এম.এ রাশেদ(বগুড়া) প্রতিনিধিঃ অবশেষে নির্ধারিত সময়ের ৫ মাস আগেই বগুড়ার শিবগঞ্জের পৌর
এলাকার স্বপ্নের অর্জুনপুর সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা সংযোগ সড়ক নির্মাণের। সংযোগ সড়ক যোগাযোগ নির্মাণ সম্পন্ন হলেই আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ভারি যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হবে। তবে একমাসের মধ্যে ছোট ছোট যানবাহন এবং মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারবে।
শিবগঞ্জ পৌরসভার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৯- ২০২০ অর্থ বছরে করতোয়া নদীর অর্জুনপুর ঘাটে ৭২ মিটার সেতুটি নির্মাণে ৬ কোটি ৮৩ লাখ ১ হাজার ৬৭১ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। গেল ২ জানুয়ারি পরিকল্পনা মন্ত্রী এএম মান্নান সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেতুটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইসলাম এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স সাবরিনা ইন্টার ন্যাশনাল(জেভি)।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকার শফিউল ইসলাম শফি জানান, অর্জুনপুর সেতুর নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। গত সপ্তাহে ৭২ মিটার মুল সেতুর ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে। আগামী মাস থেকে মানুষজন পাঁয়ে হেঁটে এবং ক্ষুদ্র যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে সেতুর দুপাশে রাস্তা না হওয়ার কারণে ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। তবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সম্পুর্ণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার আশপাশের প্রায় ২০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের দাবি ছিল অর্জুনপুর ঘাটের সেতুটি নির্মাণের জন্য। কারণ শিবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে পৌর এলাকার অজুর্নপুর মহল্লা। সেই মহল্লার বাসিন্দাদের বিভিন্নকাজে উপজেলা সদরে আসতে ঘুরতে হতো চার কিলোমিটার সড়ক। এজন্য তারা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই রাঙামাটিয়া ও অজুর্নপুরকে বিভক্ত করা করতোয়া নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সেই সময় থেকে অনেক জনপ্রতিনিধিই সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
কিন্তু কেউ সে প্রতিশ্রুতি পুরণ করেননি। গত ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তৌহিদুর রহমান মানিক ওই এলাকায় গণসংযোগে গিয়ে অর্জুনপুর সেতুটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। মেয়র নির্বাচিত হবার পর থেকেই তিনি চেষ্টা করেন সেতু নির্মাণের। অবশেষে সফল হন তিনি। অর্জুনপুর সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় অর্জুনপুর, ছয়ঘড়িয়া পাড়া, গরীবপুর, আকন্দপাড়া, ধোন্দাকোলা,সন্ন্যাসী,ধোন্দাকোলা, দেবীপুর, খালিসপুর, অনন্তপুর, উথলী, রথবাড়ি, নারায়ণপুর, ছোট নারায়ণপুর, বাগমারাসহ ২০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবেন।
এ সেতু নির্মানের ফলে শিবগঞ্জ থেকে অতি সহজেই যাওয়া যাবে মোকামতলা হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরের আট জেলায়। শিবগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী রাশেদ হাসিম বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সেতুটি নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু পৌর মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিকের একান্ত প্রচেষ্টা ও তদারকি কারণে এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আন্তরিকতায় করোনাকালেও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই সেতুটির ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আশা করা যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সেতুটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে। অর্জুনপুর সেতু লাগোয়া মহল্লা রাঙামাটিয়ার বাসিন্দা প্রবীন ব্যক্তি সিরাজুল ইসলাম বলেন, জনগুরুত্বপূর্ন এই সেতুটি নির্মাণের আমরা অনেকেই কাছেই ধর্না দিয়েছিলাম। অনেকে কথাও দিয়েছিলেন। কিন্তু করেননি কেউই। কিন্তু আমাদের ঘরের ছেলে এই প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হয়েই বানালেন মস্ত বড় সেতুটি। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।
শিবগঞ্জ উন্নয়ন কমিটির (শিউক) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক মাফুজ বলেন, ২০০২ সালে গঠিত হয় পৌরসভা। তখন টানা ৬বছর সরকারে ছিল বিএনপি। প্রশাসক ও মেয়রও ছিলেন বিএনপির লোক। কিন্তু তারপরও শুধুমাত্র আন্তরিকতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে অজুর্নপুর সেতুটি নির্মাণ করা হয়নি। অজুর্নপুরের পরিবর্তে স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সেতু নির্মাণ করা হয় শিবগঞ্জ হাটের পূর্ব পাশে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রথম শিবগঞ্জ পৌরসভায় নৌকা মার্কার প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় জননেত্রী শেখ হাসিনা মানুষের কষ্ট জানতে পেরে সেতু নির্মাণে সাড়ে ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। সেই সেতু এখন দৃশ্যমান। আর কদিন পরেই তার ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হবে। মানুষ এপার-ওপার যেতে পারবেন। শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক বলেন, অর্জুনপুর ঘাটে সেতু নির্মাণে এলাকার মানুষের দাবি ছিল দীর্ঘ দিনের।
জনবান্ধব নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই দাবি পুরণ করেছেন। কারণ তৃতীয় শ্রেণির একটি পৌরসভায় একটি সেতু নির্মাণে সাড়ে ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। আর এই কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দেশের উন্নয়নে তাঁর মতো নেত্রীর বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন
লালমনিরহাটে কোটা আন্দোলনের রোষানলে ৬ সাংবাদিক, বাড়ি ছাড়া ৩ সাংবাদিক
জয়পুরহাটে বাজার স্থিতিশীল রাখতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল