হোম » অন্যান্য বিভাগ » সিরাজগঞ্জে পাটের ভাল ফলন, লাভের আশায় কৃষক

সিরাজগঞ্জে পাটের ভাল ফলন, লাভের আশায় কৃষক

হুমায়ুন কবির সুমন ,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় এবার বিপুল পরিমান জমিতে সোনালী আঁশ পাটের চাষাবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ভাল ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা আগাম পাট কেটে বাজারে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছে।
যমুনা নদী বধৌত সিরাজগঞ্জ জেলা পাট চাষাবাদের জন্য অনেক আগে থেকেই সমৃদ্ধ। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রচুর পরিমান জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়।
বন্যার কারনে পলি পড়ায় পাটের ভাল ফলন হয় এখানে। জেলা জুড়ে কম বেশি পাটের চাষাবাদ হলেও চরাঞ্চলে এ চাষাবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালীর যমুনার চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন উপজেলার উঁচু, নিচু, পতিত জমিতে পাট চাষাবাদ করে চাষীরা। এসব এলাকায় চলতি মৌসুমে রবি-১,কেনাফ,মেছতা,তোশা,ও-৯৭,৯৮, স্থানীয় সহ নানা জাতের পাটের চাষাবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় মাঠে মাঠে পাট গাছের ভাল ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় আগাম পাটকাটা শুরু হয়েছে। অনেক স্থানে পাট ধুয়ে বাজারে ভাল দামে বিক্রি শুরু করছে কৃষকরা।

উল্লাপাড়া উপজেলার চড়িয়া উজির এলাকার কৃষক চাঁদ আলী দেওয়ান জানান,তিনি এবার তিন বিঘা জমিতে কেনাফ জাতের পাট চাষাবাদ করেছেন। জমিতে পাটের ভাল ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে পাট কাটা শুরু করেছেন । তিনি আরো জানান,পাট চাষাবাদ থেকে কাটা পর্যন্ত তিন বিঘা জমিতে তার প্রায় ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হবে।
আর তিনি এই জমি থেকে পাট এবং পাটকাঠি বিক্রি করবেন প্রায় লাখ টাকা। এতে তিনি অনেক টাকা লাভবান হবেন। এ কৃষক উল্লেখ করেন,আমার এই জমিগুলো উঁচু হওয়ায় এ সময় পরিত্যক্ত থাকতো।
কৃষি অফিসের তাগাদার কারনে তিনি পাট চাষাবাদ করেছেন। একই গ্রামের আরেক কৃষক মোঃ শাহজাদা জানালেন,পাট চাষাবাদে জমির অনেক উপকার হয়। একদিকে বিঘা প্রতি প্রায় ১০ মন হারে পাট এবং ১২শ’হাতা পাটখড়ি পাওয়ায় যায়। যা বিক্রি করে অনেক টাকা লাভ হয়।
একই সাথে পাটের পাতা জমিতে পড়ে পঁচে যাওয়ার কারনে কম্পোষ্ট সার তৈরি হয়। এতে জমির মাটির গুনাগুন বৃদ্ধি সহ রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে আসে। সবদিক থেকে এ চাষাবাদ লাভজনক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,বাজারে নতুন পাটের ভাল দাম রয়েছে।
জেলার বিভিন্ন হাটে বর্তমানে তোশা পাট ৩হাজার ১শ’টাকা,মেছতা পাট ৩হাজার ৩শ’থেকে ৩হাজার ৫শ’টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়,কাজিপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৬শ’৪৫ হেক্টর,সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৩শ’৫০ হেক্টর,উল্লাপাড়ায় ১হাজার ৬শ’২০ হেক্টর,বেলকুচিতে ১হাজার ৯শ’৬০ হেক্টর,শাহজাদপুরে ৪শ’৩৫ হেক্টর,তাড়াশে ৭শ’৪৫ হেক্টর,রায়গঞ্জে ৮শ’৯২ হেক্টর,চৌহালীতে ৯শ’২০ হেক্টর,কামারখন্দে ১হাজার ৭শ’৩১ হেক্টর জমিতে পাট চাষাবাদ হয়েছে। জেলার ১৭ হাজার ২শ’৯৮ হেক্টর জমি থেকে পাট উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ২শ’৯মেঃটন।

সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার পাট চাষাবাদের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, এখনো এসব মাঠে বন্যার পানি আসেনি। ফলে কৃষকরা পাট কেটে জাগ দিতে পারছেন না। অনেক কৃষক পাট কেটে বাড়তি শ্রমিক ও অর্থ ব্যায় করে দুরর্বতী স্থানে নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে তাদের বাড়তি সময় এবং অর্থ দুটোই ব্যায় হচ্ছে।
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকতা কৃষিবিদ সুর্বনা ইয়াসমিন সুমি জানান,পাট চাষাবাদে কম খরচ ও পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তাই চাষীদের এ চাষাবাদে বিনামূল্যে বীজ সহ মাঠ পর্যায়ে আমরা নানা ধরনের পরার্মশ ও সহযোগীতা দিয়েছি। পাশাপাশি আমরা মাঠ পর্যায়ে উঁচু,নিচু,পতিত জমিতে কৃষকদের পাট চাষাবাদে উৎসাহিত ও পরার্মশ দিয়েছি। কৃষকরা আমাদের পরার্মশ মতে পাট চাষাবাদ করেছেন। আশা করছি এবার ভাল ফলন এবং দামে কৃষকরা লাভবান হতে পারবে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকতা কৃষিবিদ আনোয়ার সাদা’ত জানান,পাট চাষাবাদ অনেক লাভজনক। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে এ চাষাবাদের কৃষকদের পাট বীজ সহ নানা প্রনোদনা দিয়ে চাষাবাদে উৎসাহিত করেছি। বিশেষ করে চরাঞ্চলে এসময় জমি পতিত থাকে। আমরা উৎসাহ দিয়ে এসব জমিতে পাট চাষাবাদ করানোর কারনে কৃষকরা ভাল লাভবান হচ্ছে।
error: Content is protected !!