হোম » প্রধান সংবাদ » সুনামগঞ্জের বাওন জলমহালে অভিযান : ২টি সেচ পাম্প জব্দ

সুনামগঞ্জের বাওন জলমহালে অভিযান : ২টি সেচ পাম্প জব্দ

আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জ শহরতলীর বড় বাওন বড় দাইড় জলমহালে অভিযান চালিয়েছে সদর উপজেলা প্রশাসন। ২৫ ফেব্রæয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান শাহরীয়ার উক্ত অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় উপজেলা মৎস্য অফিসার সীমারানী বিশ্বাস ও সদর মডেল থানার টহল পুলিশ দল এবং স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। অভিযান পরিচালনাকালে প্রশাসনের নজরে আসে জলমহালটিতে সেচকার্য্যে ব্যবহৃত দুটি সেচ মেশিন,মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত কতগুলো জাল,ডিজেল ভর্তি কয়েকটি ডামসহ অন্যান্য উপকরন। এসময় প্রশাসন সেচ পাম্পের ১টি হ্যান্ডেল ও ১টি ডিজেলের প্লাস্টিক ডাম জব্দ করেন। জব্দকৃত অন্যান্য উপকরনগুলো কুরবাননগর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ আব্দুল মানিক এর জিম্মায় সমজিয়ে দেয়া হয়। উল্লেখ্য গত ২২ ফেব্রæয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে দায়েরকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বড় বাওন বড় দাইড় জলমহালে সেচ পাম্প বসিয়ে জল শুকিয়ে দেদারছে মাছ নিধন করছে ইজারাদার,ভাগীদার ও তাদের সহযোগীরা। বৃহস্পতিবার সরজমিনে গিয়ে এ ঘটনা প্রত্যেক্ষ করেছেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়,সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কোরবাননগর,মোল্লাপাড়া ও পৌর এলাকার মধ্যবর্তী স্থানীয় খাইরঘাট মৌজার ১১৮নং জেএলস্থিত ১নং খতিয়ানের বিশাল এলাকাজুড়ে বাওন বিল জলমহালটি অবস্থিত। বিশেষ উন্নয়ন স্কীমের আওতায় ১৪২৫ বাংলা হইতে ১৪৩০ বাংলা সন পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয় হতে এ জলমহালটির ইজারা নেয় স্থানীয় শাহপুর হাছনবাহার মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি। সমিতির সভাপতি হচ্ছেন কুরবাননগর ইউনিয়নের বাবনেরপাড় গ্রামের মনাফ আলীর পুত্র সাদক আলী ও সাধারন সম্পাদক হচ্ছেন হাছনবাহার গ্রামের মোঃ আলাউদ্দিনের পুত্র নুরুল আমিন। ইজারালব্ধ এ জলমহালটির ইজারামূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে তারা তাদের ব্যবসায়ী ভাগীদার নিয়োগ করেন সাবেক সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার,রঙ্গারচর ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ,সুনামগঞ্জ পৌরসভার নতুন হাছননগর নিবাসী আব্দুল মতিন,সদর থানার কুরবাননগর ইউনিয়নের মাইজবাড়ি বদিপুর নিবাসী আব্দুল লতিফ ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার দক্ষিণ আরপিননগর নিবাসী সোহেল আহমদ কে। ইজারা প্রাপ্তির ৩ বছরের ব্যবধানে চলতি বছরের গত কার্তিক মাস থেকে দফায় দফায় জলমহালের ৪টি ডর ও ২টি চাতলীতে সেচপাম্প দ্বারা পানি শুকিয়ে এবং বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করত: অবাধে মৎস্য নিধন করছেন ইজারাদার ও তাদের ভাগীদাররা। ৪টি পৃথক ডরের মধ্যে ইজারাদার ও ভাগীদারদের কাছ থেকে মুছনের ডরটি হাছনবাহার গ্রামের কালা মিয়া,বারিক,নাছির,আব্দুল খালিক,দিলাফর,কাবিল,ঘাটের ডরটি আফতাবনগরের রাজিব,উত্তরের ডরটি হাছনবাহার গ্রামের শফিক আলী,ইছকন্দর,আব্দুস সালাম আতই,ছয়ফুল এবং চাতলী পূর্ব ও পশ্চিম সাইডের বড় ডরটি একই গ্রামের সামসুল,আবুল,উস্তার,নুরুল,ফরিদগং ক্রয় করে নেন। এর আগেও গত ২ বছর একইভাবে ইজারাদার ও ভাগীদারসহ এচক্রটি পর পর ৪ বার জলমহালটি সেচ পাম্প দ্বারা শুকিয়ে অবাধে মৎস্য নিধন করেছে। হাছনবাহার গ্রামবাসী বলেন,আমরা সেচপাম্প বসিয়ে জলমহাল শুকিয়ে অবাধে মৎস্য নিধন এর ব্যাপারে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা বলেছেন,সরকার ও জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে জলমহালের উন্নয়নের জন্য তারা সেচপাম্প বসিয়ে বিল শুকিয়ে মাছ ধরে যাচ্ছেন। হাছনবাহার গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর পুত্র আব্দুর রাজ্জাক,আলীনূর ও আজির উদ্দিন বলেন,আমরা ৩ ভাই জলমহালের ইজারাভোগী সমবায় সমিতির সদস্য। কিন্তু জলমহাল আমরা কিভাবে লীজ পেলাম, আমাদের ইজারাদার ও ভাগীদার কারা এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানিনা। শুধু আমরাই নই সমিতির প্রত্যেক সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো অনেক কিছু জানা যাবে। গত বছর এ ব্যাপারে পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন নাহার রুমা জলমহালে সেচপাম্প দ্বারা মৎস্য নিধনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ আদনান কে নির্দেশ দেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ আদনান,এর নির্দেশে ইউনিয়ন (ভূমি) কর্মকর্তা কাজী সামসুল হুদা সোহেল ইজারাদার ও ভাগীদারদেরকে জলমহালে সেচ পাম্প বন্ধ করার জন্য মোবাইল ফোনে নির্দেশ দেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের বিধিনিষেধ অমান্য করে ইজারাদার ও ভাগীদারগন গত বছর ৩০ লাখ টাকা মূল্যের মাছ অবৈধভাবে ফিসিং করে। এবছরও একইভাবে জলমহাল শুকিয়ে বেআইনী ও অবৈধভাবে মৎস্য নিধন অব্যাহত রেখেছে এ চক্রটি। জলমহালের পানি সেচের পর কীটনাশক ফেলে মাটির গর্তে লুকিয়ে থাকা মাছ পর্যন্ত বের করে আনে তারা। এচক্রের কীটনাশক ব্যবহারের কারণে এলাকার আবাদকৃত বোরো ধানের অপূরনীয় ক্ষতিসাধন অব্যাহত রয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে জলমহালটির মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক নুরুল আমিন সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,যারা আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে তারা স্থানীয় লোকজনকে উৎসাহিত করে পলো বাইছ দ্বারা আমাদের বিলের মাছ ধরে নিয়ে গেছে। আমরা ক্ষতির মধ্যে রয়েছি। সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোশাররফ মিয়া ও সাবেক কমিশনার সমরাজ মিয়া বলেন,বাওন বিলে পলো বাইছের মাধ্যমে কেউ মাছ ধরেছে এমন কোন খবর আমরা শুনিনি। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরীয়ার এ প্রতিবেদককে বলেন,আমি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নিয়ে সরজমিনে জলমহালটি দেখে এসেছি। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগও পেয়েছি। অভিযোগের আলোকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

error: Content is protected !!