকার করে।
এরপর আমাদের তদন্তে লোক জনের উপস্থিতিতে দত্ত ফার্মেসীর রনি অতিরিক্ত মূল্যে ঔষধ বিক্রির কথা শিকার করে। এইভাবে দাগনভূঞার বিভিন্ন ফার্মেসিসে অতিরিক্ত মূল্যে ঔষধ বিক্রি, মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ, ফিজিশিয়ান সেম্পল ঔষধ, নিষিদ্ধ ঔষধ বিক্রির ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।
শুধু তাই নয় ইন্ডিয়ান ইনজেকশন ডোভাসটাট বিক্রি করছেন যাহা ঔষধ প্রশাসন কর্তৃক অননুমোদিত  এবং নিষিদ্ধ প্যথিডিন বিক্রির অভিযোগও রয়েছে এই সব  ফার্মেসির বিরুদ্ধে। কিছু ফার্মেসিতে পাকিস্তানি গর্বপাতের গাইনিকোসিড ঔষধ বিক্রি করে, যা ঔষধ প্রশাসন থেকে ননঅনুমোদিত। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে অনেক ফার্মেসির  ট্রেড লাইসেন্স নেই।
অতিরিক্ত মূল্যে ঔষধ বিক্রির বিষয়ে দোকান মালিকের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি  নিজেকে প্রথমে দোকান মালিক দাবি করলেও পরে বলেন তিনি  দোকানের কর্মচারী।
অতিরিক্ত মূল্যের ঔষধ বিক্রি নিয়ে দত্ত ফার্মেসির ভিডিওটি যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয় তখন প্রশাসনের টনক নড়ে। দাগনভূঞা বিভিন্ন ঔষধ ফার্মেসী গুলোতে  ভ্রাম্যমান মোবাইল কোর্টে  ত্রিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় সোমবার ৩১ শে জুলাই  সকাল ১১.৩০ ঘটিকার সময় দাগনভূঞা উপজেলার ফাজিলের ঘাট রোডে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
এসময় দত্ত ফার্মেসী, সোহাগ ফার্মেসী, নিউ লতিফ ফার্মেসী, মেসার্স লতিফ ফার্মেসী,মেসার্স আহাম্মদ ফার্মেসী ও মেসার্স সফি ফার্মেসীকে বিক্রয় নিষিদ্ধ ঔষধ বিক্রয় ও মজুদ রাখা সহ বিভিন্ন অভিযোগে ড্রাগ এ্যাক্ট ১৯৪০ এর সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক ৬ টি মামলায় মোট ৩০০০০/- টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। প্রসিকিউসন দাখিল করেন জনাব মৌসুমী আক্তার,সহকারী পরিচালক এবং জনাব প্রিয়াঙ্কা দাশ গুপ্তা, ঔষধ পরিদর্শক, জেলা কার্যালয়, ফেনী।
মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ও এক্সিকিউটিভ মেজিস্টিস  নাহিদা আক্তার তানিয়া এবং সহকারী কমিশনার(ভূমি),  মেহরাজ শারবীন।মোবাইল কোর্টে  দাগনভূঞা থানার পুলিশ সদস্যগণ সার্বিক সহায়তা প্রদান করেন।
ঔষধ ক্রেতা ইউছুপ হারুনী বলেন, দাগনভূঞাতে ঔষধ  ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন কমিশন পাওয়া যায় না। কিন্তু ফেনী ও বসুরহাট থেকে ঔষধ কিনলে কিছু কমিশন পাওয়া যায়।  আর দাগনভূঞাতে কিছু ঔষধের মূল্য এমনিতেই বেশী রাখা হয়। এই ক্ষেত্রে প্রশাসন প্রতি মাসে অভিযান করা উচিত।
বাংলাদেশ  কেমিস্ট এন্ড ডাগিস্ট সমিতির দাগনভূঞা শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন বলেন, কোন ফার্মেসী যদি নির্ধারিত মূল্যের ছেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে ঔষধ বিক্রি করে এক্ষেত্রে সমিতি কোন দায়িত্ব বহন করবে না।  কোন নিষিদ্ধ ঔষধ বিক্রি করে কোন ফার্মেসী  জেল জরিমানার শিকার হয় এক্ষেত্রেও আমরা তার দায়িত্ব বহন করব না। আর আমাদের সমিতি থেকে ফার্মেসীর জন্য কিছু নির্দেশনা  যেমন: নির্ধারিত মূল্যের ছয়ে অতিরিক্ত মূল্যে ঔষধ বিক্রি নিষেধ, নিষিদ্ধ ঔষধ বিক্রি নিষেধ। দোকানের তাক গুলোতে ফ্রুট সার্লিপিমেন্ট, নন ফিজিশিয়ান, ফিজিশিয়ান,   ওডিটি স্টিকার লাগানোর নির্দেশনা  দেওয়া হয়েছে।
দাগনভূঞা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তৌহিদুল ইসলাম গণমুক্তিকে বলেন ঔষধের জন্য ঔষধ প্রশাসন রয়েছে বা ভোক্তা অতিকার রয়েছে। কোন ক্রেতার সমস্যা হলে বেশিরভাগই ভোক্তা অধিকার দেখেন। তারপরও  আমি ঔষধ প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার  ও এক্সিকিউটিভ মেজিস্টেস  নাহিদা আক্তার তানিয়া বলেন, জনস্বার্থে আমরা সব সময় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে থাকি। ঔষধ ফার্মেসির ক্ষেত্রেও  এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
error: Content is protected !!