হোম » সাহিত্য » “কাঁদো সিরাজগঞ্জবাসী কাঁদো”

“কাঁদো সিরাজগঞ্জবাসী কাঁদো”

শেখ হান্নান: “ঝাটিকা এক্সপ্রেস” “সুন্দরবন এক্সপ্রেস” সেই পাকিস্তান আমল থেকে শিল্পনগরী খুলনা থেকে ঈশ্বরদী হয়ে সিরাজগঞ্জ দিয়ে শতশত যাত্রী নিয়ে ঢাকা যেতো। এই প্রেক্ষিতে সিরাজগঞ্জবাসীর জন‍্য অনেক বড় একটি দুঃসংবাদ যে, আগামী ১লা নভেম্বর ২০২৩খ্রি. বুধবার, ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ সিরাজগঞ্জ জেলার শহীদের রক্তেভেজা সবুজ জমিনের উপর দিয়ে আর চলাচল করবে না।

এই এক্সপ্রেস ট্রেনটির সাথে সিরাজগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্য, ব‍্যবসা বাণিজ্য শিক্ষা সংস্কৃতিসহ কর্মজীবী মানুষের আর্থিক সম্পর্ক জড়িত ছিলো। এখন খুলনা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাবে। সঙ্গত কারণে ১লা নভেম্বর ২০২৩খ্রি. হতে সিরাজগঞ্জের মানুষের সাথে সুন্দরবন এক্সপ্রেসের রেলওয়ের যে আত্মীক সম্পর্ক ছিলো তার যবনিকা ঘটবে।

আরো সংবাদ যে, নতুন এই রেলপথে ২রা নভেম্বর ২০২৩ খ্রি. থেকে চলবে “বেনাপোল এক্সপ্রেস”। এরপর পদ্মা সেতু দিয়ে ক্রমাগত চলবে রাজশাহীর “সিল্কসিটি” “পদ্মা এক্সপ্রেস’। বিদায় “সুন্দরবন এক্সপ্রেস” বিদায় “সিল্কসিটি” “পদ্মা এক্সপ্রেস”।
সিরাজগঞ্জের বুকে সিরাজগঞ্জ নামে সিরাজগঞ্জ রায়পুর, সিরাজগঞ্জ বাজার, সিরাজগঞ্জ বাহিরগোলা এবং সিরাজগঞ্জ ঘাট নামে চার চারটি রেলওয়ে স্টেশন ছিলো।

২৭ জুলাই ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দ হতে সিরাজগঞ্জ শহরের বুকের উপর দিয়ে প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু করে। এজন‍্য ইতিহাসবিদ এবং রেল বিশেষজ্ঞগণ বলেন-রেলের শহর সিরাজগঞ্জ, ট্রেনের শহর সিরাজগঞ্জ। এখানকার মানুষের ঘুমভাঙ্গে ট্রেনের শব্দে, কর্মজীবী মানুষ কাজে যায় ট্রেনের হুইশেল শুনে। অথচ আজকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাস থেকে “সুন্দরবন এক্সপ্রেস” সিরাজগঞ্জের নাম মুছে গেলো। হারিয়ে গেলো মহাকালের অতলে।

সিরাজগঞ্জবাসী স্পষ্টত বুঝতে পারছে যে, আমাদের রাজনৈতিক অদুরদর্শিতা ও ব‍্যর্থ রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে সিরাজগঞ্জ আজ রেল হারা, ট্রেন ছাড়া! রেল লাইনের সংস্কারের নামে সিরাজগঞ্জবাসীকে ধোকা দেয়া হয়েছে। মিথ‍্যা শোনানো হয়ে কারণে অকারণে।

৩০/৩৫ টি আন্তঃনগর ট্রেন হারিয়ে একটি সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসের কী প্রয়োজন ছিলো? এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ রেলওয়ের উন্নয়নের নামে সিরাজগঞ্জের পিঠে ইচ্ছাকৃত ভাবে মেরেছে ছুরি আর পায়ে মেরেছে কুড়াল।

আমাদের বিশ্বাস এবং বলতে দ্বিধা নেই, সিরাজগঞ্জ জেলাকে রেল যোগাযোগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র ছিলো, আছে। তাই এইসব ষড়যন্ত্রকারী, ব‍্যর্থ নেতৃত্বদানকারীদের সিরাজগঞ্জবাসী কোনো দিন ক্ষমা করবেনা।

আমরা দেখতে পাচ্ছি-রেল যোগাযোগের একটি পরিত‍্যাক্ত জেলাকে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে অর্থনৈতিক সফলতা এবং রাষ্ট্রীয় রাজস্ব আয় শূন্য প্রায়। অথচ নানা অযুহাতে শত সম্ভাবনার সিরাজগঞ্জের কপালে উল্কিরছাপ মেরে সিরাজগঞ্জবাসীকে হেয়, অসম্মান করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ থেকে চলে গেলো “সুন্দরবন এক্সপ্রেস” ট্রেন, আর রেলওয়ের ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেলো সিরাজগঞ্জ নাম।

এখনো সময় আছে, বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুতে আমার প্রদর্শিত সংযোজিত নতুন রেলপথ অনুমোদন দিলে, সিরাজগঞ্জবাসী পাবে অর্ধশত এক্সপ্রেস ট্রেন, ফিরে পাবে হারানো গৌরব। এখুনি সময়, এখুনি সুযোগ বঙ্গবন্ধু যমুনা রেলসেতুর সংযোজিত নতুন রেলপথ পরিকল্পনার পুনঃমুল‍্যায়ণ করে, সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন থেকে রেলের নিজস্ব জমি দিয়ে, মালসাপাড়া কবর স্থানের উত্তর পাশ হয়ে রামগাঁতী মৌজা বাঐতারার পূর্বদিয়ে ট্রমা হাসপাতালের সামনে দিয়ে বঙ্গবন্ধু যমুনা রেলসেতুতে যুক্ত করা যায়। তাহলে আমরা ফিরে পাবো বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু পশ্চিম স্টেশন, শহীদ মনসুর আলী স্টেশন, সিরাজগঞ্জ বাজার, সিরাজগঞ্জ রায়পুর জংশন এবং যদি হয় কালিয়া হরিপুর জংশন।

১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দীর্ঘ শতবছর সিরাজগঞ্জ শহর সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন দুরদুরান্তে থেকে যাতায়াতকারীদের আগমন প্রস্থানে গমগম করতো এর চারটি সিরাজগঞ্জ নামের স্টেশন। রেলপথ চালু না থাকাতে সিরাজগঞ্জের মানুষ হয়েছে কর্মহীন বেকার। এই বিবেচনায় এখানকার মানুষের যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা নিরুপণ করা সম্ভব নয়।

তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে রেলপথ নির্মাণ পুনঃবিবেচনা করে সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনে নতুন রেলপথ সংযোগ দেবার সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি। নয়তো ট্রেন যোগাযোগের জন‍্য সিরাজগঞ্জবাসীর, নিরবে প্রকাশ‍্যে, চিরদিন ফেলতে হবে চোখের পানি, দুঃখের সেই নোনা পানিতে ভাসবে সিরাজগঞ্জবাসী।

শেখ হান্নান
নাট‍্যকার ও লেখক
১৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ২০২৩খ্রি.
রামপুরা, ঢাকা।

error: Content is protected !!