হোম » প্রধান সংবাদ » রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঝুঁকি নিয়েই ক্যাম্পাসে ফিরছেন শিক্ষার্থীরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঝুঁকি নিয়েই ক্যাম্পাসে ফিরছেন শিক্ষার্থীরা

আবু সাঈদ সজল, রাবি: করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ ই মার্চ থেকে ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস প্রাথমিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে করোনা প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে গত ১২ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মাসের পর মাস চলছে করোনার আক্রমণ কোন ভাবেই কমছে না বরং পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

বন্ধকালীন দীর্ঘ সময়ে মাঝে মধ্যে ক্যাম্পাস খোলার আভাস পাওয়া গেলেও মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে তা আর হয়ে ওঠেনি। বরং দফায় দফায় ছুটি বেড়ে সর্বশেষ ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঠেকেছে। এদিকে ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে অবস্থান করে বাড়ছে হতাশা।  অর্থিক সংকট ও টিউশনি চলে যাওয়ার শঙ্কা এবং টানা পাঁচ মাস বাসায় থেকে বিরক্তিবোধ কাজ করায় একঘেয়েমি কাটাতে অনেক শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়েই চলে এসেছেন রাজশাহী। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকায় শহর এবং ক্যাম্পাসের আশপাশের মেসে অবস্থান করছেন তারা।

এমনই একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রিপন মাহমুদ। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কবে ক্যাম্পাস খুলবে, স্বাভাবিক হবে তা বলা মুশকিল। এই কঠিন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন বাড়িতে অবস্থান করায় স্বাভাবিকভাবে পড়াশুনায় একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে। এই গ্যাপ থেকে কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় সেই চিন্তাতেই রাজশাহী ফেরা।  হোম টিউশনি নতুনভাবে শুরু করাও ক্যাম্পাসে ফেরার অন্যতম কারন।তাছাড়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন সময়ে আর্থিক সঙ্কট আর টিউশনি চলে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকটাই বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাস খোলার আগেই রাজশাহীতে অবস্থান করছেন  বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, কোভিড-১৯ এর কারণে পরিবারের অনেক সদস্য বেকার, তাই  উপার্জনও নেই। আর্থিক টানাপোড়নের কারণে নিজের ব্যক্তিগত খরচ চালানোও অসম্ভব হয়ে পড়েছে তাদের। একারনে পরিবারে বোঝা হয়ে না থেকে করোনা দুর্যোগেই টিউশনি করতে হচ্ছে তাদের। অনেক শিক্ষার্থীই একই কারণে বিভিন্ন জেলা থেকে ক্যাম্পাস পাশ্ববর্তী মেসগুলোতে উঠছেন ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় সাহস্রাধিক শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন জেলা হতে ক্যাম্পাস পাশ্ববর্তী মেস অথবা রাজশাহীতে ফিরেছেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালান। অনেকে আবার টিউশনি করিয়ে নিজ খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারকেও আর্থিক সহায়তা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের  অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জাবেদুল ইসলাম মনি।টিউশনি কিংবা কোনো কাজ না থাকলেও তিনি ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী মেসে  উঠেছেন। দীর্ঘ সময় বাড়িতে থাকার কারণে বিরক্তিবোধ পাশাপাশি মানসিক অবসাদ তৈরী হয়েছিলো তাঁর। তাই তিনি  ফিরেছেন বলে জানান। তাছাড়া, স্নাতক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া তার প্রধান লক্ষ্য। বাসায় থেকে পড়াশুনা খুব একটা হচ্ছিল না। তাই শহরের দিকে এসেছি যাতে পড়াশোনা করা যায়।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুল ফাত্তাহ রাফিও একই সুরে বলেন, দীর্ঘ পাঁচ মাস বাড়িতে থাকার কারণে একঘেঁয়ে ভাব চলে এসেছে। একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছাড়া বাংলাদেশের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান, অফিস, অাদালত, কোন কিছুই বন্ধ নেই অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। জীবনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরতে হলো।

রাবির ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)’র শিক্ষার্থী আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি নিজের ইচ্ছায় ক্যাম্পাসে এসেছি। বিশেষ করে পড়াশোনা ধরে রাখার জন্য। আর অনেক শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরছে আর্থিক সমস্যার কারণে বাসা বা মেস ছেড়ে দিতে। অনেকের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট রয়েছে যেগুলো উইপোকা খেয়ে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো নিতে। যাদের পড়াশোনার শেষের দিকে তারা জব প্রিপারেশন, বিসিএস প্রিপারেশনের জন্য রাজশাহীতে অবস্থান করছে। একই কারনে রাজশাহী ফিরেছেন বলে জানালেন আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসাইন মুন্না।

করোনা দুর্যোগে চরম বিপাকে পড়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের জন্য ইন্টারনেট ক্রয়ের সামর্থ্য নেই বলেও জানায়। লকডাউনে পরিবারের উপার্জন কমে যাওয়ায় পরিবার থেকে সাপোর্টও পাচ্ছেন না তাঁরা। অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে বিঘ্ন ঘটায় রাজশাহী ফিরছেন বলে জানান তারা।

এসব শিক্ষার্থীরা বলেন, বাড়ি প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামে হওয়ায় ইন্টারনেটের অবস্থা নড়বড়ে। গ্রাম থেকে দূরের বাজারে গিয়ে ক্লাস করতে হয়। ইন্টারনেট কানেকশন কখনো টুজি আবার কখনো থ্রিজি হয়। আবার কখনো কানেকশনই চলে যায়। গ্রাম হতে  বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস টেস্ট এসবে অংশ নিতে না পারায় রাজশাহী চলে এসেছেন বলে জানান তাঁরা।

error: Content is protected !!