হোম » প্রধান সংবাদ » সংস্কারের অভাবে হুমকির মুখে কাশিয়াবাড়ি রেগুলেটর , যে কোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা

সংস্কারের অভাবে হুমকির মুখে কাশিয়াবাড়ি রেগুলেটর , যে কোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা

মোঃ রাহুল পারভেজ, রাণীনগর উপজেলা প্রতিনিধি : নওগাঁর আত্রাইয়ের কাশিয়াবাড়ি রেগুলেটরটি দীর্ঘদিন সংস্কার কিংবা মেরামত না করায় হুমকির মুখে পড়েছে। যে কোন সময় এই গুরুত্বপূর্ন রেগুলেটরটি ভেঙ্গে যেতে পারে। যার ফলে রাণীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের সকল গ্রাম ও তার আশেপাশের অঞ্চল এবং আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া, সাহাগোলা ও বিশিয়া ইউনিয়নের সকল গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সাথে বিচ্ছিন্ন যাবে আত্রাই ও পতিসর তথা আত্রাই ও বগুড়ার মধ্যে একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা।

 

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রক্তদহ-লোহাচুড়া প্রকল্পটি ১৯৭২-৭৩ সালে শুরু হয়ে ১৯৭৮-৭৯ তে শেষ হয়। সেই প্রকল্পের আওতায় ৭০দশকে এই রেগুলেটরটি আত্রাই নদীর শাখা কাশিয়াবাড়ি খালের উপর নির্মাণ করা হয়। বিশেষ করে রাণীনগর উপজেলা ও তার আশেপাশের অঞ্চল এবং আত্রাই উপজেলার কিছু অংশকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যেই এটি নির্মাণ করা হয় কিন্তু নির্মাণের পর থেকে কোন সংস্কার কিংবা মেরামত না করায় এটি বর্তমানে দুই উপজেলার মানুষের ভয়ের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

 

বর্ষা মৌসুমে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই পানির চাপে কোন যে এটি ভেঙ্গে যায় এই আশঙ্কায় দিন কাটাতে হয় এই অঞ্চলের লাখো মানুষকে। চলমান বন্যায় পানি ওভার টপিং ও উইং ওয়ালের পাশে ধস নামা শুরু করলে পানি উনয়ন বোর্ড বালি বস্তাসহ কিছু কাজ করে রেগুলেটরটিকে ভেঙ্গে যাওয়ার হাত থেকে কোন মতে টিকে রেখেছে। এটি যদি শুকনো মৌসুমে নতুন করে আধুনিক মান সম্মত ভাবে এবং আরো বড় আকারে নির্মাণ করা না হয় তাহলে আগামী বর্ষা মৌসুমে আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

 

রেগুলেটরটির অধিকাংশ গেইটের দরজা মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। ১০টি গেটের মধ্যে ২/৩টি গেট সচল থাকলেও অন্য সবগুলো অকেজো হয়ে রয়েছে। যার কারণ এটির পানির অধিক চাপ সহ্য করার মতো কোন অবস্থাই অবশিষ্ট নেই। চলমান চতুর্থ দফার বন্যায় রেগুলেটরের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালু ভর্তি বস্তা দিয়ে প্রবেশ মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রায় ১সপ্তাহ আত্রাই-পতিসর তথা আত্রাই-বগুড়ার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিলো।

 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল করিম, হানিফ মন্ডলসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন যখন পানির চাপে ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয় তখন বস্তা দিয়ে ক্ষণিকের জন্য তা রক্ষার চেষ্টা করা হয়। পরে আর কোন খোঁজ থাকে না। দেশে সবকিছু হলেও এই গুরুত্বপূর্ন রেগুলেটরটি নতুন করে নির্মানের জন্য সরকারের অর্থ বরাদ্দ হয় না। যেদিন এটি ভেঙ্গে বন্যার পানিতে লাখ লাখ মানুষ ভেসে যাবে সেদিন সরকারের টনক নড়বে। তার আগে কারো সুদৃষ্টি এটির উপর পড়বে না। ভোঁপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানবক্স সরদার বলেন, রাণীনগর ও আত্রাই এই দুই উপজেলার মানুষ, ফসলের মাঠসহ অন্যান্য জান-মাল রক্ষার্থে দুই উপজেলার মাঝখানে এই রেগুলেটরটি নির্মাণ করা হয়।

 

কিন্তু প্রায় ৫০বছর পার হলেও কোন সংস্কার কিংবা মেরামতের ছোঁয়া স্পর্শ করেনি এটিতে যার কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় চলে এসেছে। তাই শুকনো মৌসুম এলে দ্রæত এটিকে ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এর জন্য আমি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানালেও আজ পর্যন্ত কোন লাভ হয়নি। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন চলতি বন্যা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে রেগুলেটরটি ওভার টপিং হয়ে উইং ওয়ালের পাশে ধস নামা শুরু করার আগেই আমরা সিনথেটিক ব্যাগ ডাম্পিং করে রেগুলেটরটিকে রক্ষা করেছি।

 

আর ইতোমধ্যে বগুড়া যান্ত্রিক বিভাগ থেকে রেগুলেটরটি পরিদর্শন করে গেছে। রেগুলেটরটির ক্ষতিগ্রস্থ অংশগুলো মেরামত করার জন্য আমরা বাজেট চেয়েছি, বাজেট পেলে শুষ্ক মৌসুমে আমরা কাজ করবো। দুই উপজেলার লাখ লাখ মানুষ ও ফসলের মাঠকে রক্ষার্থে এটি ভেঙ্গে দ্রæত নতুন করে নির্মাণ করার কোন বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন আমরা রক্তদহ-লোহাচুরা পুনর্বাসন প্রকল্প নামে ১৬৭কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুত করেছি যার কারিগরি কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আবার পুনর্গঠিত করা হচ্ছে। উক্ত ডিপিপিটি পাশ হলেই আমরা কাশিয়াবাড়িতে নতুন করে রেগুলেটর নির্মাণ করবো।

error: Content is protected !!