হোম » প্রধান সংবাদ » সুনামগঞ্জে ক্লোজ হলেন এএসআই আবুল হাসনাত : মানবন্ধনকারীরা এখনও পাননি তাদের টাকা

সুনামগঞ্জে ক্লোজ হলেন এএসআই আবুল হাসনাত : মানবন্ধনকারীরা এখনও পাননি তাদের টাকা

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা : পুলিশের দালালী করেও লাভ হয়নি সুনামগঞ্জের এক টেলিভিশন সাংবাদিকের। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার অপব্যবহার ও অন্ত:স্বত্তা নারীর শ্লীলতাহানী ঘটানোসহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বিপিএম পুলিশের এএসআই মোঃ আবুল হাসনাত কে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা থেকে ক্লোজড করেছেন।

জানা যায়,দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের ঠাকুরভোগ গ্রামের অসহায়, হতদরিদ্র মোহনলাল এবং তার পরিবার বসবাস করে। বিগত এক মাস ধরে অসহায় মোহনলাল রবিদাসের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে আসছিলো পুলিশের এএসআই আবুল হাসনাত। করনো ভাইরাস সংক্রমণের কারণে কোনমতেই টাকার জোগাড় করতে পারেননি অসহায় মোহনলাল রবিদাস। এরই মধ্যে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বাড়ীঘর তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু এএসআই আবুল হাসনাতের দালালেরা প্রতিনিয়ত চাপ সৃষ্টি করে আসছিলো মোহনলাল রবিদাসকে।

এমতাবস্থায় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় এএসআই আবুল হাসনাত মোহনলালের বাড়ী যান এবং স্টিলের চিপ দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। এ সময়ে ৬ মাসের অন্তঃসত্তা মহিলা এগিয়ে এলে তাকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেন এবং উপর্যুপরি লাথি মারতে থাকেন। এসময়ে এএসআই হাসনাত মহিলাটির পড়নের কাপড় আর চুলের মুঠি ধরে টেনে শ্লীলতাহানি করেন। তারপর এএসআই আবুল হাসনাত ঘরে থাকা নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং এন্ড্রোয়েড ফোনটি নিয়ে যান। এবং বাড়িতে থাকা ড্রাম খালি করে চাল নিয়ে যাওয়া যান এবং খালি ড্রামে বন্যার পানি ও তাদের সাথে থাকা কিছু তরল পদার্থ মিশিয়ে বে-আইনিভাবে ২ জনকে তুলে নিয়ে যায় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয়রা গর্ভের সন্তানের প্রাণনাশের আশংকায় মহিলাটিকে দ্রত হাসপাতালে নিয়ে যান।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার এএসআই আবুল হাসনাত চৌধুরীর বিরুদ্ধে এই চাঁদাবাজি, নির্যাতন এবং শ্লীলতাহানির বিষয়ে গত ১৮ জুলাই (শনিবার) সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের ঠাকুরভোগ গ্রামের মোহনলাল রবিদাসের স্ত্রী আমরতি রবিদাস। জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে আহত মহিলার করুন অবস্থা থেকে এএসআই এর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রস্তুত করে দেন ঐ সাংবাদিক। সাংবাদিকের দেখানো পথ ধরেই জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন আমরতি দাস।

পরে ঐ সাংবাদিক মহিলার ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে অভিযুক্ত দারোগার কাছ থেকে হাতিয়ে নেন কিছু টাকা। একপর্যায়ে দায়িত্ব নেন তিনি এলাকায় মানববন্ধন করে দারোগার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগকারীদেরকে তার এলাকায় একঘরে রাখবেন। এবং এসপি সাহেবকে বলে দারোগার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। যেই কথা সেই কাজ শহরে ডিজিটাল ব্যানার প্রস্তুত করে ইচ্ছেমতো লিখিয়ে কিছু লোক দিয়ে বৃহস্পতিবার পুলিশের পক্ষে মানববন্ধন করানোর পাশাপাশি কয়েকটি অনলাইন ওয়েবপোর্টালে সংবাদ পরিবেশন করালেন তিনি।

