হোম » জাতীয় » হজের টাকা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের দিলেন আলেয়া হিজড়া

হজের টাকা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের দিলেন আলেয়া হিজড়া

আওয়াজ অনলাইন: এই তো গতকয়েকদিন হলো। দাউ দাউ করে উড়ছিলো বঙ্গবাজারের মার্কেট। আগুন নেভানোর জন্য ৫০টি ইউনিট একযোগে কাজ করেছে। তবুও যেনো ক্ষতি এড়াতে পারেনি ভবন ও দোকান মালিকরা। তারা আজ ব্যবসায় ছেড়ে নিঃস্ব জীবন যাপন করছে। তাদের নিঃস্ব জীবন যাপনের কিছুটা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আলেয়া হিজড়া। দুই লাখ টাকা দিয়েছেন উত্তরা এলাকার হিজড়াদের সরদারনী আলেয়া হিজড়া। তিনি এই টাকা হজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জমিয়েছিলেন।

রোববার (৯ এপ্রিল) সকাল ১১টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির কাছে সহায়তার টাকা হস্তান্তর করেন তিনি।

আলেয়া হিজরা বলেন, বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের খবরে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। এক সময় আমরা এখানকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা সাহায্য নিয়েছি। আজ সেই ব্যবসায়ীরাই সব হারিয়ে নিঃস্ব। তাই আমি আমার হজের জন্য জমানো টাকা থেকে দুই লাখ টাকা এই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দিচ্ছি।

এ সময় তিনি বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

এই বিষয়ে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোহন মিয়া বলেন, আমাদের এই বিপদের সময় আলেয়া হিজরা পাশে দাঁড়িয়ে অনেক বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না। এই মুহূর্তে যে কারও সামান্য সহযোগিতাও আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সকাল ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ৪১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। এরপর ৪৩টি ইউনিট যাওয়ার খবর জানায় ফায়ার সার্ভিস। পরে ৪৮টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টায় বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকালে আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস।

আগুনে বঙ্গবাজার এলাকার মোট সাতটি মার্কেট পুড়ে গেছে। এর মধ্যে চারটি পুরোপুরি ও তিনটি আংশিক। মার্কেটগুলো হলো- বঙ্গ ইসলামীয়া মার্কেট, বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স, বঙ্গবাজার মার্কেট, এনেক্সকো টাওয়ার, মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, আদর্শ মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেট।

আলেয়া হিজড়া পুুরো একটা সমাজের আকীদাকে চ্যালেন্ঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। আমাদের দেশের ধর্মভীরু কট্টর মানুষেরা যেখানে হজ্বের জন্য টাকা জমায়, আলেয়া সেখানে সেই হজ্বের টাকা সমাজের নিঃস্ব মানুষের জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। আমাদের দেশের বিত্তবানরা এই হিজড়ার কাছে থেকে কতটুকু শিক্ষা নিতে পারে তা সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

আমরা রাস্তাঘাটে তথাকথিত বিভিন্ন হিজড়া দেখতে পাই। তাদেরকে নানা গালি গালাজের মধ্যদিয়ে অপমানিত ও লান্ঞ্চিত করে থাকি। যদিও তাদের অনেকেই বেপরোয়া আচরণের জন্য তীক্ত গালি শুনতে হয় । তবে এই দেশে তথাকথিত অনেক হিজড়ার পাশাপাশি মানবদরদী হিজড়াও আছে তা বলাই যায়। কারণ আলেয়া তার উজ্জ্বল নক্ষত্র। যুগ যুগ ধরে আলেয়ারা সমাজে বেঁচে থাকুক। আগামী বাংলাদেশ গড়তে আলেয়াদের জুড়ি নেই।

error: Content is protected !!