হোম » প্রধান সংবাদ » সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন মানব-বন্ধন ও র‌্যালি

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন মানব-বন্ধন ও র‌্যালি

মামনুর রশিদঃ করোনা মহামারীকালীন সময়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ও শ্রমিকগন ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। মহামারী কালীন সময়ে প্রায় ২ লক্ষের বেশী শ্রমিক শুধুমাত্র বায়ারদের কার্যাদেশ/অর্ডার বাতিল ও কমানো, কার্যাদেশ স্থাগিত/সাসপেনশন আদেশ প্রদান, মূল্য হ্রাস/ডিসকাউন্ট দেয়াসহ দায়িত্বহীন ভাবে শিল্পের শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকা অনিশ্চিয়তা এবং ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেন।

বিভিন্ন দেশে যখন ডিসেম্বর‘২০১৯ থেকে করোনা মহামারী দেখা দেয় এবং ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে লক-ডাউন করা শুরু হয় তখন বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পে চল্লিশ লক্ষেরও অধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবারের বেচেঁ থাকার বিষয়টি অনিশ্চিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। যার ফলে দেখা গেছে যে অর্ডার বাতিল ও কমানো, কার্যাদেশ স্থাগিত/সাসপেনশন আদেশ প্রদান, মূল্য হ্রাস/ডিসকাউন্ট এর ফলে অনেক ফ্যাক্টরীর শ্রমিকরা চাকুরীচ্যুত হচ্ছে। এই পরিস্থিতির ফলে তারা তাদের পরিবার ও সন্তানাদি নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকির মধ্যে সময় পার করছে।

আজ সকাল ১১ টায়  জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকায় সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন সকল বায়ারদের বাংলাদেশে তৈরী পোশাক কারখানার সকল কার্যাদেশ অব্যাহত রাখার দাবীতে মানব-বন্ধন ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। মানব-বন্ধন ও র‌্যালিতে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন এর সংগ্রামী সভাপতি  নাজমা আক্তার।

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক নাহিদুল হাসান নয়ন বলেন, পোশাক শিল্পে প্রায় ২ লক্ষের বেশী শ্রমিক কর্মহীন অবস্থায় থাকাকালিন সময়ের মধ্যে আমরা দেখছি যে, বর্তমানে করোনা মহামারী বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে আবার কিছু কিছু দেশে লক-ডাউন শুরু হয়েছে। যার অযুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন বায়ার বা রিট্রেইলারগন নতুন করে অর্ডার কমিয়ে দেওয়া, সাসপেইসন করা ও ডিসকাউন্ট করার পায়তারা শুরু করেছে। যাহার ফলে আবারো শ্রমিকদের জীবন জীবিকা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি দ্বিতীয় ধাপে আবারো ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে লকডাউন করা হচ্ছে/হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্রেতারা বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পে আবারো কার্যাদেশ বাতিল করছে/হোল্ড করে রাখছে/সাসপেন্ট করে রাখছে ও মূল্য হ্রাস করে রাখছে। যেখানে আমরা এখনো প্রথম লকডাউন থেকে উঠে দাড়াতে পারিনি।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপে আবারো কার্যাদেশ বাতিল করা হলে/হোল্ড করা হলে/মূল্য হ্রাস করা হলে তৈরী পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে এবং শিল্প ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রথম লকডাউনের ধাক্কায় অনেক নারী শ্রমিক বেতন ও ক্ষতিপূরণ যথাযথ পায়নি যাদের মধ্যে অনেকেই স্বামী পরিত্যক্ত, সিঙ্গেল মাদার, সন্তান সম্ভাবনা, বিধবা রয়েছে। যাদের আয়ের উপর পরিবার সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। এই ভয়াবহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ফলে সমাজে দেখা দিচ্ছে পারিবারিক অশান্তি এবং যৌন নির্যাতন ও হয়রানি বৃদ্ধি পাচ্ছে কর্মক্ষেত্রে।

নাজমা আক্তার আরো বলেন,  অনেক ক্ষেত্রে দাবি আদায়ে শ্রমিকদের রাজপথে আন্দোলন ও সংগ্রাম করতে হয়। উল্লেখ্য যে, অনেক ইউনিয়ন করা ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ইউনিয়ন সংগঠিত হওয়ার শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি নির্যাতন এবং চাকুরীচ্যুত করা হচ্ছে। আমরা শ্রমিকদের নিশ্চিত করার সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য মালিক, বায়ার, রিট্রেইলার এবং সরকারকে আহবান জানান।

মানব-বন্ধন ও র‌্যালিতে বক্তারা নিম্নে উল্লেখিত দাবী তুলে ধরেন:
১) বাংলাদেশের কারখানায় অর্ডার প্রদানকারী সকল বায়ার এবং রিট্রেইলারদের সকল প্রকার অর্ডার অব্যাহত রাখতে হবে, কোন স্থাগিত আদেশ করতে পারবে না, কোন প্রকার ডিস-কাউন্ট প্রাইজ করতে পারবে না।
২) বর্তমানে হোল্ডকৃত পণ্যের অর্ডারের কমপক্ষে ৫০% মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
৩) সকল চাকুরীচ্যুত শ্রমিকদের কর্মহীন থাকাকালিন সময়ের মজুরী ও সুবিধা মালিক, বায়ার এবং সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে ।
৪) করোনাকালীন সময়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা সকল শ্রমিকদের মালিক ও বায়ার কর্তৃক ঝুঁকি ভাতা প্রদান করতে হবে।
৫) সকল শিল্পঘন এলাকায় শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্য করোনা পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত শ্রমিকদের যথাযথ চিকিৎসা, ছুটি এবং আক্রান্ত মৃত শ্রমিকদের জন্য যুগোপযোগী ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬) কোন শ্রমিক কে করোনাকালিন সময়ে মহামারীর দোহাই দিয়ে ছাটাই ও চাকুরীচ্যুত করা যাবে না।
৭) শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা, বেকার ভাতা এবং ইস্যুরেন্স সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৮) আইন ভঙ্গকারী বায়ার এবং রিট্রেইলারদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
৯) অবাধ ও স্বাধীনভাবে ইউনিয়ন করার অধিকারসহ বাঁচার মতো মজুরি নিশ্চিত প্রদান করতে হবে।

সমাবেশে সংহতি বক্তব্য রাখেন, মমতাজ বেগম, কার্যকরী সভাপতি, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, খাদিজা আক্তার,  সৈকত চৌধুরী, ইয়াহিয়া খাঁন, শরিফোন নেছা, তারেক আহম্মেদ, নুরুল ইসলাম, মুনিরা আহম্মেদ উর্মি, মনিরুল ইসলাম, রিনি আক্তার, একরামূল হক, আলমগীর হোসেন, ফরিদ মিয়া, আশিদ মিয়া, শেখ রুবেল, নাজমা বেগম, উর্মি আক্তার, হালিমা বেগম, মদিনা বেগম, আঃ হালিমসহ আরো অনেকে।

error: Content is protected !!