হোম » প্রধান সংবাদ » অছাত্র-শিবির কর্মী নিয়ে লোহাগাড়ায় ছাত্রলীগের কমিটি

অছাত্র-শিবির কর্মী নিয়ে লোহাগাড়ায় ছাত্রলীগের কমিটি

লোহাগাড়া প্রতিনিধিঃ  কমিটি ঘোষণার পরপরই অভিযোগ উঠেছে ঘোষিত কমিটিতে ছাত্রলীগের কোথাও প্রাথমিক সদস্য পদও নাই, ইতিপূর্বে স্থানীয়ভাবে শিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় -শিবির, অছাত্র, মাদকাসক্ত, মামলার আসামি, অযোগ্যদের মূল্যায়ন, ছাত্রলীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল না এমন ব্যাক্তিদের পদায়নের অভিযোগ তুলেছেন একাধিক পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতারা।
এ কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তানজির জিহান নামে ছাত্রলীগ কর্মী ফেসবুকে লিখেন জেলার সভাপতি ,সাধারন সম্পাদক দুই জনের প্রতি আবেদন যে “উপজেলা ছাত্রলীগর “কমিটি না বলে “ভাই-ভাই “পরিষদ এই নামে সুন্দর মানাবে। দু’একজন ছাড়া বাকি সবাই অপরিচিত মুখ।
আহমেদ সাকিব আরফাত নামে আরেক ছাত্রলীগ কর্মী লিখেন, রাজনীতি নামের দৈত্যটির আগ্রাসনে রাজনীতি নামটিই এখন ক্ষত-বিক্ষত। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় সমাজ কলুষিত হচ্ছে দিন-দিন। চতুরতা ও কুটিলতার কাছে ধরা খাচ্ছে সরলতা। মূল্যবোধ হচ্ছে নির্বাসিত। নানা জাতের অপকর্ম আগ্রাসী রূপ নিচ্ছে। টাকার বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে নেতৃত্ব। দেশ,জাতি,সমাজ, জীবনব্যবস্থার সবর্ত্র এর চরম অস্থিরতা। প্রবঞ্চনা ও ধূর্ততার আগ্রাসনে লণ্ডভণ্ড।
১৭ নভেম্বর (মঙ্গলবার) দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইউনিট এর আওতাভুক্ত লোহাগাড়ার দুই কলেজসহ উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৬১ সদস্য বিশিষ্ট  কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে উপজেলায় ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ।
ঘোষিত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে আসিফুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে এরশাদুর রহমান রিয়াদকে। কমিটিতে সহ সভাপতি পদে ১৬ জন, যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে ৫ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ৫ জন এবং সহ-সম্পাদক করা হয়েছে ৫ জনকে। এছাড়াও অনান্য সম্পাদক, উপ সম্পাদক করা হয়েছে আরও ৩৩ জনকে।
অভিযোগ উঠেছে,  সাধারণ সম্পাদক করা এরশাদুর রহমান রিয়াদ শিবির পরিবারের সদস্য। তার বড় ভাই মোহাম্মদ ফরহাদ শিবিরের মিনি ক্যান্টেনমেন্ট খ্যাত নগরীর হাজী মহসীন সরকারি কলেজের শিবিরের দায়িত্বশীল ও চকবাজার ওয়ার্ডের সভাপতি। তাদের পিতা জুয়নাল আবেদিন এক সময় জামায়াতের সমর্থনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পর তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি সক্রিয় হয়ে বাগিয়ে নেন আওয়ামী লীগের পদও।
সহ-সভাপতি পদে আসা আরিফুল ইসলাম, নারী কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। নিয়মিত ছাত্র না হয়েও এ কমিটিতে তাকে করা হয়েছে সহ-সভাপতি। আরেক সহ-সভাপতি রাশেদুল ইসলামেরও ছাত্রত্ব নেই। পেশায় কাট ব্যবসায়ী রাশেদও এখন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। সহ-সভাপতি ইমরান রাতুলের পুরো পরিবার জামাতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তার বড় ভাই হেলাল দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার। সে লোহাগাড়া থানার তালিকাভুক্ত আসামি। ইমরান রাতুল এখনো দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। অল্প সময়ে এত বড় পদের ভার সে সইতে পারবে কি না সেটা প্রশ্ন তৃণমূল নেতাদের।
আরেক সহ-সভাপতি রাশেদুল ইসলাম চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রশিবিরের নেতা। শিবিরের নানা অরাজকতা ও নাশকতার সাথে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। পল্টি মেরে সে এখন ছাত্রলীগের পদধারী নেতা। অথচ তাদের হাতেই নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন চট্টগ্রাম কলেজের অনেক মেধাবী ছাত্রলীগ নেতা। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া মোহাম্মদ রাশেদ এক সময় ছাত্রদলের সক্রিয় রাজনীতি করতো।
অংশ নিতো বিএনপির নানা কর্মসূচিতেও। ছাত্রদলের তার অংশ নেওয়ার নানা ছবি ও কর্মসূচির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে। যুগ্ম সম্পাদক পদে আসা বোরহান সোবহান অছাত্র। উপ-পাঠাগার সম্পাদক পদ পাওয়া ইরফান হাসান গত বছরের ১৯ নভেম্বর কাতারে চলে যান। সেখানে গিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও সেখানে বসেই তিনি পেয়ে যান উপ-পাঠাগার সম্পাদক পদটি। ক্রীড়া সম্পাদক মনিরুল হোসাইনের পরিবার সম্পূর্ণ জামাতের।
তার বাবা মাওলানা মাহমুদুর রহমান লোহাগড়া থানা জামাতের রুকন। উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোরশেদ আলম চিহ্নিত শিবির নেতা, কিন্তু টাকার বিনিময়ে সেও এখন ছাত্রলীগ।  অভিযোগের ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম বোরহান এর সাথে যোগাযোগ করতে মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
error: Content is protected !!