তার সংবাদে উল্লেখ করা হয়, সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার এ এস আই আবুল হাসনাতের বিরুদ্ধে মাদক কারবারীর স্ত্রী কর্তৃক মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃৃহস্পতিবার দুপুরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে উপজেলার পশ্চিম বীরগাওঁ ইউনিয়নের টাইলাবাজারে এ মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। এতে সামজিক দূরত্ব বজায় রেখে বন্যার মাঝেও এলাকার শতাধিক লোকজন অংশ নেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন,স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ আবদাল মিয়া,সাবেক পশ্চিম বীরগাও ইউপি সদস্য মোঃ তোফায়েল মিয়া,মোঃ গোলজার মিয়া,মৌলভী আবুল কালাম,রুবেল মিয়া,সুধারঞ্জন দাস,হারুণ মিয়া,আলী আহমদ,জয়নুদ্দিন মিয়া, আবুল মিয়া ও সেবুল মিয়া প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, এই ঠাকুরভোগ গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে দেশীয় তৈরীর চোলাই মদ বানিয়ে বিক্রি করে মুনাফা নিলেও ধবংস হতে চলছিল এলাকার যুবসমাজ। কিন্তু দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার এ এস আই মোঃ আবুল হাসনাত যোগদানের পর থেকে ঐ সমস্ত মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যাওয়ায় গ্রামের গুটি কয়েকজনের স্বার্থে আঘাত লাগায় মূলত তারা মাদক ব্যবসায়ীর স্বজন ঐ নারীকে দিয়ে পুলিশ সুপার বরাবরে একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষনা করলেও এই মাদকের ছোবল থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করার অংশ হিসেবে এই সাহসী পুলিশ অফিসার এ এস আই মোঃ আবুল হাসনাত ঠাকুরভোগ গ্রামে মাদকের বিরুদ্ধে এ অভিযান পরিচালনা করেন এবং এতে প্রচুর পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধারসহ দুইজনকে আটক করেন। তার এই সাহসী উদ্যোগে এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসলেও কপাল পুড়ে মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের আশ্রয়দাতাদের। ফলেই এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করা হয়।

অবিলম্বে ঐ মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহারসহ ঐ সমস্ত সমাজ ধবংকারী মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেæফতার করে তাদের আস্তানা চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ সুপারের নিকট জোর দাবী জানান।
উল্লেখ্য গত ১২ জুলাই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার এস আই আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে এ এস আই আবুল হাসনাতসহ পুলিশ সদস্যরা ঠাকুরভোগ গ্রামের মাদক কারবারী মনাই রবি দাস, মোহন লাল রবিদাস,কালী চরণ রবিদাস,রং লাল রবিদাস,সুজন রবিদাসের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে চোলাই মদ তৈরীর উপকরণ ওয়াস এক হাজার লিটার এবং দেশীয় তৈরী ২০০ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করেন ।

এ সময় দুই মাদক ব্যবসায়ী মোহন লাল রবিদাস ও মদ ক্রয়কারী সুজন রবিদাসকে আটক করা হয় এবং গত ১৩ জুলাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে থানার এস আই মোঃ আলাউদ্দিন বাদি হয়ে আটককৃত দুই মাদক ব্যবসায়ী ও পালতক আসামীদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় স্থানীয় কিছু মদদদাতাদের প্ররোচনায় মাদক ব্যবসা সক্রিয় রাখার অংশ হিসেবে মাদক ব্যবসায়ী মোহন লাল রবিদাসের স্ত্রী আমরতি রবিদাসকে দিয়ে থানার এ এস আই মোঃ আবুল হাসনাতের বিরুদ্ধে পুলিশ নাকি নিজেই মদ তৈরী করে তাদেরকে ফাসাঁনোর চেষ্টা সহ অভিযোগকারী স্বজন নারীর শ্লীলতাহানি ও গর্ভাবস্থায় নাকি শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বরাবরে গত ১৮ জুলাই একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

এদিকে জুলুমবাজ এএসআই হাসনাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করায় সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বিপিএম কে অভিনন্দন জানিয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ রবিদাস সংস্থার সভাপতি শান্তরবি দাস। তিনি এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করে বিবৃতিও দিয়েছিলেন।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসি কাজী মোক্তাদির হোসেন স্বীকার করে বলেন,আমরতি দাসের দায়েরকৃত অভিযোগের ভিত্তিতেই এএসআই হাসনাতকে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে হয়তো আরো ব্যবস্থা গ্রহন করা হতে পারে।

ঠাকুরভোক এলাকাবাসী বলেন,দারোগার হাতে মহিলা লাঞ্চিত হলেন। এ ঘটনায় দারোগা ক্লোজড হলেন। কিন্তু আমরানো কিছুই পেলামনা। আমরা মানববন্ধন করেছিলাম একজন সাংবাদিকের কথায় তিনি আমাদেরকে বলেছিলেন প্রত্যেককে ৫শত করে টাকা দেবেন মানবন্ধনে অংশ নিলে। আমরা তার কথামতো দারোগার পক্ষে ব্যানার হাতে নিয়ে মানববন্ধন করলাম। কিন্তু আমরা আমাদের টাকা এখনও পাইনি।

Loading

error: Content is protected !!