হোম » প্রধান সংবাদ » বগুড়ার শেরপুরে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে  কৃষি উন্নয়ন ফাউন্ডেশন উধাও

বগুড়ার শেরপুরে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে  কৃষি উন্নয়ন ফাউন্ডেশন উধাও

এম.এ রাশেদ, বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বগুড়ার শেরপুরে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের সঞ্চয়ের অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে অফিস কক্ষে তালা লাগিয়ে উধাও হয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। ওই সংস্থাটির নাম কৃষি উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। সোমবার বিকেলে পৌরশহরের টাউন কলোনী এলাকায় অবস্থিত ‘ক্ষণিকালয়’ নামের বহুতল ভবনে ওই ঋণদান সংস্থার শাখা কার্যালয়ে ঋণ নিতে এসে গ্রাহকরা তালা ঝুলতে দেখেন। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুঠোফোনে ফোন দিয়েও বন্ধ পান তারা।
পরে সংস্থাটি উধাও হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এসব অসহায়-দরিদ্র গ্রাহক হতাশ হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মূহুর্তের মধ্যে খবরটি বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে সংস্থাটির অসংখ্য গ্রাহক অফিস কার্যালয়ে ছুটে আসছেন এবং ঘটনার সত্যতা যাচাই করে প্রধান ফটকের সামনে কিছু সময় অবস্থান করে চলে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে সরেজমিনে টাউন কলোনী এলাকাস্থ সংস্থার কার্যালয়ে গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, সম্প্রতি কৃষি উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে সংস্থাটি এই উপজেলায় শাখা অফিস খুলে বসেন। এরপর পৌরসভাসহ উপজেলার দশটি ইউনিয়নে একযোগে কার্যক্রম শুরু করা হয়। শরীফ উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। পাশাপাশি বেশকয়েকজন মাঠকর্মীও নিয়োগ দেন তিনি। তারা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল ঘুরে ঘুরে কম সুদে এবং সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সদস্য ভর্তি এবং সঞ্চয় আদায় শুরু করেন। বিশেষ করে লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ১০হাজার টাকা সঞ্চয় জমা রাখা বাধ্যতামূলক করেন।
এছাড়া আরও বেশি ঋণ নিলে সে অনুযায়ী সঞ্চয় জমা রাখার নির্দেশও দেন তারা। তাদের কথা বিশ্বাস করে এই এলাকার সহজ-সরল অসহায়-দরিদ্র ব্যক্তিরা সংস্থাটিতে ভর্তি হয়ে ঋণ নেওয়ার জন্য সঞ্চয় জমা করেন। কিন্তু ঋণ বিতরণের নির্ধারিত দিন ১৪ ডিসেম্বর সোমবার অফিসে তালা লাগিয়ে উধাও হয়ে যান তারা। এভাবে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন বলে জানান তারা।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের শেফালি বেগম ও অজিফা বেগম জানান, তাদের গ্রুপে ত্রিশজন সদস্য ভর্তি করেন সংস্থাটির মাঠকর্মী ইমরান হেসেন। তাদের কাছ থেকে ভর্তি ফি বাবদ ৭হজার ৭৫০টাকা আদায় করেন তিনি। এছাড়া ঋণ দেওয়ার জন্য শাহীন আলমের নিকট থেকে ৫হাজার টাকা, আয়নাল হকের নিকট থেকে ৫হাজার টাকা, ময়নাল হোসেনের নিকট থেকে ৫হাজার টাকা, জগলুল হোসেনের নিকট থেকে ৫হাজার টাকা, শফিকুল ইসলামের নিকট থেকে ৫হাজার টাকা,
আজাহার আলীর নিকট থেকে ১০হাজার টাকা, মাহবুবার রহমনের নিকট থেকে ১৫হাজার টাকা, আব্দুল মজিদের নিকট থেকে ১৫হাজার টাকা সঞ্চয় জমা নেন। একইভাবে উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের জোরগাছা, সাতাড়া, চকসাদিসহ বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে গ্রুপ ভিত্তিক সদস্য ভর্তি ও ঋণ দেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের নিকট থেকে ৫হাজার থেকে ২০হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় জমা নেওয়া হয়। আর তাদেরকে ১৪ ডিসেম্বর থেকে ঋণ দেয়া হবে বলে জানান। কিন্তু ঋণ বিতরণের নির্ধারিত দিনে অফিসে এসে তালাবদ্ধ দেখতে পান। এমনকি অফিসের কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন বলে জানান তারা।
এই ঘটনায় সংস্থাটির শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে পরিচয় দানকারি শরীফ উদ্দীনের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হয়। কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় এবং পলাতক থাকায় তার সাথে যোগাযগ করা সম্ভব হয় নি। একইভাবে মাঠকর্মী ইমরান হোসেনের মুঠোফোনে ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে ওই সংস্থাটিকে ভাড়া দেয়া ভবনের মালিক ডা. মোমিনুল হক বলেন, চলতি ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখে তার ভবনটি ভাড়া নিয়ে উঠেন। ভাড়ার চুক্তি অনুযায়ী জামানত হিসেবে যে টাকা দেয়ার কথা ছিল তাও এখনো পরিশোধ করেননি। এরইমধ্যে অফিস তালাবদ্ধ করে তারা পালিয়ে যান। তাই আগে  কবে কোথায় থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন তা তার জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী সেখ এ প্রসঙ্গে বলেন, কৃষি উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামের সংস্থাটি এই উপজেলায় কাজ শুরুর আগে তার দফতরের অনুমতি নেয়নি। এমনকি কোন তথ্যই জানায়নি। এছাড়া টাকা হাতিয়ে নিয়ে ঘটনাটি মোখিকভাবে জানার পরপরই শেরপুর থানাকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
শেরপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। অভিযোগটি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
error: Content is protected !!